ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

করোনা: কী বলছেন গ্রামের মানুষ?

রাশিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৮, ২৩ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনা: কী বলছেন গ্রামের মানুষ?

বিশ্বে করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। চিকিৎসক, গবেষক, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সবকিছুই যেন নিরুপায়! মাত্র এক মাসের ব্যবধানে গোটা বিশ্ব স্তম্ভিত! ভেঙে পড়ছে বিশ্ব অর্থনীতি। চীন, ইতালি, জার্মানি, কানাডা, স্পেনের মতো উন্নত দেশ আজ রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে এ ভাইরাস মোকাবিলায়।

ঠিক সে মুহূর্তে কেমন আছে বাংলাদেশ। করোনা নিয়ে কী ভাবছেন এ দেশের সাধারণ মানুষ। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়! স্কুল- কলেজের বারান্দায় যাদের কখনো পৌঁছানোর সৌভাগ্য হয়নি! গ্রামের খেটে খাওয়া সে সহজ-সরল মানুষগুলো কী ভাবছেন করোনা নিয়ে। তাদের মনের সরল অভিব্যক্তিগুলো লিখে পাঠিয়েছেন বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাশিদুল ইসলাম।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। তাই বাধ্য হয়ে বাড়িতে চলে আসছি।  সন্ধ্যায় বাজারে গিয়ে দেখি এখনো জনসমাগম আছে। আছে চায়ের দোকানে আড্ডা। এক পরিচিত চাচার সাথে দেখা। চাচার নাম করিম। তিনি একজন কৃষক। বয়স ৬০ পেরিয়েছে অনেক আগেই। অনেকটা আগ্রহ নিয়ে করিম চাচা আমাকে জিজ্ঞাসা করল। বাবা, আমাগো দেশে বেলে কী রোগ আইছে, যাইবো কবে?

আমি তাকে বললাম, জ্বী চাচা। করোনাভাইরাস। এটার কোনো প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই সচেতনাতাই একমাত্র উপায়। নিয়মিত আমাদের হাত, মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সকল নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। চাচা বললেন, ‘নামাজ পড় বাবা, এসব কিছু হবে না।’ ধর্মের দোহাই দিয়ে চাচা কথাটা এড়িয়ে গেল।

পরের দিন বাজারে যাচ্ছি রিকশাওয়ালা রফিক মামাকে বললাম, মামা দেশে করোনাভাইরাসে একজন মারা গেছে, শুনছেন? রিকশাওয়ালা রফিক মামা; না।

আপনি এ সম্পর্কে কিছু জানেন না? রিকশাওয়ালা মামা- তেমন কিছু জানি না মামা। শুনছি, এটা হলে নাকি মারা যায় মানুষ। মুখোশ পরে থাকতে হয় মুখে।

সবসময় হাত-মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। সর্দি-কাশি ডাক্তার দেখাতে হবে। এগুলো জানেন? উত্তরে উনি বললেন, মামা আমি রিকশা চালাইয়া সংসার চালাই। সারাদিন বাইরে থাকি। হাত ধোয়ার সময় কই। আমাদের তো পেটের চিন্তা করতে হয়।

তার এ সরল অভিব্যক্তি শুনে বুঝতে পারলাম, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, তারা করোনা নিয়ে কতটা সচেতন!

এ তো গেল, গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের কথা। গ্রামের এক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন, করোনা একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি। আমাদের সচেতনতাই পারে একমাত্র এটা থেকে মুক্তি। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়ার জন্য বলে দিয়েছি। বিদ্যালয় এখন বন্ধ আছে। আমি চাই এলাকাবাসীও এ ব্যাপারে সচেতন থাকবে।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর কথা বললাম গ্রামের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমামের সঙ্গে। করোনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আল্লাহর দেওয়া গজব। একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালা পারে এ গজব থেকে আমাদেরকে মুক্তি দিতে। তাই মুসল্লিদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুন। সচেতন থাকুন। কিছুই হবে না আপনাদের।

গ্রামের বাজারগুলোতে দেখা যায়, অনেক প্রবাসী ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ সরকারি নির্দেশনায় তাদের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা। অথচ তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন! কে শুনে কার কথা!

এ প্রসঙ্গে এক প্রবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি দেশে আসলাম এক সপ্তাহ হলো। পুরোপুরি সুস্থ আছি। আমার কোনো জ্বর, সর্দি, কাশি নেই।

সরকার বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের কথা বললেও আপনি কেন  দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন?

এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখেন অনেক দিন পর দেশে আসছি। তাই বাড়ি, পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের দেখার জন্য বের হইছিলাম। কাল থেকে সব নিয়ম-কানুন মেনে চলব।

এবার গ্রামের কিছু গতানুগতিক চিত্রের কথা বলি। অনেকেই দেখলাম সর্দি, জ্বর নিয়ে একই পুকুরে গোসল করছেন। যেটা গ্রাম বাংলায় অহরহ। তবে, প্রশ্ন হলো এদের মধ্যে কেউ যদি করোনায় সংক্রমিত হয়, তাহলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? অনেককেই দেখলাম জ্বর, কাশি নিয়ে, পুকুরে নামছেন।

অনেকে আবার স্বপ্নে দেখা সেই পীরের গুজবের কাহিনী শুনে থানকুনি পাতা খাচ্ছেন। সবাইকে খেতে বলছেন তারা।

ইতোমধ্যে করোনা প্রতিরোধে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। প্রবাসীদের দেশে ফিরলে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। আইন আছে, তবে তা সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না। আর যদি না হয়, তাহলে কোনো পথে এগোচ্ছে আমাদের দেশ?

লেখক: শিক্ষার্থী, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগ,    

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।

 

জাককানইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়