ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে প্রয়োজন মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়’

এবিএস ফরহাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০  
‘সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে প্রয়োজন মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়’

শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তর বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে স্নাতক ও স্নাতকত্তোর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দেড় শতাধিক। আরও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণাধীন ও প্রক্রিয়াধীন। 

সর্বশেষ কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিল পাস হয়েছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় অসংখ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন, জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্থাপন করা হয় উচ্চ শিক্ষালয়। দেশে এত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখে খুব সহজে অনুমান করা যায় শিক্ষাব্যবস্থার গতিশীলতা। তবে সে শিক্ষা কতটা বিশ্বমানের, সেটি প্রশ্ন সাপেক্ষ।

সেই প্রশ্ন আরও শক্তিশালী হয় যখন বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও থাকে না বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের অনেক ছোট রাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ও স্থান পেয়েছে ওই র‌্যাঙ্কিংয়ে।

২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংয়ের বিশ্বসেরা দুই হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় এক হাজার ৭৯৪তম হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ৬৪টি ও পাকিস্তানের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। এমনকি এশিয়ার সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় তলানিতে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ওই তালিকার সম্মানজনক স্থানে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যাল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাক এবং নর্থ সাউথের মতো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন হাল চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বৈশ্বিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে কতটা পিছিয়ে।

উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি করেই ভালো ফলাফল আশা করা বোকামি। শুধু সংখ্যায় নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বৃদ্ধি করা জরুরি। নেপালের মাত্র দুটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যা বিশ্বমানের। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, গবেষণাপত্র চুরিসহ অনিয়ম-অভিযোগের শেষ নেই।

অনিয়ম ও দুর্নীতি ছাড়াও অনেক সময় রাজনৈতিক আদর্শের বিবেচনায় বাদ পড়েন অনেক যোগ্য শিক্ষক প্রার্থী। যারা দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়ে উদাহরণ হয়েছেন। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বেড়াজালে উপর মহলের আর্শীবাদে অযোগ্য আর অদক্ষ শিক্ষকেরা স্থান পায় সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে। নামেমাত্র গবেষণাপত্র দিয়েই ডিগ্রি অর্জন করেন তারা। দক্ষ প্রফেসর নেই অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসব অনিয়ম দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অবকাঠামোগত দুর্বলতাকে পরিচয় করিয়ে দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের এমন হালের অন্যতম আরেকটি কারণ শিক্ষক রাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানে দেশের বুদ্ধিজীবী। যাদের অবদান এদেশের মানুষ ৫২ ও ৭১ সহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে দেখেছে। কিন্তু এই সময়ে এসে সেটা রূপ নিয়েছে কুরুচিপূর্ণ রাজনীতিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজের স্বার্থের জন্য, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য ক্লাস ছেড়ে নেমেছে রাজনীতিতে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাসরুম, পরীক্ষা, গবেষণাপত্র নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করার কথা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়েরই অনুষ্ঠানে একজন উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিজের চেয়ার ছেড়ে বসতে দেন। এই অপরাজনীতির কারণে শিক্ষকেরাই নিজেদের মান নিজেরা কমিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজ রাজনৈতিক মাঠে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। যার প্রমাণ মেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিংয়ে না থাকায়। তাই সময় এসেছে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

কুবি/মাহফুজ/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়