‘শিক্ষার্থী এটাই হোক আমাদের পরিচয়’
এ এম তামজীদ || রাইজিংবিডি.কম
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই বিতর্কে দুপক্ষই সমানুপাতিক হারে সক্রিয়। বিতর্কের বিষয়বস্তুগুলো এতটাই মূল্যহীন যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তবে বলা যায়, বিতর্কের বিষয়বস্তুগুলো মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। যারা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, তাদের সংখ্যা অতি নগণ্য। তাদের জন্য সবাইকে দায়ী করা সমীচীন নয়।
অতি নগন্যদের উদ্দেশ্যে বলছি, একজন শিক্ষার্থীর সাফল্য শুধু প্রাতিষ্ঠানিক নয়। সাফল্য নিজস্ব যোগ্যতায় ও অধ্যবসায়ের ফলে আসে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কখনো সাফল্যের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আবার সাফল্যের কারণও হতে পারে না। যেকোনো অবস্থান থেকে আপনি সাফল্য অর্জন করতে পারেন। যারা যত বেশি অধ্যবসায় করছে, তারা তত বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। সেটা হোক কোনো জাতি কিংবা ব্যক্তি।
শেখ সাদী, মহাকবি ফেরদৌসী, ইবনে সিনাসহ আরও অনেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই জগৎখ্যাত হয়েছেন। ইবনে সিনা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হয়েছেন। তাদের পরে যদি স্যার আইজ্যাক নিউটন, গ্যালিলিও অথবা আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের কথা বলি। তারা বিজ্ঞানকে কতটাই না সহজ করেছে? অথচ তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অতি নগণ্য। তারা খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের নিজস্ব অধ্যবসায়ের ফলে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবি নজরুলের দিকে তাকালে দেখা যায় তারা কতটা প্রতিভাবান ছিলেন, কিন্তু তাদের এই প্রতিভার পেছনে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাত ছিল না। তারা তাদের নিজস্ব যোগ্যতায় আজ এতটা বিখ্যাত হয়েছেন। যদি আজকের বিল গেটস কিংবা মার্ক জাকারবার্গ এর কথা বলি, তারাও কিন্তু হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিখ্যাত হননি। তারা বিখ্যাত হয়েছেন তাদের নিজস্ব যোগ্যতায়। তাই প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের চাইতে ব্যক্তির সাফল্যকে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।
আবার এটাও বলা যাবে না যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো গুরুত্ব নেই। যদি গুরুত্বই না থাকতো, তাহলে আজ এত এত পড়ালেখা করে কেউ তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতো না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অবশ্যই আছে। তবে হ্যাঁ, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত পুরনো, তার ইতিহাস ও ঐতিহ্য তত বেশি। তাই বলে অন্য প্রতিষ্ঠানকে ছোট করা যাবে না। একজন শিক্ষার্থী যে প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা অর্জন করে, সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার আবেগ ভালোবাসা অনেক বেশি থাকে।
প্রতিষ্ঠানের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হোক এটা আমরা চাই না। তাই ‘আমরা শিক্ষার্থী এটাই হোক আমাদের পরিচয়’।
আমাদের ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি মহান কাজে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখেছি। আরও দেখেছি, সম্প্রতিকালের কোটা আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন, যেখানে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেছে। প্রতিটি আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মাঝে কোনো ভেদাভেদ ছিল না। হয়তোবা তার জন্যই আজ আমরা প্রতিটি আন্দোলনে সফল হয়েছি।
তাই আমরা আমাদের এবং আমাদের দেশের মঙ্গলের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো বিভেদ সৃষ্টি হোক এটা আমরা চাই না।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
রাবি/মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন