ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বৃষ্টিভেজা সোনালি শৈশব

ওবাইদুল্লাহ আহমাদ হুসাইন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ৯ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বৃষ্টিভেজা সোনালি শৈশব

ছবি: শফিউল ইসলাম সৈকত

শৈশব মানে উচ্ছ্বাস। শৈশব মানে পাগলামি। শৈশব মানে অজানায় হারিয়ে যাওয়া। এই ছোট্ট একটি শব্দে কত কিছু মিশে আছে, তা গুণে শেষ করা যাবে না। কোনো অঙ্কেও ধরবে না।

ভেলা বিহীন নদীর পানিতে সাতার কাটা, সুপারি পাতার গাড়িতে চড়া, কাগজে বানানো বলে ক্রিকেট খেলা, বৃষ্টিতে ভিজে কাদামাটিতে লুটোপুটি করা, ছেলে হয়ে মেয়ে, আর মেয়ে হয়ে ছেলে সাজা। আরও কত কিছু এই শৈশবকে স্পর্শ করে ধন্য করেছে, তা কলমের কালিতে অঙ্কন করাও কঠিন।

শৈশবের দুরন্তপনা মনে পড়লে, মনের অজান্তেই হাসি পায়। ভাবতেও অবাক লাগে, শরীর ও মনে কত-শত উদ্যোম মিশে ছিল তখন! ক্লান্তি যেন ছুঁতেই পারতো না। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে, পাড়ার ছেলে-মেয়েরা মেঘের দেশে কত যে ছুটে গেছি; তার হিসেব কেউ রাখেনি।

এখনো বৃষ্টি হলে মনে পড়ে বৃষ্টিভেজা সেই সোনালী শৈশবের কথা। গাঁয়ের মেঠোপথে টায়ার চালিয়ে ছুটে চলার কথা। বৈশাখ মাসে সোনালী ধানে সবকিছু ভরে যেত সেই সময়। কৃষকের মুখে হাসি ফুটতো। ধানকাটা শেষ হলে, কৃষকের ক্ষেত হয়ে যেত আমাদের স্টেডিয়াম। সেখানে কত কিছু খেলতাম! কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, বৌচি, কানামাছি, ডাংগুলি, গোশত চুরিসহ আরও কত কী! বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস আসতেই টাপুরটুপুর বৃষ্টি। মাঠঘাট বৃষ্টির পানিতে টইটম্বুর হয়ে যেত। হাটু পানিতে ফুটবল নিয়ে মাঠে নেমে যেতাম আমরা। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার নামে কত চিল্লাচিল্লি করতাম। নিজেকে তখন রোনালদো মনে হতো।

সে সময় খাওয়ার কথা মনেই থাকতো না, কতবার যে মা এসে বকা দিতেন খেতে যাওয়ার জন্য, তার আর অন্ত নেই। আমাদের সময়ে খেলার সরঞ্জাম তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু দুরন্ত মনোবল ছিল। কখনো জাম্বুরা বা পলিথিন পেঁচিয়ে বল বানিয়ে খেলতাম। ক্রিকেট খেলার জন্য কাঠের একটি তক্তা হলেই হতো।  র‍্যাকেট ছিল না, কিন্তু পায়ের জুতা ছিল। কাঠ দিয়ে ব্যাট, পায়ের জুতা দিয়ে র‍্যাকেট, জাম্বুরা দিয়ে ক্রিকেট বল আর পলিথিনের প্যাকেট পেঁচিয়ে ফুটবল। তারপরও খেলা চলতো বিরামহীনভাবে।

মাছ ধরার কথা তো বলাই হলো না। বৃষ্টিতে যখন খালবিল ভরে যেত। জমিজমা আর পুকুর সমান হয়ে যেত। পুকুর প্লাবিত হয়ে মাছ বেরিয়ে পড়তো। তখন মাছ ধরার হিড়িক পড়ে যেত। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পানি ছেঁকে মাছ ধরতাম।  সারা গায়ে কাদা মেখে দুই হাতে দুই মাছ নিয়ে মায়ের সামনে হাজির হতাম। ভাবটা ছিল এমন, যেন দু’টি মাছেই জীবনে সব চাওয়া পূরণ হয়ে গেছে।

কাদামাখা শরীর দেখে মা কখনো ফিক করে হেসে দিতেন, কখনো বা ইচ্ছে মতো বকে দিতেন। কিন্তু তাতে কি! সেই মাছ দিয়ে তো আমরা বউভাত খেলতাম। সেই খেলার ছলে কতবার যে বিয়ে হয়েছিল আমাদের, নিজেরাও জানি না! এইতো শৈশব! এইতো জীবনের সোনালী সময়।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।


ইবি/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়