ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘শিক্ষা ও জীবন দুটোই বাঁচাতে হবে’

আরিফুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১২, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:৪৪, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
‘শিক্ষা ও জীবন দুটোই বাঁচাতে হবে’

শুধু বাংলাদেশের নয়, করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাকার্যক্রমও স্থবির। এমন পরিস্থিতিকে ‘গ্লোবাল এডুকেশন এমার্জেন্সি’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা। 

করোনায় ধারাবাহিকভাবে আক্রান্ত হয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো। সংক্রমণের হার সর্বত্র সমান্তরাল রেখায় চলেনি। ইউরোপ ও আমেরিকায় যখন ঊর্ধ্বমুখী; এশিয়া ও আফ্রিকায় তখনও সংক্রমণের হার বাড়েনি।

আবার এশিয়া ও আফ্রিকায় যখন প্রকোপ বেড়েছে; ইউরোপীয় দেশগুলোতে তখন কিছুটা স্থিতিশীল। ধকল কেটে সামাল দিয়ে উঠছে তারা। স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় অনেক দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে নিরাপত্তার জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধা রেখেই তা করা হচ্ছে।

স্কটল্যান্ডের কথাই ধরা যাক। স্কটল্যান্ডের পরিস্থিতি মোটামুটি স্থিতিশীল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে বাড়তি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন। জোর দেওয়া হয়েছে ‘অন-ডিমান্ড টেস্টিংয়ে’। উপসর্গ না থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময়ে বিনামূল্যে পরীক্ষা করাতে পারবেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও তাদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছে। জীবনের সুরক্ষার ব্যাপারে খেয়াল রেখে তারা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের দিকে নজর দিচ্ছেন।

বাংলাদেশের চিত্রপট ভিন্ন। সংক্রমণ এখনও ঊর্ধ্বমুখী। এ সময়কেই সংক্রমণের ‘পিক টাইম’ ধরা হয়। তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশ হওয়ায় জীবিকা নির্বাহে অধিকাংশ জনগোষ্ঠীকেই কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে জনসংখ্যার আধিক্য। অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অনেকের জন্য আবার মানা সম্ভব হচ্ছে না।

জনস্বাস্থ্য রয়েছে উচ্চ ঝুঁকিতে। এ পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের উদাহরণ টেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া কাম্য নয়। বাংলাদেশ থেকে ওইসব দেশের চিত্র ভিন্ন। সেসব দেশে জনসংখ্যার আধিক্য নেই। মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মানার দুঃসাহস নেই। তাদের স্বাস্থ্যসেবার হালহকিকতও ভিন্ন।

নজর দিতে হবে ইসরাইলের দিকে । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া প্রথম দেশ ইসরাইল। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে বিপাকে পড়েছেন। সংক্রমণের হার কম থাকায় খুলে দেওয়া হয় সে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পুনরায় বন্ধ করতে বাধ্য হয়। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায় চক্রবৃদ্ধি হারে।

তারা এটিকে বড় ব্যর্থতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ইসরাইলের মহামারি বিষয়ক জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভাপতি ও ইয়েজমান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের প্রফেসর ‘এলি ওয়াক্সম্যান’ অন্যান্য দেশকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘They definitely should not do what we have done, It was a major failure’।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে দীর্ঘ সময় বিলম্ব ঘটলে এর ক্ষতিকর দিকও অবশ্য রয়েছে। এ দেশের অনেক শিশু-কিশোরই দু‘বেলা আহার করে উদরপূর্তি করার স্বাদ মেটে না। ‘ফ্রী স্কুল মিল’ থেকে বঞ্চিত হয়ে কষ্ট পেতে হয় তাদের। অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হয়। নিঃসঙ্গতায় মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ছে। এছাড়া দীর্ঘ বিরতির কারণে শিক্ষাকার্যক্রমে অনভ্যস্ত হয়ে উঠছেন শিক্ষার্থীরা।

জীবিকা নির্বাহে কাজে নেমে পড়েছে অনেকে। পরিবারের হাল ধরেছেন। অপকর্মে জড়িয়ে বিপথগামী হচ্ছে। দীর্ঘ সময় পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে যেতে পারে। পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে অনীহা প্রকাশ করতে পারে তারা। দেখা যাবে, যে কাজে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে সেটিই চালিয়ে যেতে থাকবে।

পৃথিবীর অনেক যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে এমন নজির রয়েছে। দীর্ঘ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই পুনরায় শ্রেণিকক্ষে বসেনি। কোনো পেশা বেছে নিয়েছে তারা। ইউনেস্কোর মতে, মহামারির পরে অন্তত ৩০ মিলিয়ন শিক্ষার্থী পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং খেয়াল রাখতে হবে যাতে অকালে শিক্ষা থেকে ঝরে না পড়ে শিক্ষার্থীরা।

এক্ষেত্রে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। সন্তান ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকতে হবে শিক্ষকদের। নিয়মিত তদারকি করতে হবে। বাড়িতে বসে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য চাঙ্গা রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে হবে। শিক্ষা ও জীবন দুটোই বাঁচাতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাবি/মাহফুজ/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়