ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনা: যুদ্ধ সবার, লড়তেও হবে সবার

আরিফুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০০, ১২ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনা: যুদ্ধ সবার, লড়তেও হবে সবার

করোনা মহামারি প্রকোপে হাঁপিয়ে উঠছে বিশ্ব- প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়- সব বিশ্বই। প্রথম বিশ্ব বলতে বোঝাচ্ছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এবং তার মিত্র রাষ্ট্রসমূহকে যারা ন্যাটোভুক্ত। এরা সকল দিক থেকেই অন্যদের চেয়ে উন্নত। উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, উন্নত প্রযুক্তি, শিক্ষা-দীক্ষা, মেধা-মননে সব ক্ষেত্রেই উন্নত।

আর দ্বিতীয় বিশ্ব হলো রাশিয়া এবং তার মিত্র রাষ্ট্রসমূহ। যারা ওয়ারশ চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। এরাও কোনোদিক থেকে কম নয়। প্রথম বিশ্বকে টেক্কা দিয়ে চলাই এদের কাজ। উভয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক। আর তৃতীয় বিশ্ব হচ্ছে উপর্যুক্ত দুই বিশ্বের তাঁবেদার রাষ্ট্রসমূহ। ক্ষমতার মেরুকরণে মোড়ল দুই বিশ্বের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে কোনোরকম বেঁচে থাকাই তাদের প্রধান কাজ।

তবে, এ নীতিতে কিষ্কিন্ধ্যা কাণ্ড বাধিয়ে তুলেছে অদৃশ্য করোনা। বৈষম্যহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সকল বিশ্বে। উঁচু-নীচু শ্রেনীবিভাগ ভুলে বিশ্বের সবারই এখন উদ্দেশ্য এক। করোনা নিরোধ। সমান্তরাল রেখায় দাঁড়িয়েছে তিন বিশ্ব। ক্ষমতাশালীদের ক্ষমতার দূর্গে ফাটল ধরেছে।

তাঁবেদারি করতে হচ্ছে একমাত্র অদৃশ্য সত্ত্বার। মহামারীর তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ।

সুতরাং মহামারি রোধে সচেষ্ট অংশগ্রহণ থাকতে হবে সবার। জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। মানব সেবাই যেন তাদের ব্রত। ‘I Pledge to consecrate my life to the service of humanity. I will not use my knowledge contrary to the laws of humanity. I will maintain the utmost respect of human life from the time of conception,’- এ প্রতিজ্ঞা করেই চিকিৎসা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন তারা।

তবে, সকলে যে এ প্রতিজ্ঞা যথাযথভাবে রক্ষা করছেন সেটা বলা যাবে না। এ মুহুর্তে একজন চিকিৎসক যে সাধারণ মানুষের কাছে দেবতা প্যনাসিয়া ( যিনি সর্বরোগের সমাধান করেন) সেটা সন্দেহাতীতভাবে বলা যেতে পারে। এছাড়াও, শৃঙ্খলা রক্ষায় ঝুঁকি সত্ত্বেও কাজ করে চলেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছেন তরুণদের বৃহৎ একটি অংশ। তারা নির্ভীক। শশ্রদ্ধ অভিবাদন তাদের। তাদের ত্যাগের উপাখ্যান স্মরণ করে  প্রায়শই 'করোনাযোদ্ধা' উপাধিতে ভূষিত করে থাকি।

অবশ্যই তারা যোদ্ধা। সম্মুখ যুদ্ধ করছেন তারা। এ যুদ্ধে হাল ধরতে হবে শিক্ষিত-সচেতন যুবসমাজকে। পরিবারের অন্যসবার সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে যুবসমাজকেই। 'বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন' নীতি মানতে হবে। তবে এ নীতি কেবল তাদের জন্যই প্রযোজ্য যাদের আগামীদিনের খাবারের ব্যাপারে ভাবতে হয়না। জীবিকার জন্য পরিবারের অধিকাংশ উপার্জনক্ষম ব্যাক্তির কর্মস্থলে যেতে হয়। সুতরাং তাদের সুরক্ষার উপর জোর দিতে হবে। প্রয়োজনে সুরক্ষার স্তরকে ধাপে ধাপে ভাগ করে নিতে হবে যেমন- আক্রান্তের পূর্বে করণীয় এবং আক্রান্ত অবস্থায় করণীয় ইত্যাদি।

আক্রান্তের পূর্বে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পড়া এবং অন্যদের মাস্ক পড়তে বাধ্য করা। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে কাউন্সেলিং করা। ঠিকঠাকভাবে হাত ধোয়া। এসব কাজে অংশ নিতে পারেন যুবসমাজ। পরিবারের কোনো সদস্য আক্রান্ত হলে তাকে সাহস যোগানো। সাবধানতা অবলম্বন করে তার পরিচর্যা করা। পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে আসলে আক্রান্ত ও অনাক্রান্ত উভয়ের মাস্ক পড়া। এসব বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

তরুণরাই হবে পরিবারের প্রশাসক। যুদ্ধ করতে হবে অদৃশ্য করোনার বিরুদ্ধে। তাহলেও তারাও হবেন একজন করোনাযোদ্ধা। এ যুদ্ধ কেবল চিকিৎসক, প্রশাসক কিংবা রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের নয়। এ যুদ্ধ সবার। তাই লড়তে হবে সবাইকে । মনে রাখতে হবে, আক্রান্ত রোগীর ৮০ভাগেরও অধিক বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যান। শুধু দরকার সঠিক পরিচর্যা।

এ অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে বিপাকে পড়তে হবে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর। যেখানে প্রথম বিশ্বের মজবুত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে করোনা। সেখানে বঙ্গদেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার উপর নির্ভর করা নিতান্তই বালখিল্যতা।

সুতরাং এই অদৃশ্য শত্রু মোকাবিলায় একমাত্র সচেতনতাই হতে পারে প্রধান হাতিয়ার। প্রত্যেকে নিজের পরিবারের সুরক্ষার ব্যপারে সজাগ থাকলে বেঁচে যাবো সবাই। পরিবার সুরক্ষিত থাকলে সুরক্ষিত থাকবে দেশ। এ যুদ্ধ আপনার, আমার, সাবার। ‘এ তুফান ভারি, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার’।

লেখক: শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

 

ঢাকা/ মাহফুজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়