ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আমার জন্য লেখা, ব্যাপারটা কেমন

মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:২৪, ১৫ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
আমার জন্য লেখা, ব্যাপারটা কেমন

মৌলিক কিছু লেখা বা ভাবা ততটা সহজ নয়, যতটা আমরা মন থেকে মনে করে থাকি তা লেখার পূর্বাংশে। সবার একটা সহজাত মানসিক বৈশিষ্ট্য এমন যে, আমি তো পারি লিখতে, ইচ্ছে করলেই পারি।মনে হলেই কিছু লিখে ফেলতে পারি। কিন্তু লেখা আর সাহিত্যের তফাৎ সেইখানেই।

সাহিত্য ইচ্ছা করে লেখার জিনিস নয়। তার পেছনে থাকে উদ্দেশ্য, আদর্শ, নিজের ভাব প্রকাশ, মতামতকে সাহিত্যে মানুষের সামনে উপস্থাপন।

এছাড়া আমি আমার শৈশব কৈশোরে এবং যৌবনে কী বিষয় নিয়ে কোনো মতাদর্শকে কেন্দ্র করে পড়াশুনা করবো, তাও কারো লেখায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।

পড়া শুধু জানা কিংবা বোঝার জন্য নয় বরং তা একজন লেখকের আদর্শ তৈরিতে এবং পরিবর্তন পরিবর্ধনে ভূমিকা পালন করে।   

লেখার জন্য প্লট তৈরি থাকাও সমানভাবে জরুরি। মাথায় হয়তো লেখার অনেক প্লট ঘুরপাক খায়, কিন্তু যখন হাতে কলম সামনে হার্ড পেপার কিংবা যান্ত্রিক স্ক্রিন থাকে, তখন সেই প্লটগুলোই বিক্ষিপ্ত, অস্পষ্টভবে গড়াগড়ি খেয়ে পড়ে থাকে।

এতে কোনো ভাব, মতামত, আদর্শের লেশমাত্র প্রকাশ পায় না, ফলে সেই লেখা তার তাৎপর্য হারিয়ে ফেলে।

এখানে বলে রাখা ভালো, আমি লেখককে একদমই অপমান কিংবা নিরুৎসাহিত করছি না। কিছু ফ্যাক্টকে সবার সামনে উপস্থাপন করছি মাত্র।

কেন এমন বাক্যব্যয় করছি, তার পেছনে বিশদ কথা আছে। লেখক যদি তাদের বিষয়বস্তু, ভাবাদর্শের সমন্বয় সাধন করতে ব্যর্থ হয়, তবে ক্ষতি লেখা কিংবা লেখকের নয় বরং জাতির ক্ষতিও সমভাবে চলমান।

মনের প্লটের সাথে লেখার অমিল, সমন্বয়হীনতা তাৎপর্যহীন এবং নিরস লেখা সৃষ্টির মূল কারণ।

সমন্বয় ফিরিয়ে আনতে যেমন আদর্শের পরিবর্তন, পরিবর্ধন প্রয়োজন, তেমনি শব্দভান্ডারের বিকাশ সম হারে বৃদ্ধি প্রয়োজন। শব্দভন্ডার পারে লেখার ভাবকে প্রকাশ করতে, তদুপরি প্রচুর শব্দজ্ঞান থাকার পরও সঠিক পথ পরিক্রমার অভাবে লেখা হারিয়ে ফেলে তার সত্যকে।

কিন্তু বিভিন্ন শব্দের আনাগোনা লেখাকে আরও রুচিশীল এবং রসাত্মক করে তোলে। এছাড়া বিভিন্ন শব্দের সমার্থক শব্দ লেখাকে ভিন্নভাবে প্রকাশে সাহায্য করে।

আমাদের সবারই উচিৎ মৌলিক বৈশিষ্ট্যের লেখার প্রতি উদাসীন না হয়ে সচেতন হই এবং সাহিত্যের এই বিপর্যস্ত ধারাবাহিকতাকে এক নতুন সূর্যের দিকে ধাবিত করি।

এখন লেখা নিয়ে যদি কিছু পর্যালোচনা করি তবে নেহাৎ মন্দ হবে না।আমার কথা হলো, কোনো বিষয়বস্তু ঠিক না করে লিখতে বসা নিতান্তই বোকামি ছাড়া কিছু না। লেখার সময় বিষয়বস্তু অলৌকিক ক্ষমতায় এসে যাবে এমন ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে লিখতে বসেছি এমন ভাবনা হওয়ার পরক্ষণেই মনে হয়, হয়তো আমি সব পারব নতুবা নয়।

জানি এই ভ্রান্তি ক্ষণিকের মধ্যেই সঠিক প্রমাণিত হয়ে যাবে যে আমার দ্বারা সম্ভব নয়।তখন হয়তো কলম আর হাতের খাতাটা ছুড়ে ফেলে দেব অথবা বিরক্ত হয়ে মোবাইল দেখব আবার হয়তো অনেকক্ষণ ধরে ঝিম মেরে বসে থাকব। পরে কোনো বিষয়বস্তু আস্তে আস্তে মাথার উপর দিয়ে চলে যাওয়ার সময় মস্তিষ্কের সেলগুলোকে জানান দেবে যে প্লটে আমি আছি।

কখনোই স্থির মস্তিষ্কে একে পাওয়া যায় না বরং ক্রমাগত মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রেখে কোনো লক্ষ্যবস্তু কিংবা বিষয়বস্তু যাই বলি না কেন তাতে পৌঁছানো সম্ভব। বিজ্ঞান এ নিয়ে কী বলে জানা নেই, জানা থাকলে বলা যেত। কিন্তু আমার দর্শন চিন্তা আর নিজস্ব বিজ্ঞান বলে মস্তিষ্ককে ক্রমাগত সংযোগহীন ব্যস্ত রাখার মাধ্যমেই লেখার উৎকর্ষ মান এবং আদর্শিক লেখা পাওয়া সম্ভব।

ধ্যান,মন এবং মোহ শক্তিকে শান্ত করে যদি লেখার মেট্রোরেল খুঁজে পেতে চাই, তবে গোড়াতেই গলদ ব্যাপারটা ঘটার সম্ভাবনা শতভাগ। চঞ্চল মন আর স্বপ্নবিলাসী দুটি চোখ মস্তিষ্কের ফাংশনের সেলগুলোকে তরতাজা প্রাণশক্তি ও জীবনীশক্তিতে বলবান করে।

মস্তিষ্কের ফাংশনগুলো মূলত সারা দেহ নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে থাকে, তদুপরি মনের ভাবনাগুলো যখন লেখা কিংবা কবিতায় করতে চাই তখন উপলব্ধি হয়, যেন মন (অর্থাৎ আত্মা) আর মস্তিষ্ক তাদের অগোচরে এক পরম সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে এক নব সৃজনশীলতার, নব সৃষ্টের জন্ম দেয়।

সবকিছু যখন বুঝতে পারি, তখন উপলব্ধি হয় যে এ কাজ আমার নয়, কাজের জন্য আমার জন্ম হয়নি, কিন্তু পরক্ষণেই যখন গরগর করে কিছু লিখে ফেলি, তখন মনে হয় বিধাতা যেন আমাকে শুধু এই পথে চলার জন্য বানিয়েছেন, আমাকে সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যই হয়তো এই পথে পথ চলার জন্য।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ (১ম বর্ষ), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

চবি/মাহি     

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়