ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জটিল সমীকরণে তিন বন্ধু

সোহান গাজী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৮:০৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
জটিল সমীকরণে তিন বন্ধু

সজীব, শাকিল ও মৌমিতা (ছদ্মনাম) তিনজন ভালো বন্ধু। তাদের একটা শর্টফর্ম আছে ক্যাম্পাসে। এসএমএস (SMS) নামে তারা ক্যাম্পাসে পরিচিত। এ নাম বললে যে কেউ চেনেন।

তাদের তিন বন্ধুর সম্পর্ক ছিল মধুর, যে কেউ দেখলে ইর্ষা করতো। তাদের বন্ধুত্ব ছিল চরম বিশ্বাসের। একসঙ্গে খেতেন, ঘুরতে যেতেন, কত আনন্দ করতেন! সবাইকে তারা হতভম্ব করতে চাইতেন সবসময়। এমন মধুর সম্পর্কের জন্ম খুলনার সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে। 

বলা যায়, তারা খুব ভালোবাসতেন একে-অপরকে। কেউ-কাউকে ছাড়া থাকতে পারতেন না। যেমন, মৌমিতা তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা গেলে বাকি বন্ধুরা মৌমিতাকে মিস করতেন। এজন্য তারা সময়ে-অসময়ে ফোনে কথা বলতেন, অনেক সময় একজন-অন্যজনের কাছে ছুটেও যেতেন। 

তাদের বন্ধুত্ব ভালোই চলছিল, কিন্তু সম্পর্কের কিছুটা ফাটল ধরতে শুরু করে মৌমিতার বয়ফ্রেন্ডের জন্য। ছেলেটা ৬ মাসের একটা কোর্স করার জন্য টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ভর্তি হয় এবং ফুলবাড়িগেটে বাসা ভাড়া করে থাকতেন।  মৌমিতার সঙ্গে সজীব, শাকিলের চলাফেরা দেখে একটা সময় আর পছন্দ করতেন না বয়ফ্রেন্ড। সেই থেকে তাদের চলাফেরা আগের মতো হতো না। শাকিল একদিন মৌমিতার উপর খুব রেগে যান, তিনি মৌমিতার সঙ্গে আগের মতো কথা বলতেন না, এদিকে সজীব মৌমিতার সঙ্গে কথা বলতে থাকেন, সজীব চাইতেন সম্পর্ক আগের মতো করতে, কিন্তু কোনোভাবে হচ্ছিল না। এমন করতে করতে ৬ মাস পার হয়ে গেলো কিন্তু সম্পর্ক আগের জায়গায় কোনোভাবে আসছে না। এভাবে চলতে চলতে ১৭ মার্চ ২০২০ তাদের ক্যাম্পাস অনিদিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, কারণ মহামারি করোনা। 

সারাবিশ্বে চলছে মহামারি করোনা (COVID -19)। এমন সময় সবাই ঘরবন্দি। বাংলাদেশও লকডাউন করে দেওয়া হলো। কেউ বাসা থেকে বের হতে পারে না, সজীব বলেন তিনি নাকি জেলের কয়েদি হয়ে গেছেন, এভাবে কার ভালো লাগে! কিন্তু দেশকে রক্ষা করতে, দেশের মানুষকে রক্ষা করতে তারা কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। জানেন না তারা কবে আবার একসঙ্গে হতে পারবেন। আবার আগের মতো আড্ডা দিতে পারবেন। 

তারা তিনজন অনলাইনে আড্ডা শুরু করেন। ভিডিও কলে তাদের নিজনিজ মতামত ব্যক্ত করতে থাকেন। এভাবে তাদের সম্পর্ক আগের জায়গায় ফেরে একদিন। এভাবে যেতে যেতে হঠাৎ একদিন শাকিলের সঙ্গে সজীবের তুমুল ঝগড়া শুরু হয় সজীবের প্রাক্তন গার্লফেন্ডের জন্য। সজীব দেখলো শাকিলের এখন ভালো বন্ধু হয়েছে সজীবের সেই প্রাক্তন।  সজীব সেটা মেনে নিতে পারলেন না। সেজন্য তাদের এত সুন্দর বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল ধরল। 

এদিকে এ ব্যপারগুলো দু’জনরের মা জেনে গেলো। তারা একে-অপরের মাকে বিষয়টা শেয়ার করলেন। মায়েদের কাছে খুলে বলায় আবার তাদের সম্পর্ক ঠিক হয়ে গেলো। 

মনে রাখা উচিৎ, নিয়ম-অনিয়ম, বিশ্বাস, নির্ভরতা আর বাঁধভাঙা সম্পর্কের মিলনস্থল হচ্ছে বন্ধু। যে কথা কাউকে বলা যায় না, তা অকপটে খুলে বলা যায় একজন প্রকৃত বন্ধুর সামনে। এই সম্পর্ক যেমন আস্থার, আবার কর্তৃত্বের। প্রেমের মতোই বন্ধুত্বও সাবলীল এবং স্বতঃস্ফূর্ত। বুঝতে হবে সম্পর্ক সহজ না হলে কেউ কখনো কারও বন্ধু হয়ে উঠতে পারে না। সহজ সম্পর্ক তৈরি করতে এটাও বুঝতে হবে, সবারই একটি নিজস্ব জগৎ থাকে, সেখানে আপনি ছাড়াও আরও অনেকের স্থান রয়েছে।

আসলে কেবল বন্ধুর মধ্যে নয়, জীবনের নানা সম্পর্কের ক্ষেত্রেই এই জটিলতা লক্ষ করা যায়। এক প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে অনেকে আশা করেন অন্য প্রতিবেশীরাও তাঁর সঙ্গে যোগ দেবেন। পক্ষ নেবেন। দাওয়াতে-অনুষ্ঠানে আলাদা করে দেবেন। এমনটা না করলে সম্পর্ক নষ্ট। অফিসের সহকর্মীর সঙ্গে, এমনকি আপন ভাই-বোনের মধ্যেও ব্যাপারটি দেখা যায়। অথচ সবাই আলাদা সত্তা—বিষয়টি মেনে নিতে হবে।

এসব ক্ষেত্রে যাদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে, তারা কয়েকটি কাজ করতে পারেন। যেমন- কিছু সময়ের জন্য আলাদা থেকে পরিস্থিতি বিবেচনা করতে পারেন। নিজের মনকে শান্ত করার জন্য সময় নিতে পারেন। যার সঙ্গে মূল সমস্যা, তার সঙ্গে মিটমাট করা সম্ভব না হলেও যেন অন্য মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখা যায়, সেটা নিয়ে ভাবতে পারেন। বন্ধুত্বের সমস্যাগুলো নিজেই সমাধান করা যায়। এ ক্ষেত্রে তৃতীয় কারও সাহায্য নিলে একদিকে যেমন নিজের কথা বাইরের লোকে জানেন, অন্যদিকে যার সঙ্গে বলছেন সেই বন্ধু ব্যাপারটি পছন্দ নাও করতে পারেন, আবার অন্য বন্ধুদের দ্বারা বিব্রতকর অবস্থায়ও পড়তে পারেন। এই বিষয়গুলো নিয়েও ভাবতে হবে।

বলা হয়, দুজন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ভালো থাকলে তো আর তা ভাঙে না। খারাপ পরিস্থিতির কারণেই ভাঙে। তাই দুজনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষকে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, সম্পর্ক ভেঙে আলাদা সংসার গড়েছেন দুজন। এদের আবার দেখা হলে নতুন সঙ্গী নিজেকে অনিরাপদ মনে করতে পারেন, তীব্র মানসিক চাপ অনুভব করেন। প্রচন্ড কষ্ট পেতে পারেন। তৃতীয় পক্ষ যদি সত্যিকারের বন্ধু হন, তাহলে তাকে এসব বিষয় বুঝেই সম্পর্কে ভারসাম্য আনতে হবে। নিরপেক্ষভাবে দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মূল সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি টির্চাস ট্রেনিং কলেজ। 

খুলনা/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়