ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিতের চেয়ে মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ প্রয়োজন’

হযরত আলী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০  
‘সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিতের চেয়ে মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ প্রয়োজন’

পৃথিবীতে যত সুশৃঙ্খল ও উন্নত জাতি দেখছি, তারা শিক্ষার মাধ্যমেই এ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে গত কয়েক বছর যাবত শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও মূল্যবোধ গঠন ও উন্নয়নের ছাপ তেমন চোখে পড়ছে না। 

শিক্ষা মূলত কী? আমার কাছে মনে হয়, শিক্ষা মানে আচরণগত পরিবর্তন। শিক্ষা হলো বৃদ্ধি ও বিকাশমূলক প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থীর মনের মধ্যে যে সব মানসিক শক্তি জন্মসূত্রে বিদ্যমান, সেগুলো বাইরে আনাই শিক্ষার কাজ।

শিক্ষার লক্ষ্য কী? এরিস্টটলের বলেছেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো ধর্মীয় অনুশাসনে অনুমোদিত পবিত্র কার্যক্রমের মাধ্যমে সুখলাভ। জ্ঞানার্জন, চরিত্র গঠন, কৃষ্টি চেতনার উন্মেষ ঘটানো। শিক্ষা শিশুর মধ্যে নৈতিক চরিত্র গঠনে সাহায্য করবে। এ সম্পর্কে Herbert বলেছেন, A handful of good life is worth a bushel of learning. অর্থাৎ অনেক বেশি শিক্ষা থেকে কয়েকটি সৎ জীবন অনেক শ্রেয়।

শিক্ষার সঙ্গে চরিত্র গঠন, কৃষ্টি চেতনার উম্মেষ ও নৈতিকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জড়িত। কিন্তু বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা তথ্য নির্ভর। কিছু তথ্য বইয়ে উল্লেখ করা আছে। আমরা সেগুলো মুখস্থ করছি। তা পরীক্ষার খাতায় লিখে দিয়ে সার্টিফিকেট অর্জন করছি। তাতেই আমরা শিক্ষিত হয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই অবহেলিত থেকে যাচ্ছে।  এই ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা পদ্ধতির কারণে মানুষ প্রকৃতভাবে শিক্ষিত না হয়ে তারা হয়ে উঠছে দুর্নীতিবাজ, ধর্ষক, অনৈতিক, দুর্জন কিংবা জঙ্গি। তারা শিক্ষিত হয়ে আরও বেশি দেশের ক্ষতি সাধন করছে। এই জন্যই বলা হয়, ‘দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।’

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধর্ষণের হার। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সময়ে নারী ও শিশু ধর্ষণের ১৭ হাজার ২৭৯টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৮৬১ জন নারী এবং ৩ হাজার ৫২৮ জন শিশু! শুধু ২০১৮ সালে মোট ধর্ষণ ৭৩২টি। অন্যদিকে, ২০১৯ সালে মোট  ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৪১৩ জন নারী । যা ২০১৮ সালের দ্বিগুন!

শুধু ধর্ষণের ঘটনাই নয়, যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পুরো বিশ্ব কিংবা পানিবন্দি জীবনযাপন করছে দেশের মানুষ, ঠিক সেই সময়েও ত্রাণসামগ্রী আত্মসাৎ করেছে অসাধু ব্যক্তিরা। কতটা বিকৃত মানসিকতার উদাহরণ আমরা স্থাপন করছি। এরা আবার সবাই শিক্ষিত! তাই নয় কি? সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির কোনো অন্ত নেই।

বৃদ্ধ মা-বাবাকে রেখে আসছি বৃদ্ধাশ্রমে। দিন দিন বাড়ছে বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের সংখ্যা। কথিত সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিতরা তাদের মা-বাবাকে এখানে রেখে আসছে। কোনো অশিক্ষিত ব্যক্তি নয় কিন্তু।

রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার ঘটনা কে না জানে! সেপ্টেম্বরের আলোচিত পথশিশু জিনিয়া অপহরণের ঘটনাটাই দেখুন। গা শিউরে উঠছে না? শিক্ষিত বেশধারী একজন তাকে অপহরণ করলো! তাই সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত তৈরির পরিবর্তে মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষিত মানুষ তৈরি সময়ের দাবি। হাজার হাজার এ-প্লাস দরকার নেই। মানুষ তৈরি করা দরকার।

এই সমস্যা সমাধানের উপায় আমাদেরই বের করতে হবে। স্কুল, কলেজে নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এটার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গঠনের লক্ষ্যে সাপ্তাহিক বা মাসিক সেমিনারের আয়োজন করা যেতে পারে। দেশের প্রতি ভালোবাসার উদ্রেক ঘটাতে হবে। বিভিন্ন সহশিক্ষাকার্যক্রম হাতে নেওয়া যেতে পারে। পরিবার থেকে সবাইকে নৈতিক ও মানবিক করে গড়ে তুলতে হবে।

প্রতিবেশী দেশ জঙ্গি বিরোধী জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে চলচ্চিত্রকে ব্যবহার করছে। আমাদের চলচ্চিত্রকেও ধর্ষণ, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে হবে। যদি আমরা মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষিত মানুষ গড়তে ব্যর্থ হই, তাহলে এ শিক্ষা আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে না।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাবি/মাহফুজ/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়