ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শান্তদের কি দেখার কেউ নেই?

মীর মারুফ তাসিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৩, ১১ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শান্তদের কি দেখার কেউ নেই?

দেখতে খুব শান্ত ছেলে। নামও তাই। শান্তর পিতার নাম আবুল হোসেন। গ্রামের বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়া। কিছুদিন আগে মারা গেছেন তিনি।

তিন ভাইয়ের মধ্যে শান্ত দ্বিতীয়। কোনো বোন নেই। তার সাথে দেখা হয় কুমিল্লা রেলস্টেশনে। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসার চালানোর তাগিদে ঘর থেকে বের হয়ে কাজ খুঁজতে থাকেন শান্ত। যেকোনো কাজ করতে পারেন ছেলেটি।

‘অনেক দিন ধরে মা (আমেনা খাতুন) অসুস্থ। কিছু করতে পারেন না। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করছি আমি। বাবা মারা যাওয়ার পর পড়াশোনা বন্ধ করে কাজ খুঁজতে থাকি।’ ছোট্ট জীবনের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত ধারাবাহিকভাবে বলে যান শান্ত।

এরকম আরও অনেক শান্তদের দেখা মেলে দেশের নানা প্রান্তে। শিশুশ্রমে বাধ্য হয় এসব শিশুরা। সাধারণত চার-পাঁচ বছর থেকে কিশোর বয়সের শ্রমিকদের শিশুশ্রমিক বলে। শান্তদের কি দেখার কেউ নেউ? 

শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। শিশুদের মধ্যেই নানা সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে। আজকের শিশু আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক কবি, সাহিত্যিক, ডাক্তার এবং সাংবাদিক।

অথচ ঐ শিশুই শিক্ষা গ্রহণের পরিবর্তে অমানবিক শ্রমে নিয়োজিত। পেটের তাগিদে তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যা পরিশ্রম করতে হয়। যেসব কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হল ইট ভাঙ্গা, ওয়ার্কশপ, অন্যের বাড়িতে, হোটেল ও চায়ের দোকানে কাজ করানো হয় তাদের দিয়ে।

শিশুদের জীবনের নানা চাহিদা, প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি নিয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক শিশু সনদ। এই সনদটি পাশ করা হয় ১৯৮৯ সালে। তারপর এটি ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক আইনের অংশে পরিণত হয়। যেসব দেশ প্রথমে চুক্তিটি স্বাক্ষর করে ও অনুমোদন দেয়, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম।

সামাজিক ও রাজনৈতিক নৈরাজ্যের কারণে দেশে আজ চরম অর্থনৈতিক বৈষম্য। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে শান্তর মতো দরিদ্র শিশু। এদেশের যেমন অমানবিক পরিশ্রম করতে হচ্ছে, তেমনি তাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে ন্যায্য শ্রমমূল্য থেকেও।

শিশুশ্রম বন্ধ করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আজকের শিশুরা পরিপূর্ণ মানবিকতা পেলে আগামী দিনে সমৃদ্ধ মানুষে পরিণত হবে। শিশুশ্রম বন্ধ করতে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সমানতালে ভূমিকা রাখতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্ট্যাডিজ বিভাগ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।


মানারাত/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ