ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘এবার তোরা মানুষ হ’

অ‌্যাড. সামছুল আলম সাদ্দাম (জয়) || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৩, ১৫ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘এবার তোরা মানুষ হ’

‘‘এই মানুষ তুমি কি মানুষ হবে?

হায় মানুষের মতো দেখতে কিন্তু

আসলে হায়না সবে!

ওই মানুষ গুলো সত্যিকারের

মানুষ হবে কবে!

এই মানুষ তুমি কি মানুষ হবে?’’

লেখাটা শুরুর সময় প্রিতম আহমেদের গানের লাইনগুলো মনে পড়লো।আমাদের দেশে অনেকেরই অন্যকে দোষ দেওয়ার প্রবণতা আছে। আবার, এ দায়িত্ব আমার না বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়। কিন্তু তার কি দায়িত্ব সেটা তিনি বলেন না বা তার দায়িত্ব তিনি সঠিকভাবে পালন করছেন কিনা সেদিকে তিনি নজর দেন না। সারা বিশ্বের নেতারা কি কি করছেন আর কি কি বলছেন মটিভেট করার জন্য‌। আমরা তাদের থেকে কি কোনো শিক্ষা নিতে পেরেছি?

সড়কের ধারে লাল সবুজ আলোর ধারা দেখে বোঝা যায় আমরা অনেক আমোদ-প্রমোদে আছি, এখনো করোনা আমাদের আগমন বার্তা দিতে পারেনি। আমরা গানে, কৌতুক করে সোশ‌্যাল মিডিয়াতে করোনা করোনা করছি। তাই মনে প্রশ্ন জাগে আমরা মানুষ হব কবে?

চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল ২০১৯সালে, তাহলে আমরা এই তিন মাসে সামাজিকভাবে সচেতনতা কি তৈরি করতে পেরেছি? আমরা কি এর পরে কী হবে, কী করা দরকার সে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করেছি? জনগণ আমাদের সব, এদের জন্য আমি আছি, সেইসব নেতারা যাদের মধ্যে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদধারীরা আছেন, তারা কি কোনো দিকনের্দেশনা দিতে পেরেছেন অথবা কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে? আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার পদক্ষেপে এখন পর্যন্ত যা পাওয়ার, তাই পেয়েছি।তাঁর বাইরে আমরা তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখিনি।

ভাইরাসটা যখন বিভিন্ন দেশে দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়ছিল তখনো আমাদের দেশের সরকারে দ্বায়িত্ব রত যারা ছিলেন এই সংক্রমণ ছড়ানো রোধ করতে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা গিয়েছে কি? কেন আমাদের একজনের একটা বার্তার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে চাতক পাখির ন্যায়?

কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, লকডাউন, ইত্যাদি নতুন নতুন শব্দ তৈরি হয়েছে, হালে ব্যবহার করা হচ্ছে, আসলেই এই শব্দগুলোর প্রকৃত অর্থ আমরা কতজন জানি? মিডিয়া এক হাত ধুয়ানো ছাড়া বাকি শব্দের অর্থ আর প্রয়োগ নিয়ে তেমনভাবে কি আলোচনা করছে? আমরা দেখি, কিছু লোক করোনা শব্দকে ব্যবহার করে কী করে যার যার অবস্থান থেকে এ থেকে ফায়দা নেওয়া যায়। আমাদের নিজেদের অসচেতনতার কারণে ঘনবসতি বা জনবহুল এই দেশে লাশের সারি কত লম্বা হবে কেউ জানেন কি? টোলারবাগের মৃত্য আমাদের কি কোনো শিক্ষা দেয়নি? আমরা কবে শিখব?

ডাক্তারেরা বলছেন, আমাদের আতঙ্কিত না হতে, মানসিক চাপে না থাকতে। আমাদের বলতে পারেন, আমরা কী করে চপামুক্ত থাকি? এত নানাবিধ স্নায়ুচাপ বিশ্বের আর কোনো দেশের নাগরিককে নিতে হয় কিনা আমার জানা নেই। শুধু ডাক্তারেরা না, এখন সবাই করোনার সব বিষয়ে জানেন। তাই উপদেশ দিচ্ছেন কী করা দরকার, কী দরকার না।

পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়, হাতে কোয়ারেন্টাইন সিল দেওয়া অবস্থায় এক ব্যক্তি ব্যাংকে গিয়েছেন টাকা তোলার জন্য। আবার দেখি নিজের এলাকায় করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পরে সে পালিয়ে ঢাকায় এসেছেন। তাহলে সে যে যে পথে, পরিবহনে ঢাকায় এসেছেন, সেই পথের যাত্রীরা ঝুঁকিতে বা তার সংস্পর্শে যারা তাদেরকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন। এমনকি এটাও পড়েছি, যে এলাকায় রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, সে রোগীকে নাকি এলাকাবাসী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছেন না। তাহলে যাকে এই ভাইরাস আক্রান্ত করেছে, আমরা ধরেই নিচ্ছি তিনি সুস্থ হবেন না বা তাকে রাখা যাবে না? আমরা কেন দিন দিন অমানুষ হচ্ছি?

এখন প্রশ্ন হলো, সব বন্ধ করে দেশ চালাবেন কী করে, অর্থনীতির চাকা কী করে ঘুরবে? সারাদেশের বর্ডার প্রায় বন্ধ। আমদানি রপ্তানি হচ্ছে না বললেই চলে। এখন মানুষকে বাঁচাতে হবে এটাই আমাদের মূল কাজ। কীভাবে? যেহেতু আমাদের হাতে এই রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই, তাই আমাদের এই রোগ যেন সহজে ছড়াতে না পারে, তার জন্য সচেতন হওয়া খুবই দরকার, এরপরে আর্থিক মন্দা কীভাবে কাটানো যায়। যারা দিন আনে দিন খায় তারা বলছেন, করোনা আমাদের মারবে না, আমরা না খেয়ে মারা যাবো। আমরা আশার আলো দেখতে পাই, আমরা এ সংকট কাটিয়ে উঠবোই। কারণ যে দেশে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার মতো একজন দক্ষ দেশ প্রধান আছে।সে দেশ হেলায় পড়ে থাকবে না।

আমরা বিভিন্ন উৎসবে, টকশোতে, সেমিনারে, আলোচনা অনুষ্ঠানে দেশ দেশ করি, সবার সেই দেশ প্রেম প্রমাণের সময় ঠিক এখন। এখন বলতে ইচ্ছে করছে ‘এবার তোরা মানুষ হ’।

লেখক: সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর।

 

ঢাকা/ মুছা/মাহি 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়