ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অ্যাডমিশন অ্যাসিসট্যান্ট

এক অ্যাপেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির যাবতীয়!

মাহবুব এ রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:২৬, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এক অ্যাপেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির যাবতীয়!

মাহবুব এ রহমান: উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে প্রায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই ইচ্ছে থাকে তার স্বপ্নের আর পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু তা চাইলেই তো আর সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যে কত ঝক্কি ঝামেলার তা একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ছাড়া কারো অনুধাবন করা ততটা সহজ নয়। এই সময় শুধু পড়ালেখা নিয়েই যে চিন্তার মধ্যে থাকতে হয় তা নয়, কবে ভর্তির ফরম পূরণের ডেট দিচ্ছে, লাস্ট ডেট কবে, কবে টাকা জমা দেয়ার শেষ তারিখ, কবে পরীক্ষা এসব তথ্য মাথায় রাখাও কম কষ্টের নয়।

তার ওপর একের অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হলে কী কী পড়তে হবে, সিলেবাসটা কেমন, ভর্তির যোগ্যতা কী, কীভাবেই বা দূরের ক্যাম্পাসে যাতায়াত করা যাবে, তা নিয়েও কত দ্বিধা, বিভ্রান্তি। এসব কিছু মাথায় নিয়েই শিক্ষার্থীদের নামতে হয় এক কঠিন যুদ্ধে। যাকে বলা হয় ভর্তিযুদ্ধ। প্রতিযোগিতামূলক এই  পরীক্ষায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকার জন্য অনেকে কোচিং এ ভর্তি হন, কেউ কেউ আশ্রয় নেন প্রাইভেট টিউটরের, কারো আবার প্রস্তুতি নেয়া হয় সম্পূর্ণ নিজে থেকে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ থাকায় তাদের প্রতিযোগী হিসেবে এসে যোগ দেয় আগেরবার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা কিছু শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গড়ে প্রতি বছর দাঁড়ায় প্রায় ১০ থেকে ১২ লক্ষ। এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

কিন্তু এই এতগুলো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা। প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন পদ্ধতি অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় এবং অনেক শিক্ষার্থীই এদিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকায় তাদেরকে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। কবে কোথায় পরীক্ষা হবে, মানবন্টন কত, একজন পরীক্ষার্থী কোন কোন ইউনিটে পরীক্ষা দিতে পারবে – এইসব ব্যাপারে সামান্য তথ্যের ভুলেই ভেঙ্গে যায় অসংখ্য পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন। ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য সিংহভাগ শিক্ষার্থীই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল। ফলে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। তাছাড়া, আবেদনের ক্ষেত্রে ভুল এড়ানোর জন্য শিক্ষার্থীরা ভিড় করে দোকানে, যা একই সাথে সময় এবং অর্থের অপচয়। ভর্তি পরীক্ষার্থীদের সঠিক সময়ে সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে পড়তে হয় বিভিন্ন জটিলতার মাঝে; কখন কী পড়তে হবে, কীভাবে পড়তে হবে তারা বুঝতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গত কয়েক বছর থেকে সমন্বিত পরীক্ষার আয়োজন করতে চাইলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি। ফলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত এবং গিয়ে থাকার জায়গা পাওয়া হয়ে দাড়াচ্ছে আরেক সমস্যা। এসব সমস্যা একজন ভর্তি পরীক্ষার্থীকে প্রতিযোগিতায় অন্যদের থেকে অনেকটা পেছনে ফেলে দেয়।

ভর্তি পরীক্ষার্থীদের এসব সমস্যার কথা মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে 'ESP Lab' নিয়ে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের জন্য সর্ববৃহৎ এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ প্ল্যাটফর্ম 'Admission Assistant' অ্যাপ।

সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতি, ভর্তি তথ্য এবং ফর্ম ফিলাপ করা সম্ভব এখন একটি অ্যাপেই। তাদের এই অ্যাপের মাধ্যমে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ অ্যাডমিশন নোটিশ এবং তথ্য পাওয়া সম্ভব। পরীক্ষার্থীরা সহজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটসমূহে তাদের ভর্তি যোগ্যতা যাচাই করতে পারবে। এছাড়াও, উক্ত ইউনিটগুলোতে আবেদন করা সম্ভব অ্যাপের সাহায্যে ঘরে বসেই। এমনকি, এডমিট কার্ড ডাউনলোড এবং সিটপ্ল্যানও দেখা যাবে অ্যাপের মাধ্যমেই। থাকছে এক্সাম ডেইটের কাউন্টডাউন এবং এসএমএস এলার্ট, ফলে কোনো পরীক্ষার তারিখ ভুল হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। এর পাশাপাশি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য থাকছে পিডিএফ সাজেশন, প্রশ্নব্যাংক, মডেল টেস্ট এবং লাইভ এক্সাম দেয়ার ব্যবস্থা। পরীক্ষার্থীরা পড়ালেখা সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যাপারে লাইভ সাপোর্ট ও বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও নিতে পারবে অ্যাপে দেয়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের থেকে। এছাড়াও, সেসব ভার্সিটিতে যাতায়াতের এবং থাকার ব্যবস্থাও করে দেয়ার চেষ্টাও করবে তারা। যাতায়াতের জন্য বাস ও ট্রেনের টিকিট কাটা যাবে অ্যাপ থেকেই। শুধু তাই নয়, এক্সামের পর রেজাল্ট ও দেখা যাবে এই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই।

মোট কথা, একজন ভর্তি পরীক্ষার্থীর যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, তার প্রায় সবই পাওয়া যাবে এই অ্যাপ থেকে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এবং পরীক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিনিয়ত আপডেটের মাধ্যমে নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করা হচ্ছে এই অ্যাপটিতে, যা এটিকে করে তুলছে আরও বেশি ইউজার ফ্রেন্ডলি।

এই চমৎকার উদ্যোগ নিয়ে কথা হয় 'ESP Lab' এর প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আল মামুন এর সাথে। শুরুর গল্পটা মামুনের মুখেই শুনি, 'তখন ২০১৩ সাল। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করছি। ঢাবিতে চান্স না হওয়ায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে তথ্য বা যোগাযোগের সহজলভ্যতা না থাকার কারণে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়েছিলো। আর সেই সব দূর্লভ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে ভর্তি হই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তির এক বছরের মাথায় চিন্তা আসে এমন কিছু করার, যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় তথা উচ্চ শিক্ষায় ভর্তিচ্ছুরা যাতে এডমিশনের এই সময়টাতে উপকৃত হয়। তখন অ্যাপসের আইডিয়াটা আবিষ্কার করি। ঠিক করি অ্যাপসটি এমনভাবে সাজানোর, যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুরা খুব সহজেই সব ধরনের তথ্য পেতে পারে। সেই সময় থেকেই তা নিয়ে ভাবতাম ও তা নিজ ডাইরিতে লিখে রাখতাম। পরে ১০১৮ সালের জানুয়ারিতে অ্যাপসটির কাজ শুরু করি। সে বছর আমাদের এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রত্যক্ষভাবে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে ভর্তি তথ্য সহায়তা প্রদানে সক্ষম হই। আমাদের লক্ষ্য এই বছর ১ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করা। ইতোমধ্যে অ্যাপটির প্লেস্টোর  ডাউনলোড প্রায় ৫০ হাজার। সঠিক তথ্যের অভাবে যেন ভেঙ্গে না যায় আর একটি ভর্তিচ্ছুর স্বপ্ন এবং আগামীতে প্রতিটা শিক্ষার্থী যেন ঘরে বসেই সম্পূর্ণ ভর্তি প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারে সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

কথা হয় অ্যাপটির ইউজারদের সাথেও৷ অ্যাপের ইউজার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিফুল বলেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে অ্যাপের এসএমএস সার্ভিস। এর জন্য অনেক সময় সেইভ হয় এবং সহজেই সব ভার্সিটির আপডেট পাই।’অপরদিকে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাশরুর বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার সময় কাউন্টডাউন ফিচারটা আমাকে অনেক হেল্প করেছে। তাছাড়া, সার্কুলারসহ সব তথ্য এখানে থাকায় আমাকে ফেসবুক গ্রুপগুলোর উপর নির্ভরশীল হতে হয়নি।’ এই বছর দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন ঐশী; তার মতামত, ‘প্রথমবার এক্সাম দেয়ার সময় আমি এক্সামের ডেইট লিখে রাখতাম। কিন্তু সামান্য ভুলের জন্য বুটেক্সে এপ্লাইয়ের লাস্ট ডেইট ভুল লেখায় আমি সেখানে এক্সাম দিতে পারিনি। তবে ‘অ্যাডমিশন অ্যাসিস্ট্যানন্ট’ অ্যাপে এসব লিস্ট আকারে থাকায় এবার আর এমন সমস্যায় পড়তে হবে না।’

'অ্যাডমিশন অ্যাসিসট্যান্ট' টিমে মামুনের সাথে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সারা দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাঁচ শতাধিক ভলান্টিয়ার।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


রাইজিংবিডি/চবি/৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯/মাহবুব এ রহমান/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়