ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শিক্ষাজীবন: শেষ হইয়াও হইলো না শেষ 

তানভীর আহম্মেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৭, ৯ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
শিক্ষাজীবন: শেষ হইয়াও হইলো না শেষ 

জ্ঞান অর্জনের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষাজীবনের পাঠ চুকিয়ে ক্যাম্পাসের সোনালী অতীতকে বিদায় দেওয়ার পূর্বে র‌্যাগ ডে’র আয়োজন করা হয়। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। করোনায় অনলাইনে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শেষ করা সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) এমন কিছু শিক্ষার্থীর অনুভূতি তুলে ধরেছেন তানভীর আহম্মেদ।

রোকনুজ্জামান মনি, ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ
শিক্ষাজীবনের শেষ অধ্যায়টা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিবাহিত করি। একটা বিস্তর সময় এখানে বন্ধু-বান্ধব, হৈ-হুল্লোড়,  ক্লাস-পরীক্ষা, শিক্ষকের বকুনি, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রেম ভালোবাসার খুনসুটি এগুলো করতেই আমাদের সময় কেটে যায়। তাই এখানে যে ভালোবাসা, আবেগ আর অনুভূতিগুলো জমা হয়, তা হয়তো অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা যায়না। কিন্তু, যখন নির্দিষ্ট একটা সময় আসে তখন সবকিছু বিসর্জন দিয়ে ক্যাম্পাসকে বিদায় জানাতে হয়। এই বিদায়টা কত কষ্টের সেটা বলে বোঝানো যায় না। তারপরও ক্যাম্পাসে শেষ সময়টা আনন্দ করে সবার সঙ্গে কাটিয়ে দিতে পারলে আলাদা একটা ভালোলাগা থাকে।

র্যাগ ডে'র স্মৃতি এবং উচ্ছ্বাস নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার মুহুর্তগুলো অসাধারণ হয়। কিন্তু, করোনা ভাইরাসের কারণে এই সোনালী সময়গুলো পাওয়া হলো না। ক্যাম্পাস জীবনের শেষের দিকে এসে সময়গুলো এমন হয়ে যাবে, মেনে নেয়া সত্যিই কষ্টের।

লাকি আক্তার, সমাজ বিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগ
বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছর যেন চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেল। শেষ সেমিস্টারতো আমরা পেলামই না। নানান জল্পনা কল্পনার শেষে যখন অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ঘোষণা এলো, সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছিল। চিরচেনা ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাসে হেঁটে বেড়ানো, ফুচকা, বাদামতলা, ঝালমুড়ি, শিক্ষার্থীদের আনাগোনা, ক্লাসরুমে প্রিয় শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলা কিংবা দেখা হবে না ভাবতেই চোখের কোণে জল জমা হয়ে গিয়েছিল।

কখনো মনে হতো যেন স্বপ্ন দেখছি। এই যে অনলাইনে পরীক্ষা কিংবা অ্যাসাইনমেন্ট এসব যেন চোখ খুললেই মিথ্যা হয়ে যাবে। আবার দৌঁড়ে বেড়াবো পুরো ক্যাম্পাস। র্যাগ ডে'র সাদা গেঞ্জি নিয়ে তো আমাদের মধ্যে তুমুল কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। একেক জনের একেক রংয়ের গেঞ্জি প্রিয়। সব বিতর্কের শেষে বিপুল ভোটে সাদা রঙের গেঞ্জি জয়লাভ করলো। কিন্তু র্যাগ ডে শুধু আমাদের আলাপেই থমকে গেলো। কিছুই হলো না আর। অনেক অভিমান, বুকফাটা হাহাকার, আফসোস নিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করলাম। কিন্তু অনেক স্মৃতি নিয়েই শেষ হলো আমাদের চার বছরের ক্যাম্পাস জীবন।

মুশফিকুর রহমান শাওন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কতটা মধুর তা বলা বাহুল্য। জীবনের সেরা মুহুর্ত, স্বাদগুলো এখানেই পাওয়া যায়। কিন্তু, এই আনন্দ ঠিক ততটাই বিষাদে পরিণত হয় যখন ক্যাম্পাসকে বিদায় জানানোর সময় হয়ে যায়। প্রতিটা ক্ষণ মনে হয়, কি যেন একটা নেই। কিছু একটা যেন পেছনে ফেলে চলে আসলাম। প্রতিটা জিনিসেরই শুরু এবং শেষ থাকে। সেক্ষেত্রে হাজারো কষ্ট বুকে চেপেও প্রকৃতির নিয়মটা মেনে নিতে হয়। তবুও প্রত্যেকের স্বপ্ন থাকে সুন্দর একটা শেষের। করোনাভাইরাস সেই সুন্দরটা আর হতে দিলো না।

র্যাগ ডে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। শেষ সময়টা অনেক সুন্দর করে কাটাবো। সবটাই এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। বিষাদে ভরা মন নিয়েই ক্যাম্পাস লাইফটা শেষ করলাম। এটা খুবই দুঃখের। ক্যাম্পাস ছেড়ে আসায় খুব মিস করব সবাইকে। মিস করব পিঠার দোকানের লম্বা সিরিয়ালে খাবার কেনা, ভালোবাসার ক্লাসরুম, ক্যাফেটেরিয়া, লাইব্রেরি, খেলার মাঠ, বাদাম তলা। নিজ ক্যাম্পাস গণ বিশ্ববিদ্যালয়কে খুব মিস করবো।

নিশাত মীম, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ
ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। ভর্তি হওয়ার পর থেকে বন্ধু-বান্ধব, হৈ-চৈ, খুনসুটি  ক্লাস, পরীক্ষা এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে ফেলেছি।সময়গুলো খুব দ্রুত চলে গেছে। এই সুন্দর সময়গুলো আমরা আর পাবোনা। এতকিছুর পরও আমাদের কিছু আক্ষেপ থেকেই গেল।

সব সময় দেখেছি বড় ভাইয়া-আপুরা র্যাগ ডে করেছে। যেটা এই করোনাভাইরাস এর জন্য আমরা করতে পারলাম না। প্রিয় ক্যাম্পাস, প্রিয় শিক্ষক, প্রাণের বন্ধুদের সঙ্গে এই সুন্দর মুহূর্তগুলো কাটানো হলো না। কিছু স্মৃতি কড়া নাড়বে সবসময় আমাদের মনে। আর আক্ষেপটা থেকেই যাবে। আমরা এইভাবে ক্যাম্পাস থেকে চলে আসবো কখনো কেউ ভাবিনি। শেষটা আরও সুন্দর হতে পারতো।

হৃদয় সরকার, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ
যেকোনো জিনিসের শেষটা অনেক গুরুত্ববহ। কেননা শুরুর দিকের ভুল-ত্রুটিগুলো শেষ হয় শেষের পাতায়। স্নাতক তো শেষ হলো। কিন্তু, আফসোস! সেই কাঙ্খিত শেষটা পাওয়া হলো না। নেওয়া হলো না অশ্রুসিক্ত, নির্মল, আবেগঘন মেলবন্ধনের পবিত্র ভালোবাসার স্বাদ। পাওয়া হলো না বিদায় বেলায় সব ঘনিষ্ঠ ভালোবাসার শেষ স্মৃতি। দেখা হলো না চোখের জলের প্রতিটি ফোঁটায় লুকনো চাপা ভালোবাসার আর্তনাদ। শোনা হলো না শিক্ষাগুরুদের মুখে আশীর্বাদের বাণী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ কয়েকটা দিন এভাবে যাবে আমরা কেউ ভাবিনি। শুধু আমরা কেন? কোনো শিক্ষার্থীই এমন ভাববে না। র্যাগ ডে নিয়ে আলাদা এক ধরণের উচ্ছ্বাস সকল শিক্ষার্থীর মনেই থাকে। আমাদেরও কমতি ছিল না। কে জানতো বিশ্বব্যাপী এক মহামারি সব ধূলিস্যাৎ করে দেবে। এক বুক কষ্ট নিয়ে ভার্সিটি ত্যাগ করতে হচ্ছে আমাদের। একটি কথাই মনে পড়ছে ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ’।

 

গবি/মাহফুজ/মাহি

রাইজিংবিডি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়