ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

করোনায়ও থেমে নেই তারা

মামুন সোহাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৬ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনায়ও থেমে নেই তারা

করোনায় ঘরবন্দি সবার রয়েছে নানা স্মৃতি। নিত্য নতুন অনুভূতি। পুরনো প্রায় সব অভ্যাস বদলে গেছে পৃথিবীর এই দুঃসময়ে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেই দুরন্তপনাও এখন আর নেই। পরিবর্তন এসেছে নিত্য দিনের সব কাজকর্মে। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের দিনলিপি জানাচ্ছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মামুন সোহাগ।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজে শেষ বর্ষে পড়ছেন রিফাত খোন্দকার ইমন। করোনার দুর্দিনে বাসায় থেকেই সময় পার করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন কাজের রুটিন এক থাকে না। কোনো দিন ক্লাসের পড়া পড়ি। কোনো দিন বিসিএস এর জন্য। কোনো দিনবা আবার উপন্যাস। হঠাৎ বাইরে চলে যাই কোনো দিন।  ঘুরে ঘুরে ছবি তুলি কিছু সময়। আবার কিছুদিন একদম খেয়ে-ঘুমিয়ে সিনেমা দেখেই কেটে যাচ্ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ছেন সুমাইয়া রিতু। তিনি বলেন, ‘মহামারিতে আবদ্ধ সবাই চার দেয়ালের ভেতর।  সময়গুলো একদম সুখকর নয়। বাসায় খুব অলস সময় কাটছে। তবে পরিবারের সাথে কাটানোর জন্য অফুরন্ত সময় পেয়েছি। সেটাই কাজে লাগাচ্ছি।  আম্মুর সাহচর্যে থাকি বেশির ভাগ সময়।  এছাড়া ছবি আঁকতে ভালোবাসি। মাঝে মাঝে সময় কাটে আঁকিবুঁকিতে। পড়াশোনা টুকটাক করি। এছাড়া নতুন রেসিপি তৈরি করি আর আম্মুর বকুনি খাই।

তিনি আরো বলেন, ‘বাসায় কিছু ফুল গাছ লাগিয়ে সেগুলোর পরিচর্যা। মায়ের কাজে সাহায্য করা। বোনের সাথে খুনসুটি ইত্যাদি ইত্যাদি।  তবে ফোনটা একটু বেশিই সঙ্গী হয়েছে। এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিন-রাত। আবারও খুব শীঘ্রই ফিরে যাবো সেই ব্যস্তময় দিনগুলোতে। এই কামনা করি। আল্লাহ সব স্বাভাবিক করে দিক। ফিরে আসুক জীবন্ত পৃথিবী।'

ইডেন কলেজের দর্শন বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মালিহা কলি। হল ছেড়ে বাড়িতে গেছেন মাস চারেক আগে। তিনি বলেন, ‘করোনাকালীন শিক্ষার্থীরা নিজ বাসায় অবস্থান করছে। বাসা থেকে বের হবার একেবারেই কোনো সুযোগ নেই এসময়। তাই বন্দি অবস্থাটা আর ভালো লাগছে না।'

তেঁজগাও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের নুসাইবা ইসলাম রিতি। করোনার এই লম্বা ছুটিতে সবার মতো তিনিও গ্রামের বাড়ি গাজিপুরে আছেন। তিনি বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই সাথে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। সময় কাটছে সপ্তাহে তিনদিন জুম অ্যাপে ক্লাস করে। এছাড়াও যেহেতু বাসা থেকে বের হওয়া যাচ্ছেনা, তাই বাসায় বসেই সময় কাটাচ্ছি। কখনো ছবি আঁকছি। কখনো গল্পের বই পড়ছি।’

বগুড়ায় গ্রামের বাড়িতে আছেন তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থী অন্তুর ইভান। বিরক্তি নিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা বাংলাদেশে হানা দেওয়ার পর থেকেই ঢাকা ছেড়েছি। ছেড়েছি ভালোবাসার ক্যাম্পাস।  শুরুতে দিনগুলো খুব অন্যরকম কাটছিল মনে হচ্ছিলো। কত দিন পর সবাইকে পেয়েছি। প্রিয় মানুষগুলো সবাই এক সঙ্গে থাকার অন্যরকম অনুভূতি আছে। সেই কলেজ জীবন থেকেই বাবা মাকে ছেড়ে নিজের বাড়ি ছেড়ে থাকছি।  সে জন্য হয়তো প্রথম দিকে ছুটির দিনগুলো ছিল একদমই অন্যরকম ও ভালোলাগার। কিন্তু এভাবে কিছু দিন চলার পর কেমন যেন মনে হচ্ছিল। কিছু কিছু জিনিস খুবই মিস করছি। মিস করছি প্রিয় ক্যাম্পাস।  আমার ভালোবাসার বন্ধুদেরকে। যাদের ছাড়া জীবন যেন জীবন মনে হয় না। তাদের সাথে একবেলা নিয়ম করে আড্ডা না দিলে মনে হয় আমার বোধহয় খাবার হজম হয় না। আবার মিস করছি সেই ব্যস্ত শহরকে।’

দাপুটে ব্যবস্তায় ঢাকাতে সময় পার করেন ইমরান হোসাইন। পড়ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মেকালে যখন চারদিকে রৌদ্রের খরতাপ বিরাজ করে, তখন প্রত্যেকে এক পশলা বৃষ্টির আশা করে।  যেনো প্রকৃতি আবার তার নিজের সতেজরূপ ফিরে পায়। তেমনি ছাত্রজীবনে পড়াশোনা, ক্যাম্পাস, টিউশন-আড্ডাবাজির মধ্যে ২-৪ দিনের ছুটে পাওয়া মানেই প্রিয়জনদের কাছে  ছুটে যাওয়া। ঠিক সেভাবেই বাড়িতে এসেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে দেশে আঘাত হানলো করোনার ভয়াল থাবা। সবাইকে সুরক্ষা ও নিরাপদ রাখার জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ হলো ১৫ দিনের জন্য।কিন্ত সেই ১৫ দিন রূপান্তরিত হয়ে হয়েছে ৪ মাস। তারপরও যেন শেষ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিনেই বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। সাথে মৃত্যুর মিছিলতো রয়েছেই। চিরচেনা সেই বিদ্যাপীঠ আর ভালোবাসায় রাঙানো কাছের মানুষগুলোকে দেখি না অনেক দিন। কিন্তু আজ ঘরে বসে এই সোনালী অতীত মনে করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমাদের। একটা ভয় হৃদয়কে কুড়ে খায় প্রিয়জনদের সাথে আবার দেখা হবে তো! কিংবা প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরে আবার সবাইকে পাবো তো! আবার সেই রঙিন, উৎসব মুখর দিন ফিরে পাবো তো! বাড়িতে এইভাবে আর কত দিন থাকা যায়? পরিবারের ছোট খাটো কাজ।  আর সময় কাটানোর জন্য একটু বই পড়া।  আর ফেসবুকিংই এখন সব। তবুও সুদিনের অপেক্ষায়। পৃথিবী দ্রুত সুস্থ হোক। সবাই ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুক।


ঢাকা/মাহফুজ/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়