ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সাইকেলে ১৫ দিনে ৬৪ জেলায়

মেহেদী হাসান মুন্না || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১২, ৯ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাইকেলে ১৫ দিনে ৬৪ জেলায়

সাইকেল চালিয়ে সবচেয়ে কম সময়ে (১৫ দিনে) ৬৪ জেলা ভ্রমণ করে জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন চট্টগ্রামের ছেলে তাম্মাত বিল খয়ের। সাথে দেশের বিভিন্ন জেলার বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রীদের জন্য জরুরি স্যানিটারি ন্যাপকিন বাক্স রাখার বিষয়ে ভ্রমণকালে প্রচারণাও করেন তিনি।

দ্বিচক্রযানে ৬৪ জেলা ভ্রমণের তাম্মাতের এই অভিজ্ঞতা প্রথম নয়। এর আগে ২০১৭ সালের এপ্রিলে তাম্মাত ২৫ দিনে পুরো দেশ ভ্রমণ করে রেকর্ড করেছিলেন। তাম্মাত এবার নিজের সেই রেকর্ডটি ভাঙতে আবার ভ্রমণে বের হয়েছিলেন। এছাড়াও ২০১৮ সালে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া (২৪ দিন) সবচেয়ে কম সময়ে পায়ে হেঁটে রেকর্ডের মালিকও অদম্য এই বালক।

গত ২৫ অক্টোবর রাত ১২ টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে জাতীয় রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে রওনা করেন তাম্মাত। লক্ষ্যে পৌঁছে যান ৮ নভেম্বর রাত ৯ টা ২০ মিনিটে।

৬৪ জেলায় ৪০০০ হাজার কি.মি ভ্রমণ করে, দিনে গড়ে সাইকেল চালিয়েছেন ২৪০-৩০০ কি.মি। দৈনিক রাইডিং করেছে ১৪-১৮ ঘণ্টার মতো।  মাঝে মাঝে এক টানা ২৪ ঘণ্টা বা তার থেকে বেশি।  সে সব থেকে কম সময়ে সাইকেলে ৬৪ জেলা দেখার রেকর্ড করেছেন। আরও রেকর্ড করেছে কম সময়ে ১০০০ কি.মি, ২০০০ কি.মি এবং ৩০০০ কি.মি রাইডের।

তাম্মাত বিল খয়ের চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের গণিত বিষয়ে স্নাতক পড়ছেন। বাড়ি গোপালগঞ্জ হলেও জন্ম চট্টগ্রামে। বাবা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেয়ামত আলী সিকদার পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে থাকেন। ছয় ভাই এক বোনের মধ্যে তাম্মাত সবার ছোট।

পরিবার থেকে তাম্মাতকে সাইকেলে দেশ ভ্রমণের বিষয়ে যথেষ্ট সহযোগিতা দেয়া হয় বলে জানান তাম্মাত। এবার তাম্মাত সাইকেল চালিয়ে দেশ ভ্রমণ করে রেকর্ড ও সচেতনতামূলক প্রচারও করেছেন। দেশের বিভিন্ন জেলার বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রীদের জন্য জরুরি স্যানেটারি ন্যাপকিন বাক্স রাখার বিষয়ে ভ্রমণকালে তিনি প্রচারণা চালান।

গত ১ নভেম্বর ভ্রমণকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন তাম্মাত। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘পিরিয়ড প্রত্যেকটা মেয়ের জীবনের একটা সাধারণ অধ্যায়। তবে আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থার কারণে এটা অনেক মেয়ের জন্য জীবনের কালো অধ্যায়। শারীরিকভাবে মেয়েরা পিরিয়ডের সাথে স্কুল জীবনে পরিচিত হয়। স্কুলে সারা দিনের একটা বড় সময় পার করায় মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত প্যাডের প্রয়োজন হয়। কোনো কারণে অতিরিক্ত প্যাড না নিলে প্রয়োজনের সময় সমস্যায় পড়ে মেয়েরা। সামাজিকতা, আত্মসম্মান, লজ্জা এসবের কারণে নিজের পিরিয়ড নিয়ে কারো সাথে কথা বলে না অনেক মেয়ে। ফলে অসচেতনতার কারণে ডিপ্রেশনসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হয় তাকে। প্রত্যেকটা স্কুলে ইমার্জেন্সি স্যানিটারি প্যাড বাক্স স্থাপনের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন তাম্মাত। এতে করে মেয়েরা পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হতে পারবে। পিরিয়ড সম্পর্কে আরও সচেতন হতে পারবে। বিভিন্ন এলার্জি জনিত রোগ থেকে মেয়েরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারবে। সঠিকভাবে প্রচারের মাধ্যমে এক সময় দেশের ৬৪ জেলার সকল স্কুলে ইমার্জেন্সি স্যানেটারি প্যাড বাক্স স্থাপন করে জনগণকে উৎসাহিত করা যাবে।’

এ জন্য তিনি অনুদান সংগ্রহ করবেন। সমাজের বিত্তবানদের সাহায্যে করার আহবানও করেন তিনি।

ভ্রমণ শেষেই চট্টগ্রামে তাঁদের গ্রুপ প্লে-প্রো নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের শৌচাগারগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে একটি স্যানিটারি নেপকিন বাক্স দেয়ার উদ্যোগ নেবেন বলেও জানান তাম্মাত।

ভ্রমণকালে ১৫ দিন তাম্মাতকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য ছিলেন তার দুই বন্ধু।


রাবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়