তিনি হোক সবার অনুকরণীয়
পিংক ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম
করোনা মানুষকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। দেখিয়ে দিয়েছে বিপদে পড়লে ক্ষেত্র বিশেষে কেউ কারো নয়। তবে যারা মানবপ্রেমিক, তাদের কথা একেবারে ভিন্ন। প্রকৃত মানবসেবীরা কখনো বিপদের কাছে মাথা নত করে না। বরং আসন্ন বিপদের আশঙ্কাকে তুচ্ছ মনে করে জয় করার নিমিত্তে নির্ভয়ে কাজ করে যায়। মাহমুদুর রহমান স্যার তাদেরই একজন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং একই সাথে সামাজিক সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান রোভার স্কাউট লিডার। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় উপ-কমিশনার (গবেষণা ও মূল্যায়ন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মাহমুদুর রহমান নিজ এলাকা গোপালগঞ্জে গড়ে তুলেছেন ওল্ড সাপোর্ট সেন্টার। বর্তমানে তিনি এটার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ছাত্রাবস্থা থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। তখন থেকেই তিনি সবার বিপদে-আপদে সবসময় এগিয়ে এসেছিলেন নিঃস্বার্থভাবে। সময়ের বিবর্তনেও তাঁর সেই মানসিকতার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর বর্তমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দিকে হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়, ছাত্র-ছাত্রীরাও ক্যাম্পাস ছেড়ে বাসায় চলে যায়, তখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল কার্যক্রম সীমিত আকারে চলছিল। এমতাবস্থায় মাহমুদুর রহমান স্যার একাই মাঠে নেমে পড়েন। ছুটে যান রেজিস্ট্রার ভবন, বিভিন্ন হল অফিসসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে। পরিচিত-অপরিচিত যার যেখানে সাক্ষাৎ পান সবাইকে বুঝাতে চেষ্টা করেছিলেন করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে কী করতে হবে আর কী করতে হবে না। সেই সাথে সবার মাঝে বিতরণ করেন করোনাভাইরাস সম্পর্কিত লিফলেট। শুধু তাই নয়, নোটিশ বোর্ডে সচেতনতামূলক লিফলেটও লাগাতে কুণ্ঠাবোধ করেননি, যা সচারাচর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই করেন না।
দেশের সংকটময় মুহূর্তে তাঁর এ ক্ষুদ্র প্রয়াস ছিল খুবই প্রশংসনীয়। দেশের সবাই যদি নিজ নিজ উদ্যোগে তার মতো এমন মহতী কাজে এগিয়ে আসতেন নিঃসন্দেহে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করা আমাদের জন্য আরও সহজ হতো। কিন্তু গুটি কয়েকজন এগিয়ে এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেটা প্রয়োজনের তুলনায় নেহাতই অনেক কম। মাহমুদুর রহমান স্যার চাইলেই হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেটা করেননি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি কাজগুলো করেছেন।
করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে আমাদের দেশের জনগণ নিয়ম মানার ব্যাপারে ছিল খুবই উদাসীন। এই উদাসীন জনসাধারণকে সচেতন করতে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করেছেন।
করোনা সংক্রমণ রোধে বাংলাদেশ সরকার যখন সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানান, তখন অন্য অনেকের মতো তিনিও ঘরেই অবস্থান নেন। তবুও নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এক চুল পরিমাণও সরে আসেননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে সচেতনতার বার্তা প্রচার করেছেন। এখনও মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তাঁর এমন কার্মকাণ্ডে অনেকেই উপকৃত হয়েছেন। বিশেষ করে আমরা শিক্ষার্থীরা স্যারের কাছ থেকে নতুন করে অনেক কিছু শিখেছি, যা আগামী দিনে আমাদের পাথেয় হবে বলেই মনে করি।
করোনাকালে বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সামাজিক, মানবিক ও সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদান করেছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা ঠিক রাখতে তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগও রেখেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, অভাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যও তিনি কাজ করছেন। মাহমুদুর রহমান স্যারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দরিদ্র মেধাবি শিক্ষার্থীদের জন্য একাধিক ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখান থেকে প্রতিবছর ছাত্রদের বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের পক্ষ থেকে তিনি একাধিক অভাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে এককালীন অর্থ সহায়তা প্রদান করেছেন।
বিপদে বন্ধুর পরিচয়। কথাটি নিছক মনে হলেও এটাই চিরন্তন সত্য। যদিও আজকের দিনে বন্ধু চেনাটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। তবুও খাঁটি বন্ধু প্রত্যেক মানুষের জীবনেই প্রয়োজন আছে। মহান দার্শনিক এরিস্টটল বলেছেন, দুর্ভাগা তারাই, যাদের প্রকৃত বন্ধু নেই। আবার তিনিই বলেছেন, বন্ধু হলো এক আত্মার দুটি শরীর। মাহমুদুর রহমান স্যার যেন আজ এরিস্টটলের উক্তির প্রতিচ্ছবি।
বর্তমানে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও কঠিন সময় পার করছে। দেশের এই আপদকালীন সময়ে ধর্ম, বর্ণ, দল ও মত নির্বিশেষে সবার এগিয়ে আসা উচিৎ। সবার একটি কথা মনে রাখা উচিৎ, দেশ না বাঁচলে নিজের অস্তিত্বও থাকবে না। দেশ বাঁচলে তবে বাঁচবো আমরা। নিজের জন্য হলেও সরকার আরোপিত সব বিধি-নিষেধ মেনে চলা উচিৎ।
সম্ভব হলে অন্তত ক্ষুদ্র পরিসরে মানবসেবায় যেন এগিয়ে আসি। আসুন, সবাই প্রতিজ্ঞা করি, দেশের স্বার্থে নিজের প্রয়োজনে সরকার আরোপিত সব নিয়ম-কানুন মেনে চলি, খুব সহজেই বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করি।
লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাবি/মাহি
আরো পড়ুন