ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বেঁচে থাকতে বৃক্ষরোপণ

জসীম উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১২ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বেঁচে থাকতে বৃক্ষরোপণ

পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে অক্সিজেন। যার সবটাই যোগান দেয় বৃক্ষ। বৃক্ষ তাই আমাদের পরম বন্ধু। খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, স্বাস্থ্য, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধুর ন্যায় সাহায্য করে। এর সৌন্দর্যে হৃদয় আপ্লুত হয়।

বৃক্ষ থেকে ফুল, ফল, ছাল, কাঠ ইত্যাদি সরবরাহ করে আমরা প্রতিনিয়ত পূরণ করি নানান চাহিদা। অর্থাৎ বাসস্থান থেকে শুরু করে ঔষধ তৈরি এবং অক্সিজেন সরবারাহ পর্যন্ত বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য। পৃথিবীর বুকে বৃক্ষ পরিবেশকে দেয় মনোরম রঙিন চিত্র। আর জীববৈচিত্র্যে স্থাপন করে বেঁচে থাকার ভারসাম্যযুক্ত অবস্থা।

কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে সবুজ শ্যামল পৃথিবীর অস্তিত্ব বিপন্ন। বিষাক্ত গ্যাসের কবলে পৃথিবীর বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। জীবনকে করে তুলছে দুর্বিষহ। ফলে নিজেদের বেঁচে থাকার তাগিদে। এ সুন্দর ভুবনকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে প্রাণী জগতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে একটি সুন্দর পথ আছে। বৃক্ষরোপণ।

বেশি বেশি গাছ লাগানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে পারি। কেননা বৃক্ষ মায়ের ন্যায় আঁচল দিয়ে আগলে রাখে প্রাকৃতিক পরিবেশকে। বৃক্ষ কখনো দূর্যোগ বা প্রাকৃতিক সৃষ্ট সমস্যার কবল থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। যার জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে আমরা দেখতে পেয়েছি- সিডর, আইলা, বুলবুল ও পরিশেষে আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ের সময় সুন্দরবন বৃক্ষের বুকপাতা সংগ্রামের দৃশ্য। যুগযুগ ধরে বৃক্ষ খড়া, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প এবং সাইক্লোন ইত্যাদি ভয়ানক প্রাকৃতিক দূর্যোগের মুখ থেকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করে জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আসছে।

কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসেও প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে নির্বিচারে উজাড় করছি বনায়ন। শুধু উজাড়ই করছি না। বৃক্ষ রোপণে অনাগ্রহীও হয়ে উঠছি। কাটার অনুপাতে লাগাচ্ছি না সে পরিমাণ গাছ। কিন্তু বনায়ন উজাড়ে বাসস্থান স্থাপন নিশ্চিত হলেও বিলুপ্ত হয়ে অনেক বণ্যপ্রজাতি (গন্ডার, মাউস হরিণ, গরু-মহিষ)। এভাবে যদি এই প্রবণতা চলতে থাকে তাহলে দেখা যাবে অদূর ভবিষ্যতে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়বে। পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাবে অনেক প্রজাতি। আর তখন মানুষকে জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হবে।

একটি দেশের পরিবেশ ও ভারসাম্যযুক্ত জীববৈচিত্র্য সুনিশ্চিতে ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে আছে মাত্র ১৭.৫%। এটাও বর্তমানে কমে গেছে। তাই আমাদের দেশে সম্প্রতি ঘনঘন ঘটছে প্রাকৃতিক দূর্যোগ। যেমন নদী ভাঙ্গন, খড়া, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ইত্যাদি।

আমাদের দেশে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত অর্থাৎ তিন মাস (আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র) বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময়। আমরা যদি এসময় গাছ লাগাই তাহলে আমরা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মাঝে একটা ব্যালেন্স স্থাপন করতে সক্ষম হব। আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে পারবো বেঁচে থাকার উপযুক্ত পরিবেশ। তাই আসুন একটি গাছ কাটলে কমপক্ষে তিনটি গাছ লাগাই। মনোযোগি হই বনায়নে। আগামী প্রজন্মের জন্যে সবুজ পৃথিবী গড়ে তুলি।

লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ঢাকা/ মাহফুজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়