ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রাঙামাটি-কক্সবাজার: যেমন দেখেছি প্রথমবার

আবদুল্লাহ আল মামুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৯, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৫:০৩, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
রাঙামাটি-কক্সবাজার: যেমন দেখেছি প্রথমবার

ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এশিয়া কাপের সেমিফাইনাল চলছে। বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা। বাস যখন ছাড়ে তখন খেলা শেষের দিকে। বাংলাদেশ জিতে যায় যায় অবস্থা। শেষ পর্যন্ত জিতেই যায়। আমাদের ভ্রমণের আনন্দ সেখান থেকেই শুরু।

২০১৬ সাল। প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ট্যুর। গন্তব্য রাঙামাটি এবং কক্সবাজার। আমার দ্বিতীয় ট্যুর এটা। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় স্কুল থেকে একটা ট্যুর পেয়েছি কুমিল্লাতে। এরপর দীর্ঘ ছয় বছর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভ্রমণ ছিল না। কলেজের ট্যুর দিয়ে দীর্ঘ দিনের আক্ষেপের শেষ হলো।

গাড়ি ছাড়তে ১০টা। বাংলাদেশ জিতে যাওয়ায় ট্যুরের আনন্দ বেড়ে যায়। খেলা শেষে ট্যুরের আমেজটা আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছেন রকি স্যার, রাব্বি স্যার, আবদুর রহিম স্যার এবং ওমর ফারুক স্যার। গান আর অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে ঘুমন্ত রাতটা ভরে যায় আনন্দে। এসব শেষে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি তার ইয়ত্তা নেই।

এক ঘুমেই রাঙামাটি। রাত তখন চারটা। বাস থেকে নেমে সবাই নির্ধারিত হোটেলে রুমে চলে গেলো। একটু বিশ্রাম। তিন-চার ঘণ্টার ঘুমের পর ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেলো। সকালের নাস্তা সেরে সবাই বের হয়ে পড়লাম। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে চারটা বাস ছেড়েছে। কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আর স্কুলের নবম-দশমের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এবারের এই বার্ষিক ট্যুর।

রাজবন বিহারে যাত্রার মধ্য দিয়ে রাঙামাটি পর্ব শুরু। প্রাচীন এই বৌদ্ধবিহারটির মধ্যে একটা সতেজতা লুকিয়ে আছে। নদীবেষ্টিত এই বিহারটির বিল্ডিংগুলোর নকশা অত্যন্ত সুন্দর হাতে করেছেন আর্কিটেক্ট। খুব কাছাকাছিই দেখা মেলে বানরের। রাঙ্গামাটির বনরূপা থেকে অল্প কিছু পথ হাঁটলেই কাপ্তাই লেক। সেখান থেকে আমরা একটা ট্রলারে করে রাজবন বিহারে আসি। বৌদ্ধধর্মাবম্বীরা এই বিহারটিকে অত্যন্ত পবিত্র মনে করেন।

রাজবন বিহার পরিদর্শন শেষে গেলাম শুভলং ঝর্ণা। কাপ্তাই লেকের মধ্যে দিয়ে ট্রলারে শুভংয়ের দিকে যেতে থাকি আমরা। যাওয়ার সময়ের দৃশ্যগুলো অসাধারণ। চারদিকে উঁচু উঁচু পাহাড়ের মধ্য দিয়ে লেক। লেকের মধ্যে আবার কিছু কিছু জায়গায় ডাঙা। আমরা যারা সমতলের বাসিন্দা তারা পাহাড় দেখে অনেক বেশি আপ্লুত হই। আমার বেলায়ও সেটা হয়েছে। পুরা ট্যুরেই যখনই পাহাড় দেখেছি তখন হা করে তাকিয়ে এর সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। লেক থেকে পাহাড়িদের চাষ করা কলা বাগান দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও জুম চাষ দেখা যাচ্ছে। ঝর্ণা দেখবো এই আনন্দেই বাঁচি না। ঝর্ণার ঠান্ডা পানিতে একটু ভিজবো। উপর থেকে কীভাবে গড়িয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে তা দেখার জন্য অধীর অপেক্ষা। কিন্তু শেষে হতাশ হতে হলো। বর্ষার সময় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে পানি লেকে নামলেও শুকনো মৌসুমে ঝর্ণায় পানি থাকে না।

ঝর্ণার স্থানটি দেখেই ট্রলার মোড় নিলো আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ঝুলন্ত সেতুর দিকে। রাঙ্গামাটির যেকোনো ছবি দেখতে গেলে এই ঝুলন্ত ব্রীজটি সবার আগে চোখে পড়ে। পত্রিকায়, ক্যালেন্ডারে এই সেতুটি অনেকবার দেখেছি। এবার সরাসরি দেখার পালা।

সেতুটির উপর দাঁড়িয়ে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করাটা অসাধারণ ব্যাপার। ৩৩৫ ফুট এই সেতুটিতে যখন পা দিই তখন মনে হয়েছে এই সেতু ছিঁড়ে পড়ে যাবে। ঝুলতে শুরু করেছে এটা। কিন্তু এর কিছুই না। সেতু সেতুর মতই আছে। লোকজনের অনেক ভিড়ের মধ্যেও। সেতুটি দুটি পাহাড়কে সংযুক্ত করেছে। পূর্বপাশে পাহাড়। পাহাড়টির সঙ্গেই ভারতের সীমানা। এতো কাছ থেকে ভারতের সীমানা দেখবো ভাবতেই পারিনি। পাহাড়ের মধ্যে একটা আনারস খেয়েছি লবণ-মরিচ মাখিয়ে। এটার স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। অসাধারণ একটা তৃপ্তি পেয়েছি। ফেরার পথে লেকের মধ্যে ট্রলারের একটা চা খেয়েছি। সেই চায়ের স্বাদটাও এখনো মুখে রয়ে গেছে মনে হয়। ক্লান্ত শরীরে অবিশ্বাস্য শক্তি এনে দিয়েছিল ঐ চা।

রাঙামাটিতে আমাদের শেষ স্পট ছিলো কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই স্পটটি দেখার জন্য বেরিয়ে যাই দুপুরের খাবারের পর। একটু বিশ্রাম নিয়েই। চারপাশে উঁচু উঁচু পাহাড়। পাহাড় ঘেঁষে তৈরি করা পিচ ঢালা রাস্তার মধ্য দিয়ে খুব সতর্কভাবে বাস চলছে। খুব ভয় লাগছিলো এই রাস্তা দিয়ে। ড্রাইভারের সামান্য ভুলেই অনেকগুলো জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে এখানে। একবার খেই হারিয়ে ফেললে বাস সমতলের কোনো জায়গায় গিয়ে পতিত হবে তা কেউ বলতে পারবে না।

রাব্বি স্যার বলছিলেন, আমরা সমতল থেকে এখন প্রায় দুই হাজার ফিট উপরে! পাহাড়গুলোতে জুম চাষ আর কলার বাগান দেখা যাচ্ছিলো। পথে সেনাবাহিনীর অনেকগুলো চেক পোস্ট। ভয় কাটিয়ে অবশেষে আমরা কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উপস্থিত হই। কিন্তু আবারো বিপত্তি। ভেতরে ঢুকতে দিবে না। ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই। অগত্যা এর চারপাশ ঘুরে সবাই বাসে চলে এলাম। বাস ছাড়ার কিছুক্ষণ পর কেউ একজন বলে উঠলো- এক স্যার গাড়িতে উঠতে পারেননি। কি করবে? বাস তো আর পেছনে যাওয়া সম্ভব না। পরে ঐ স্যারকে একাই হোটেলে ফিরতে হলো। এভাবে আমাদের রাঙামাটি পর্ব শেষ হলো। চারদিকে পাহাড়ে ঘেরা রাঙ্গামাটির সৌন্দর্য সত্যিই অনন্যসাধারণ!

কক্সবাজার পর্ব

পরের দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হলো। কুয়াশাভরা সকালে রাঙ্গামাটি ছেড়ে যাচ্ছি। শেষবারের মতো বাসের জানালা দিয়ে রাঙ্গামাটির পাহাড়গুলো দেখে নিচ্ছি। পিচ ঢালা রাস্তার নিচে তাকালে মনে হয় নিচে হারিয়ে যাবো। উপরে তাকালে মনে হয় উপরে হারিয়ে যাবো। পথে রাবার বাগানের দেখা মিললো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা চট্টগ্রামে পৌঁছে যাই। পথে চট্টগ্রামের নামকরা কর্ণফুলী সেতুর দেখা মিলেছে। সকালের নাস্তা সেরে নিই জামান হোটেলে। সেখান থেকে কক্সবাজার পৌঁছাতেই দুপুর।

খাওয়া দাওয়া আর বিশ্রামের পর বিকেলে সবাই বেরিয়ে গেলাম বিচের দিকে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত। এতো দিন শুধু বইয়ের পাতায় আর টিভির পর্দায় দেখে আসছি। এবার নিজ চোখে দেখবো। ভেতরের উত্তেজনা যেন প্রশমিত হতে চাচ্ছে না। আমি আর অবিন বেরিয়ে পড়লাম। পথ ঘাট কিছুই চিনি না। লোকজন যেখান দিয়ে যাচ্ছে আমরাও সেখান দিয়ে যাচ্ছি।

কোনো এক সরু রাস্তা দিয়ে বিচে এসে পড়লাম। আহ মানুষ! সেই আনন্দে আছে। কেউ পানিতে লাফালাফি করছে। কেউ হাঁটছে, কেউ ফুটবল খেলছে। অল্প কিছু পথ হাঁটার পরই কয়েকজন রোমানিয়ান টুরিস্টের সঙ্গে দেখা। দাঁড়িয়ে গেলাম কথা বলার জন্য। অবিনকে বললাম ভাবসাব বাদ দিয়ে হাতটা বাড়িয়েই দেখি না কী বলে। নাহ! তাদের কোনো অহংবোধ নেই। একজন হাই বলে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসলো। আমরাও কথা বললাম। ছবি তুললাম ওদের সঙ্গে। এরপর ফুটবল খেলার একদলের সঙ্গে মিশে গেলাম।

সূর্য নেমে যাচ্ছে। এই সূর্যাস্ত দেখার জন্য কক্সবাজারে অনেক মানুষ ছুটে আসে। আমি একা হয়ে পড়লাম। অবিন নেমে গেছে পানিতে। ভিজবোনা বলেই নামিনি জলে। একা একা হাঁটছি। এরপর সঙ্গে পেয়ে গেলাম আবদুর রহিম স্যারকে। ছাড়াছাড়ি নাই। স্যারের সঙ্গেই হাঁটলাম পুরা সন্ধ্যাটা। সেই সময়ের ফিলিংসটা সত্যিই ভালো ছিলো। এতদিন শুধু স্যারকে ক্লাসের মধ্যেই পাওয়া যেতো। একঘণ্টার ক্লাস। এরপর বিদায়। কলেজ ছুটি আমাদেরও বিদায়,।চাইলেও একসঙ্গে বসা যেতো না। ট্যুরটা কাজে দিয়েছে। স্যারকে কাছে পাওয়া গেছে। অনেক কথা বলার সুযোগ হয়েছে। স্যারের অনেক কথা শোনার সুযোগ হয়েছে। সন্ধ্যার সময় আরও দুজনকে পাওয়া গেলো হাঁটার জন্য। একজন সালেউদ্দীন মামুন স্যার। অন্যজন সোহেল স্যার। এখানে ওনাদেরকে কাছের মনে হয়েছে। কোনো ভয় ডর নেই। বকা দিচ্ছেন না এখন। কাছে টেনে নিয়ে ছবি তুলছে। স্যারদের ভালোবাসা এতো কাছ থেকে পাওয়া। এটা ছিল ট্যুরের অনেক বড় একটা পাওয়া।

রাতে বের হলাম পাশের দোকানগুলোতে সাজানো বিভিন্ন জিনিসের পসরা দেখতে। ট্যুরিস্টদের চাহিদার সব কিছুই আছে দোকানগুলোতে। ঝিনুকের তৈরি জিনিসপত্রগুলো চোখে একটু বেশিই লাগে। বিচের পাশের খাবার দোকানগুলোতে কিছু স্পেশাল খাবার পাওয়া যায়। এসব দুই একটা জায়াগা ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না। সামুদ্রিক মাছ তাজা কিনে এখানে তাজা খাওয়ানো হয়। স্বাদে অনন্য এসব মাছ। কাঁকড়া খাওয়া দেখে একটু কৌতুহল হলো। কাঁকড়ার দোকানে আমি আর অবিন ঢুকলাম। পাশে দেখি আবদুর রহিম স্যার বসা। তিনজন মিলে ভাজা কাঁকড়া খেলাম অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা। ভাজা কাঁকড়ার স্বাদটা এখনো যে মুখে লেগে আছে।

পরের দিন প্রিন্সিপাল স্যারের সঙ্গে সবাই বের হয়ে পড়লাম বিচের দিকে। আজকে পানিতে ভিজবো। কক্সবাজারে এসে যদি সমুদ্রের পানিতে গা না ভেজাতে পারি তাহলে হয়তো অপূর্ণতা থেকে যাবে। সকালে বিচে লোকজনের আনাগোনাও কম। চারদিকে একটা স্নিগ্ধতা। সকালের নরম বাতাস হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। বিচের মধ্যে আছড়ে পড়া ছোট ছোট ঢেউ শান্তির পরশ মেখে দিচ্ছিলো। ঢেউয়ের সঙ্গে আসা নানান রকম ঝিনুক আমার চোখ কাড়লো। অনেকগুলো ঝিনুক কুড়িয়েছি হেঁটে হেঁটে। অবিনের আবার ঘোড়ায় ওঠার শখ হলো। দাম দস্তুর না করেই দুইজন পালা করে ঘোড়ার পিঠে উঠে ছবি তুলে নিলাম।

দাম দিতে গিয়েই বিপত্তি। ঘোড়ার উপরে উঠে ছবি তোলার জন্য আমাদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। শুরু হলো বাকবিতণ্ডা। যতই বাকবিতণ্ডা করিনা কেন ওদের সঙ্গে পেরে উঠবো না। টাকা আদায় করেই ছাড়বে। এই সময়ে বড় কাউকে না পেলে ওদের সঙ্গে হেরে যেতে হবে- এমন ভাবতেই কোথা থেকে আবদুর রহিম স্যার এসে পড়লেন। স্যারকে দেখে আমার কলিজায় পানি আসলো। এবার যা করার স্যারই করবে। আমাদের আর কথা বলা লাগবে না। ছেলেটা কোনো কথাই শুনছে না দেখে স্যার আমাদের দুজনকে চলে যেতে বললো। টাকা আর দেওয়া হয়নি। ওখান থেকে সরে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লাম।

সমুদ্রের পানিতে ভেজার আনন্দটাই আলাদা। ছাত্র শিক্ষক সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। একে ধরে পানিতে ডুবানো, ওকে ধরে পানিতে ডুবানো চলছেই। এক স্যারের গ্রুপ হয়ে আরেক স্যারকে বেশি পানিতে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া। বড় বড় ঢেউয়ের ভেতর গা ভাসিয়ে দেওয়া। যত আনন্দ সব এই পানিতেই। কে শিক্ষক কে ছাত্র তার কোনো পরিচয় নেই এখন।

দুপুরে খাওয়ার পর সিদ্ধান্ত হলো আমরা হিমছড়ি যাবো। পুরা ট্যুরে আমাদের গ্রুপ লিডার আবদুর রহিম স্যার। আমাদের একটা গ্রুপে আমি, অবিন, কৌশিক, পিকাশু, শান্ত, শোয়াইব। হিমছড়ি যাওয়ার সময় আমাদের গ্রুপে যোগ হলো ওমর ফারুক স্যার আর কবির স্যার। মেরিন ড্রাইভ ধরে অটো চলছিলো। রাস্তার একপাশে পাহাড় আর অন্যপাশে সমুদ্র। অল্প সময়ের ভেতরে আমরা হিমছড়ি পৌঁছে গেলাম। এরপর শুরু হলো হিমছড়ি পাহাড়ে উঠার যাত্রা। হিমছড়িতে অবশ্য একটা ঝর্ণা আছে।

কিন্তু শীতের সময় এই ঝরনাটাতেও পানি থাকে না। পানির ব্যবস্থা অবশ্য কর্তৃপক্ষ করেছিল সেটা শ্যালো মেশিন দিয়ে। হিমছড়ি পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত উঠার সিঁড়ি আছে। কিন্তু এই সিঁড়িগুলো এত বেশি খাঁড়া কিছুক্ষণ চলার পর হাঁপিয়ে যায় মানুষ। এভাবে চূড়ায় উঠলাম সবাই। চূড়ায় ওঠার পরই অসাধারণ দৃশ্য সব ক্লান্তি দূর করে দিয়েছে। উপরের পাহাড় আর নিচে সমুদ্র এই দৃশ্য দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। হিমছড়ির স্পেশালিটি এখানেই। পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্র দেখা যায়। পাহাড়ের উপর থেকে অন্য পাহাড়গুলোর সৌন্দর্য দেখা যায়। পাহাড় থেকে নেমে আমরা হিমছড়ি বিচে কিছুক্ষণ কাটিয়ে কক্সবাজার ফিরলাম।

কক্সবাজারে সময় না নিয়ে সবাই এবার ছুটলাম বার্মিজ মার্কেটের দিকে। এই মার্কেটে মিয়ানমারের পণ্য পাওয়া যায়। দেশে যতগুলো বার্মিজ পণ্য আছে সব এখানে পাওয়া যায়। আচার, চাটনি, বিভিন্ন প্রকারের বাদামসহ এখানে বিচিত্ররকমের খাবার পাওয়া যায়। কয়েক প্রকার আচার আর বাদাম কিনলাম। সবাই মিলে পুরা মার্কেট ঘুরলাম। এই মার্কেটই ছিল আমাদের শেষ গন্তব্য।

সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর হোটেলে ফিরে গেলাম। রাত ১০টায় বাস ছাড়বে। সব কিছু গুছিয়ে নিলাম। আমরা পাঁচজন একটা রুমে ছিলাম। কক্সবাজার এসে শান্ত ছেলেটা অন্য রুম থেকে বিতাড়িত হয়ে আমাদের সঙ্গী হয়। আমি, অবিন, কৌশিক, পিকাশু, শোয়াইব। থাকা নিয়ে অনেক যুদ্ধ করেছি। কার আগে কে জায়গা দখল করে শুয়ে পড়বে এটা ছিলো যুদ্ধের মূল কারণ।

আরেকটা কারণ ছিল ওয়াশরুম নিয়ে। কার আগে কে গোসলে ঢুকবে সেটা নিয়ে যুদ্ধ চলতো। রুম ভাগাভাগিতেও মজা। রাতে ঘুমিয়ে পড়লো কেউ। তাকে দুজনে ধরে নিচে শুয়ে দিয়ে ওর জায়গা দখল করা হয়ে যেতো। এশিয়া কাপের ফাইনাল চলছিলো বাংলাদেশ বনাম ভারতের। আমাদের বিদায়েরও সময় হয়ে গেলো। বাংলাদেশও হেরে গেলো। ট্যুরের আনন্দ শুরু হয়েছে বাংলাদেশের জেতা ম্যাচ দিয়ে। শেষ হয়েছে বাংলাদেশ হারার মধ্য দিয়ে।

(প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই কলেজ আমার আবেগের জায়গা, ভালোবাসার জায়গা। দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ প্রফেসর কাজী নুরুল ইসলাম ফারুকী। তিনি কাজী ফারুকী নামে সমাদৃত। তার হাতে গড়ে ওঠা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি লক্ষ্মীপুর জেলা পেরিয়ে এখন জাতীয়ভাবে পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠান)।

লেখক: শিক্ষার্থী, পরিসংখ্যান বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

পাবিপ্রবি/মাহফুজ/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়