ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘বিশেষ দৃষ্টিতে দেখতে হবে শিশু-কিশোরদের’

হাবিবুর রহমান মুন্না || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ১৩ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘বিশেষ দৃষ্টিতে দেখতে হবে শিশু-কিশোরদের’

মানুষ সামাজিক জীব। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি উন্নয়নের অন্তরায়। এখানে শিশু-কিশোরদের আবহাওয়া অনুকূলে নয়। আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মকে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে অক্ষম। 

শিশু মৃত্যু, শিশুশ্রম, শিশু বৈষম্য, বাল্য বিবাহ, যৌতুক প্রথা, শিশু নির্যাতন ও যৌন হয়রানি ইত্যাদি সমস্যা পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না এখনো। দেশের উন্নয়নে এসব সমস্যা সমাধানের কোনো বিকল্প নেই। সুস্থ, সবল ও মেধাবী জাতি গঠনে শিশুদের অধিকার রক্ষা করা জরুরি।

দেশে শিশুর সংখ্যা ৬ কোটিরও বেশি, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ। কিশোর-কিশোরী রয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙ্গন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, পাহাড় ধস ইত্যাদির ফলে গ্রামের মানুষ তল্পিতল্পাসহ পাড়ি জমায় শহরে। এসব দুর্যোগে প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুমৃত্যুর হার বেশি। আশ্রয়হীন এসব মানব সন্তানের স্থান হয় শহরের বস্তিগুলোতে, যেখানে তাদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর কোনো সুযোগ নেই। বেশিরভাগ মা-বাবা অশিক্ষিত হওয়ায় পরিবার পরিকল্পনা সস্পর্কে তাদের যথেষ্ট ধারণা নেই।

ফলে সন্তান জন্মদান করে পিতা-মাতারা সন্তানদের চাহিদা মেটাতে না পেরে, ঠেলে দেয় ভিক্ষা করতে। নয়ত বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে পরিবারের আয়ে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহ দেয়। এসব পরিবারেই জন্ম নেয় মূলত খর্বকায় এবং প্রতিবন্ধী সন্তান। অভাব সইতে না পেরে সন্তান রেখে আসে নদীর ধারে, নর্দমায়, ঘন বসতিতে কিংবা এতিমখানায়। 

ইউনিসেফের তথ্যমতে, ‘শিশুশ্রমে জড়িত ১৭ লক্ষ শিশু বাংলাদেশে বসবাস করছে। প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জনের বয়স ৬-১১ বছরের মধ্যে, যার বেশির ভাগই ছেলে শিশু।’

বাল্যবিবাহ যেকোনো দেশের জন্যই অমঙ্গল। নারীদের আর্থিক বোঝা মনে করা হয় এখনো। বিশেষ করে নিম্ন-মধ্যবিত্ত, দরিদ্র এবং বস্তিতে বসবাসকারীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। কিন্তু পরিবারের একজন নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে একজন পুরুষের সমান যোগ্যতা রয়েছে। যে বয়সে তাদের কিশোরী বলে সম্বোধন করা উচিত সেই বয়েসে তারা নারী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। 

মেয়ে শিশু যৌবনপ্রাপ্ত হলেই পিতামাতা তাদের সতীত্ব রক্ষায় উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। যৌন নির্যাতন যেমন- ধর্ষণ, ইভ-টিজিং ইত্যাদি অভিশাপের ভয় কাজ করে তাদের মধ্যে। এসেবর সঙ্গে অভাব থাকায় বাল্যকলেই মেয়েদের বিবাহ দেয়া হয়। এ কারণেই বাল্যবিবাহ ঠেকাতে বেগ পেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষের।

অল্প বয়সে বিয়ের ফলে একজন কিশোরী মা, যে কিনা নিজের যত্ন ঠিকমতো নিতে পারে না তাকে আরেকটি জীবনের দায়িত্ব বহন করতে হয়। যার মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা, মাতৃত্ব, শিশু পুষ্টি, শিশু লালন-পালন ইত্যাদি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান নেই। কিশোরী মেয়েদের পুষ্টিহীনতার পেছনে দু’টি কারণ রয়েছে- পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের অভাব এবং অল্প বয়সে গর্ভধারণ।

শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে কিশোরীরা সন্তান প্রসবের মতো চাপ সহ্য করতে না পেরে প্রসবকালেই মৃতুবরণ করে, নয়ত মৃত্যু হয় শিশুর। শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার পূর্বের চেয়ে অনেক কমেছে আমাদের দেশে। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক। 

উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে শিশুমৃত্যুর হার কমানো এবং শিশু-কিশোরদের শারীরিক সুস্থতায় কার্যকরি সিদ্ধান্ত নেয়া একান্ত প্রয়োজন। ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী, ‘২০১৯ সালে প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ৪০ জন। যা ১৯৯০ সালে প্রতি হাজারে ১৫১ জন ছিল। ২০১৯ সালে খর্বকায় শিশু জন্মের হার ২৮ শতাংশ, যা ১৯৯০ সালে ছিল ৭২ শতাংশ।’

 

লেখক: শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

হাবিপ্রবি/মাহফুজ/মাহি

রাইজিংবিডি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়