ঘুরে আসুন মহিষারের দিগম্বরী দিঘী
মো. জামিল || রাইজিংবিডি.কম
শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক মহিষারের দিগম্বরী দিঘী। এই জেলার ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। মুঘল আমলের স্বাধীন ১২ জন ভূঁইয়ার একজন বিক্রমপুর পরগনার জমিদার রাজা চাঁদ রায় দিগম্বরী সন্ন্যাসীর অনুরোধে ১০ একর জমির উপর এই দিঘী খনন করা হয়।
ছয়শ’ বছরের পুরনো মহিষারের দিগম্বরীর সন্যাসীবাড়ি ও দিগম্বরী দিঘীটি বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান ও বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ২৩ একর ৮৫ শতাংশ জমির ওপর রয়েছে দিগম্বরীর পৈতৃক বাড়িসহ মেলা চত্বর, জোড়া পুকুর, মনসা মন্দির, কালী মন্দির, চত্বর ও লক্ষ্মীন্দরের ঘরসহ অসংখ্য স্থাপনা। দিগম্বরীর দিঘীটি শরীয়তপুরের অন্যতম পর্যটন এলাকা।
স্থানীয়দের মতে, যুগ যুগ ধরে এখানে সপ্তাহে দু’দিন শনি ও মঙ্গলবার হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার অনুষ্ঠান হয়। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ ও পূজা পালন করা হয়। হাজারো দর্শনার্থী ও ভক্তরা উৎসব দেখতে ভিড় জমান এখানে। আগমন ঘটে অতিথি পাখির। ভক্তদের বিশ্বাস, দিঘীর জলে স্নান করলে সব পাপ ও রোগমুক্তি ঘটে। মহিষারের মেলাই হলো শরীয়তপুরের সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলা।
দিগম্বরী সেবা সংসদের সূত্রে জানা যায়, ১৯৮২ সালে অর্ধশতাধিক সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে পানি নিঃষ্কাশন করে ৬০০ বছরের পুরনো দিঘীটি পুনরায় র্খনন করা হয়। এসময়ে বেশকিছু দুর্লভ ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায় সেখানে। এর মধ্যে রয়েছে ৪২ কেজি ওজনের একটি কষ্টি পাথরের মূর্তি যা বর্তমানে জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এই স্থানটি সরকারি ও বেসরকারিভাবে সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তবে পুরোপুরি সংরক্ষিত হলে এটি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা এবং পর্যটকদের আদর্শ স্থান হিসেবে জনপ্রিয়তা পাবে।
মহিষার গ্রামে এটি সবচেয়ে বড় দিঘী। অতিপ্রাচীন এই দিঘীর রয়েছে নানা রহস্যঘেরা ইতিহাস। জনশ্রুতি আছে, কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা মৃত ব্যক্তির নামে চেহলাম অনুষ্ঠান করলে যে থালা বাসন ইত্যাদির দরকার হতো তার জন্য এই দীঘির পাড়ে এসে দিঘীকে নির্দেশ করে বলে গেলেই নাকি সকাল বেলা এসব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাড়ে এসে তৈরি থাকত।
বড় দিঘীর পশ্চিম পাড়ের রয়েছে আরেক ইতিহাস। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে কতিপয় বীর যোদ্ধা ডামুড্ডাতে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে শহীদ হন। তাদেরকে এই বড় দীঘির পাড়েই সমাহিত করা হয়। তাই আজো ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ ও ১৬ই ডিসেম্বরে এলাকার জনসাধারণ ফুল দিয়ে শহীদদের স্মরণে সমবেত হন ওই দিঘীর পশ্চিম পাড়ে।
যেভাবে যাবেন: ঢাকার গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত যেতে হবে। পদ্মা নদী পাড় হয়ে শরীয়তপুর। শরীয়তপুর শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে এই দিঘী।
লেখক: শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
হাবিপ্রবি/মাহফুজ/মাহি
রাইজিংবিডি
আরো পড়ুন