‘দেশীয় সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক হোক শিশুরা’
গোলাম হাসিব || রাইজিংবিডি.কম
‘আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা
তোমরা এ যুগে এই বয়সে লেখাপড়া কর মেলা।
আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি
তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।’
কবি সুফিয়া কামালের কবিতার মতো আমাদের শৈশবকালটা স্মৃতিময়। গ্রামে কাবাডি, গোল্লাছুট, লুকোচুরি, নৌকাবাইচ এবং ঘুড়ি ওড়ানোসহ আরও কত রকম খেলাই খেলেছি আমরা। এছাড়াও সময় কাটাতে আরও অনেক মজাদার মাধ্যম ছিল। দাদা-দাদির কাছে রাতের বেলা পরীদের গল্প শুনতাম। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ঠাকুমারঝুলি কিংবা আলিফ লায়লা তো ছিলই। এসব বিনোদন দৈহিক ও মানসিক বিকাশে অনেক ভূমিকা রাখে।
কিন্তু এসব বিনোদনের স্থলে আজকের দিনে জায়গা করে নিয়েছে ভিডিও গেইম ও সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক আসক্তি। এই আসক্তি তরুণ সমাজ ও শিশুদের দেহ মনের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে। বিশ্বজুড়েই এসব মাধ্যমের নানা ক্ষতিকারক দিক নিয়ে গবেষণা চলছে।
সামাজিকমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার বাঁধাগ্রস্ত করছে আমাদের স্বাভাবিক জীবন প্রবাহ। অন্যদিকে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সম্পর্ক, শারীরিক ও মানসিক কর্মশক্তিও নষ্ট হচ্ছে। কতিপয় ভিডিও গেইম আর ভিনদেশি কার্টুন ছবিও আমাদের বাচ্চাদের নিজ ঐতিহ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আমাদের সচেতন হতে হবে। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের মধ্যে নিজ সংস্কৃতির ধারণা থাকতে হবে। শৈশবে ধর্মীয়, নৈতিক ও সুস্থ বিনোদনে তাদের অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে তাদের গল্প শোনাতে হবে।
কীভাবে কাবাডি খেলে সেটা বেশিরভাগ শিশু-কিশোরই জানে না এখন। জানে না কীভাবে গোল্লাছুট কিংবা লুকোচুরি খেলতে হয়। তাদের মাথায় থাকে ইংরেজি মুভি, বিদেশে গান ইত্যাদি। তারা রবীন্দ্রসংগীত কিংবা দেশাত্মবোধক গান শুনলে চিনতে পারে না কোনটা কার। এসবের পেছনে দায়ী আমাদের সমাজব্যবস্থা। আধুনিক নামধারী অভিভাবক সমাজ। এখন খুব কম শিশুরাই ফেলুদা কিংবা কাকাবাবু পড়ে।
এভাবে চলতে থাকলে শীঘ্রই আমাদের দেশীয় পরিচয় হারিয়ে যাবে বিদেশি সংস্কৃতির ভিড়ে। ঔপনিবেশিক শাসন শেষ হলেও চলছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। শিশুদের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে নিজ দেশের আসল জীবনধারার সঙ্গে। আর এই সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক হোক শিশুরা। তাদের নিষ্পাপ জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা যাবে না।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
রাবি/মাহফুজ/মাহি
আরো পড়ুন