ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চায় ইবিতে ছাত্রসংসদ প্রয়োজন’

মেহেদী হাসান রাফি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১৬ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চায় ইবিতে ছাত্রসংসদ প্রয়োজন’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। সূচনালগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার গৌরবের স্বাক্ষর রেখেই চলেছে।  চারটি বিভাগ নিয়ে চালু হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩৪টি বিভাগে ১৭ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।

মানসম্মত গ্র্যাজুয়েট তৈরি থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেধার স্বাক্ষর রেখে চলছেন প্রতিনিয়ত।  স্বাধীনতা পরবর্তী সব যৌক্তিক আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়টি সবসময় ছিল সোচ্চার।  সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করার অধিকার আদায় করা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষক নিয়োগ দানে বৈধতা আদায় করতে শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। 

অসাম্প্রদায়িক চর্চা থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসে সব শিক্ষার্থীর অধিকার আদায় করার ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।  অথচ সূচনালগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় অর্থশত বছর অতিক্রম করলো, কিন্তু এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কোনো সংসদ নেই। ফলে বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।

আমরা জানি, একটি দেশের ছাত্রসমাজ হলো ঐ দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। আগামীর দেশ কতটা উন্নত হবে, তা নির্ভর করবে ঐ দেশের বর্তমান ছাত্রসমাজ কতটা সচেতন সেটার উপর।  আর ছাত্রসমাজকে গণতান্ত্রিক ধারায় সচেতন করতে এবং তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে ছাত্রসংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  অথচ বর্তমানে ছাত্রসংসদের অচল অবস্থার কারণে ছাত্রসমাজ শুধু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে নয় বরং তারা তাদের যৌক্তিক অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা হলো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাজসজ্জা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয় শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করে। অথচ ছাত্রসংসদ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া সিন্ডিকেট সভা পরিচালনা করছে। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলতে পারছে না।  এতে আবাসন সমস্যা থেকে শুরু করে পরিবহন সমস্যা নিয়ে ছাত্ররা কথা বলতে পারছে না।  তাছাড়া ছাত্র সংসদ না থাকায় ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের কাজকর্ম পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অনেকটা শীতল হয়ে পড়েছে।  তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মনোভাব ফিকে হয়ে যাচ্ছে।  যা ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে।

তাই ছাত্র রাজনীতির জৌলুশ ফিরে আনার জন্য ছাত্রসংসদের ভূমিকা অপরিসীম।  সচল ছাত্রসংসদ ছাড়া কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি দিয়ে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি করা সম্ভব না।  তাই এখন উপযুক্ত সময় ছাত্র সংসদ সচল করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মনোভাব জাগ্রত করা।

প্রসাশনের নিকট আবেদন থাকবে ছাত্রসংসদ সচল করে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক বিকাশ সৃষ্টি করতে সাহায্য করা। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সক্রিয়তা হারাবে, হারাবে তাদের গণতান্ত্রিক মনোভাব। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হবে প্রসাশনের নিয়ন্ত্রণে। যার বলি হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সতেরো হাজার শিক্ষার্থী। 

সাম্প্রতিক একটা ঘটনা নিয়ে আলোচনা করলে তা আরও পরিষ্কার হবে। সাম্প্রতিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা অনলাইন ক্লাস নেবে। অথচ এই সিদ্ধান্ত ছিল শিক্ষার্থীদের বিপরীতে। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী গ্রামে বসবাস করাতে তাদের পক্ষে অনলাইন ক্লাস করা কষ্টকর ছিল।   তবুও শিক্ষার্থীরা জোরালো প্রতিবাদ করতে পারেনি।  যদি একটা ছাত্রসংসদ সক্রিয় থাকতো, তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি সহজে সুস্থভাবে প্রকাশ করতে পারতো।

আবার অন্য দিকে আমরা যদি ক্যাম্পাসের সর্বশেষ কয়েক বছরের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস লক্ষ করি তা হলে দেখা যাবে, যারা ক্ষমতাসীনদের অনুসারী তারাই ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করছে। ফলে অন্য ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো রাজনীতি থেকে আগ্রহ হারাচ্ছে।  যার ভবিষ্যৎ হবে খুব ভয়ানক। তাই একমাত্র ছাত্রসংসদ হলো সেই পথ, যে পথ ছাত্রদের মাঝে আবার গণতান্ত্রিক মনোভাব সৃষ্টি করবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ (তৃতীয় বর্ষ), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

 

ইবি/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়