ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

স্টিভ জবস: হার না মানা জিনিয়াস

রাফায়েতুল ইসলাম রুপম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৭, ১৩ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
স্টিভ জবস: হার না মানা জিনিয়াস

স্টিভ জবস। পুরো নাম স্টিভেন পল জবস। প্রযুক্তির জগতে বিখ্যাত নামের একটি। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমরা সবাই তাকে চিনি। যদিও প্রকৃতপক্ষে অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনজন। প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্টিভ জবস ও স্টিভ ওজনিয়াক বেশি পরিচিত হলেও শুরুর দিকে আরও একজন ছিলেন। তিনি হচ্ছেন রোনাল্ড ওয়েন, যিনি অ্যাপলের প্রথম লোগোটি এঁকেছিলেন। কিন্তু ঋণের দায়ে ওয়েন তার ১০ শতাংশ শেয়ার মাত্র ৮০০ ডলারে বিক্রি করে দেন, যার বর্তমান মূল্য ৩৫ বিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশি।

স্টিভ জবস মূলত ছিলেন একজন উদ্ভাবক, ডিজাইনার এবং উদ্যোক্তা। প্রযুক্তিতে তার অবদানের কথা কারো অজানা নয়। ম্যাকবুক এয়ার, আইপড এবং আইফোনের মতো আলোড়ন তোলা সব পণ্য নিয়ে এসে প্রযুক্তি জগতে বিপ্লব সৃষ্টি করেন এই টেক আইকন। তিনি কাজ দিয়ে এক নতুন বিশ্ব সৃষ্টি করে গেছেন। তার জীবন ছিল পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার এক বৈপ্লবিক যাত্রা। তিনি বলেছেন, ‘যারা পাগলের মতো মনে করেন, তারা পৃথিবীকে বদলে দিতে পারবেন, তারাই পৃথিবী পাল্টায়।’ পৃথিবীর চেহারা পাল্টে দেওয়ার এই যাত্রায় তাকে যেসব ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সেটা আসলে সিনেমার গল্পকেও হাড় মানায়।

তার জন্মের সময় তার মা জোয়ান সিবল ছিলেন অবিবাহিতা। কলেজ শিক্ষার্থী। তার প্রেমিক (পরবর্তীতে স্বামী) আব্দুল ফিত্তাহ জান্দালি (জবসের বাবা) সেই সন্তানকে লালন পালনে অস্বীকার করায় জোয়ানের একার পক্ষে সন্তান পালনে ভীতি কাজ করছিল। ফলে সে জবসকে দত্তক দিয়ে দেয় পল ও ক্লারা নামে এক গরীব নবদম্পতিকে। তবে শর্ত দিয়ে দেন জবসকে ভালোভাবে পড়াশুনা করাতে হবে।

ক্লারা ছিলেন একজন হিসাবরক্ষক এবং সাবেক কোস্টগার্ড পল তখন একজন মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। পল ও ক্লারা দম্পতি তখন জবসকে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউ এলাকায় বসবাস শুরু করেন। তারা সচ্ছল ছিলেন না, তবে জবসের সব আবদার মেটাতেন। তারা জবসকে স্টানফোর্ড নামক অনেক দামি একটি কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন কিন্তু কলেজের টিউশন ফি দিতে যেয়ে দেখা যেতো সব টাকা জবসের পড়াশুনার পেছনেই খরচ হয়ে যাচ্ছে। এতে জবস অনেক কষ্ট পান এবং কলেজ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

জবসের কোনো থাকার জায়গা ছিল না। তিনি তার বন্ধুর রুম শেয়ার করে সেই রুমের মেঝেতে থাকতেন। ড্রিংকস এর বোতল বিক্রি করে যা কিছু পেতেন তাই দিয়ে খাবার কিনে খেতেন। এমনকি সপ্তাহের প্রতি রবিবার দীর্ঘ ১১ কিলোমিটার হেঁটে দূরের এক গির্জায় যেতেন, একদিন ভালো খাবার খাওয়ার আশায়।

এরপর জবস কিছু টাকা জমিয়ে তার এক স্কুলের বন্ধু ওজনিয়াককে (ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ছাত্র ছিলেন) সঙ্গে নিয়ে তার বাবার গ্যারেজে বসেই বানিয়ে ফেলেন অপারেটিং সিস্টেম ‘ম্যাক ইন টোস’। কিন্তু সেটি ফ্লপ হয় মার্কেটে। এর কিছু দিন পরই ১৯৭৬ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপল কোম্পানি। তার কঠোর পরিশ্রম ও মেধায় মাত্র ১০ বছরেই সেটি ৪ হাজার লোকের চাকরি দিতে সক্ষম হয়।

তবে সেই সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৮৫ সালে অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণে নিজের তৈরি কোম্পানি থেকেই পদচ্যুত হন জবস। রাগে-ক্ষোভে তিনি অ্যাপল থেকে বের হয়ে যান। ‘পিক্সার’ নামে অ্যানিমেশন স্টুডিও ও NEXT Inc. নামে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার কোম্পানি শুরু করেন। বর্তমানে পিক্সার বিশ্বের সেরা এনিমেশন কোম্পানি। এর প্রায় ১০ বছর পর NEXT Inc. এর সফটওয়্যার বিক্রয়কালে কিছুটা যান্ত্রিক জটিলতা দেখা দিলে অ্যাপল NEXT Inc কে ৪২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয় এবং জবসকে সসস্মানে পুনরায় গ্রহণ করে। তার পদ হয় আইসিইও (Informal Adviser to the CEO)। অতঃপর ১৯৯৭ সালে জবস সিইও হিসেবে অ্যাপলে আবার অধিষ্ঠিত হন। যেভাবে তিনি ৭০ এর দশকে অ্যাপলকে  সফলতার পথে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেভাবেই ১৯৯০ এর দশকে অ্যাপলের গৌরব পুনরুদ্ধার করেন।

২০০৩ সালে অগ্নাশয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ার পর ২০১১ সালে দীর্ঘ ৮ বছরের লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে জবস মৃত্যুবরণ করেন। জবস মূলত ‘হাফ-সিরিয়ান’ ছিলেন। তার বাবা জান্দালি ছিলেন সিরিয়ান নাগরিক। এছাড়াও আরেক চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে জবস ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। কলেজ ছাড়ার পর জবস ভারত ভ্রমণ করেন এবং বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। জবস তার গাড়িতে কখনোই নম্বর প্লেট লাগাতেন না। কারণ ক্যালিফোর্নিয়ার ট্রাফিক আইন অনুযায়ী সেখানে একটি নতুন গাড়ি নম্বর প্লেট ছাড়া ছয় মাস চালানো যায়। আর জবস ছয় মাসের অধিক কোনো গাড়িই ব্যবহার করতেন না।

২০১১ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, জবসের আনুমানিক সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু পিক্সারকে ডিজনি ওর্য়াল্ডের কাছে বিক্রি না করলে সেটি হতো ৩ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার যা সমস্ত বিলিয়নারদের রেকর্ড ভেঙে দিতো। তার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বেশ কয়েকটি সিনেমাও তৈরি হয়েছে ইতোমধ্যে। যার মধ্যে ২০১৩ সালে নির্মিত ও অতি সমালোচিত ‘জবস’। ২০১৫ সালে নির্মিত হয় ড্যানি বোয়েল পরিচালিত ‘স্টিভ জবস’।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
খুবি/মাহফুজ/মাহি

রাইজিংবিডি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়