ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘টিকে থাকতে চাই মানসম্মত শিক্ষা’

জুয়েল মিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ৯ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘টিকে থাকতে চাই মানসম্মত শিক্ষা’

প্রতিটি মহামারি মানব সভ্যতাকে নতুন করে শেখার সুযোগ করে দিয়েছে। সুযোগ করে দিয়েছে নতুন কিছু করারও। তাই করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে কীভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে, সে সম্পর্কে এখনই আমাদের চিন্তা করতে হবে।

করোনা পরবর্তী পৃথিবীর অনেক নিয়ম কানুনের পরিবর্তন আসবে। বিশ্ব নেতৃত্বেরও পরিবর্তন আসতে পারে। নতুন নতুন পরাশক্তির আবির্ভাব হতে পারে। ক্ষমতা হারাতে পারে অনেক পরাশক্তিধর দেশ। যারা যত তাড়াতাড়ি মহামারিকে সফলভাবে মোকাবিলা করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে, তারাই পরবর্তী পৃথিবীতে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। আর সেদিকে খেয়াল রেখেই পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পৃথিবীর এই আমূল পরিবর্তনের সময় আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুনভাবে কিছু করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্যে আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর বিকল্প নেই। কারণ আমাদের দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী হলো, এ দেশের সবেচেয়ে বড় সম্পদ। 

ইউনেস্কোর তথ্যানুসারে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ মিলিয়ন।  এই বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে মানব সম্পদে রূপান্তর করার জন্য মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নেই। আর সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বর্তমানে যা রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আমাদের দেশে শিক্ষা খাতে জিডিপির অবদান অনেক অনুন্নত দেশ থেকেও কম।  শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে, দীর্ঘ মেয়াদি ফলাফল পাওয়া যাবে। তাই দেশের বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে মানব সম্পদে রূপান্তর করার জন্য শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে।

মফস্বল তথা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। কেননা, প্রয়োজনীয় সুযোগের অভাবে মফস্বলের অনেক ট্যালেন্ট অকালেই ঝড়ে যায়। এসব মেধাবীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তারা দেশের প্রয়োজনে নিজের মেধাকে কাজে লাগাতে পারে।

করোনা মহামারির কারণে দেশের একটি বিরাট অংশ মানুষ বেকার হয়ে যাবে। ফলে অনেকেই তাদের ছেলেমেয়েদের নামিদামি প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর সক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। আর সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একটি বিরাট অংশ সরকারি বিদ্যালয়মুখী হবে। তাই আমাদের সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে আনতে হবে।  শিক্ষার্থীদের প্রণোদনা দিয়ে বিদ্যালয়ে আনার পাশাপাশি শিক্ষার মানের দিকে নজর দিতে হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

অদূর ভবিষ্যতের ই-বিসনেস, ই-লার্নিং, টেলি মেডিসিনের ভার্চুয়াল পৃথিবীটা কেমন হবে, তার ধারণা এই করোনা মহামারির সময়েই আমরা পেয়ে যাচ্ছি। ভার্চুয়াল পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য যে কারিগরি জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রয়োজন হবে, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকে না। ভার্চুয়াল পৃথিবীতে কন্টাক্টলেস সেবা আদানপ্রদানের জন্যে যে অবকাঠামো দরকার, আমাদের তা নেই। আমাদের প্রথমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। সবার জন্য উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

সব শিক্ষার্থীর জন্য কম্পিউটারের ব্যবহারিক জ্ঞান নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করতে হবে। কেননা, করোনার বিশ্বে অতিমাত্রায় রোবটের ব্যবহার বেড়েছে, অদূর ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রের পরিধি সম্পর্কে আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের অনেক কর্মক্ষেত্রই রোবট দখল করে নেবে। ফলে বাংলাদেশের মতো শ্রমিক নির্ভর দেশকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

দেশে-বিদেশে আমাদের অনেক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বে। সুতরাং আগামীর পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বাস করতে হলে, আমাদের এখনই নিজদের আগামীর জন্য গড়ে তুলতে হবে। গতানুগতিক জিপিএ-৫ এর শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের প্রতি নজর দিতে হবে। আমাদের মানসম্মত শিক্ষা এবং কারিগরি শিক্ষার উপর গুরত্ব দিতে হবে।

প্রয়োজনীয় কর্মক্ষেত্র কিংবা প্রণোদনার অভাবে প্রতিবিছরই অনেক মেধা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এসব মেধাবীদের দেশের কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশের এসব সম্পদকে কাজে লাগানোর জন্য দেশের মধ্যেই বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে।

করোনাকালীন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের নৈতিক অবক্ষয়ের মতো ঘটনাও দেখতে হয়েছে। তাই দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের নৈতিক শিক্ষার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করতে হবে। নৈতিক শিক্ষাকে কেবল একটি বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনে কীভাবে প্রয়োগ করছে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষার সবগুলো চ্যানেল একসাথে ব্যবহার করতে হবে। পরিবার, সমাজ, প্রকৃতি ইত্যাদি সব চ্যানেল একসাথে কাজে লাগাতে পারলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা জাগ্রত হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ (৪র্থ বর্ষ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ঢাবি/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়