দ্বিতীয় পর্ব
সেদিন কপোতাক্ষের তীরে
সুপন সিকদার || রাইজিংবিডি.কম
কবির ব্যবহৃত আসবাবপত্রের সুনিপুণ কারুকার্যতার মাঝে আমি হারিয়ে এগোতে লাগলাম বাড়ির অন্দরমহলের দিকে। অন্দরমহলের চারদিকে উঠান। উঠানটি যেন সবুজে মোড়ানো কার্পেট। বাম দিকের কোণে কবির প্রসূতি স্থল, ওই জায়গাতেই মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই ভূবনে আগমন করেছিলেন।
মহাকবি ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। অন্দরমহল থেকে বেড়িয়ে মন্দিরের সামনে এসেছি সামনে থেকে ডানের কোণার দিক বাড়ির ছাদে ওঠার সিঁড়ি। আমি মুধুকবির স্মৃতিচারণ করতে করতে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলাম বাহির বাড়িতে৷ কবির বাড়ির গেট থেকে ডান দিকে আরো তিনটি ঘর এবং একটি উঠান। গেটের বামদিকে কবির আরেকটি আবক্ষ ভাস্কর্য। ভাস্কর্যের গায়ে খচিত অবিস্মরণীয় পংক্তিমালা
‘দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব
বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধি স্থলে…’
পংক্তিমালাটি পড়ে হঠাৎ আমি থমকে গেলাম। নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। লাইনগুলো বিড়বিড় করে পড়তে পড়তে বের হলাম দত্ত বাড়ি থেকে। এবারে এগোচ্ছি মধুকরের সেই চিরচেনা কপোতাক্ষ নদের দিকে। প্রবাস জীবনে কবি যাকে সবচাইতে বেশি অনুভব করেছেন। যার জন্য কেঁদেছেন অজান্তেই। কপোতাক্ষের দিকে যতো এগোচ্ছি, মনে পরছে কবির সেই কবিতার লাইন
‘সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।’
কপোতাক্ষ নদ যশোরকে পরম মততায় জড়িয়ে রেখেছে। মধুকবি ও কপোতাক্ষ যেন যশোর জেলার বাহক। নদীর দিকে এগোতেই হাতের ডানদিকে দাঁড়িয়ে থাকা কবির একটি ভাস্কর্য। যেটি দেখে বোঝা যায় কবি কতটা বিলাসী জীবন যাপন করতেন। চলে আসলাম কপোতাক্ষের তীরে। হঠাৎ মনটা শান্ত হয়ে গেল। পড়ন্ত বিকেলে নদী দেখতে বড়ই সুন্দর লাগে। তীরে বাঁধা নৌকা, নদের ওই পারে দু’একটি ঘর-বাড়ি। নদে জোয়ারের পানি আসছে। আমি চেপে বসেছি নৌকায়। নৌকা চলতে শুরু করলো বৈঠার তালে তালে। চারপাশের দৃশ্য এবং জলের শব্দে যেকারো মন দোলা দেবে। অনেক দূর চলে এসেছি, এবার আমাকে ফিরতেই হবে।
মাঝি নৌকা ঘুরালো আবারো বাংলার রূপ দেখতে দেখতে চলে আসলাম ঘাটে। নদের তীরকে আধুনিকতায় আরো দৃষ্টিনন্দিত করার চেষ্টা হয়েছে। তা আমার মন জুড়ায়নি, আমার মন জুড়িয়েছে বাংলার রূপে। মধুকবি ও কপোতাক্ষের কথা ভাবতে ভাবতে আবারো গাড়ি চলতে শুরু করল। বড় ভালো লেগেছে আঁকাবাঁকা রাস্তার দু’পাশে বিস্তীর্ণ ধান খেত, মাঝে মাঝে মাটির দুটো একটা ঘর, কখনো বা রাস্তার ধারে সারিবদ্ধ তাল গাছে বাবুইপাখির বাসা, এ যেন বাংলার প্রকৃত রূপ।
পথে চলতে চলতে আমার চিৎকার করে জীবনানন্দের কবিতা আবৃত্তি করতে ইচ্ছা হচ্ছে ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।’
লেখক: শিক্ষার্থী, জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
এসইউবি/সুপন সিকদার/হাকিম মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন