ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

প্রিয় ক্যাম্পাসকে তরুণীর আবেগঘন চিঠি

সাদিয়া সাবাহ্ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৩:০৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রিয় ক্যাম্পাসকে তরুণীর আবেগঘন চিঠি

ছবি: ইমরান হোসেন

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে গত ১৭ মার্চ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে গত ৯ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বন্ধকালীন দীর্ঘ সময়ে মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাস খোলার আভাস পাওয়া গেলেও করোনার প্রকোপ বাড়ায় তা আর হয়ে ওঠেনি। বরং দফায় দফায় ছুটি বেড়ে সর্বশেষ ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঠেকেছে। করোনার এই সময়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিজ নিজ বাড়িতেই অবস্থান করে আসছে। আর্থিক সঙ্কট ও টিউশন চলে যাওয়ার শঙ্কা এবং টানা পাঁচ মাস বাসায় থেকে বিরক্তিবোধ কাজ করায় একঘেয়েমি কাটাতে অনেক শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়েই চলে এসেছেন ঢাকা।

ক্যাম্পাসের আশেপাশের মেসে অবস্থান করছেন তারা। তবে বাড়িতে অবস্থান করা শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। এমনই একজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া সাবাহ্। বাড়িতে বসে করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘ বিচ্ছেদে প্রিয় ক্যাম্পাসকে চিঠি লিখেছেন তিনি। পাঠকদের জন্য পুরো চিঠিটি তুলে ধরা হলো।

প্রিয় ক্যাম্পাস,
কখনোই বুঝতে পারিনি তোমাকে আমার এত তাড়াতাড়ি এভাবে লিখতে হবে। দেখেছো, দূরত্ব বাড়তে বাড়তে আজ কতখানি বেড়েছে যে চিঠি লেখা লাগে। আজ ৪৯০ কিলোমিটার দূরত্বের সঙ্গে সঙ্গে সময়ও যুক্ত হলো। দীর্ঘ ছয় মাস। এ মুহূর্তে সাধ্য নেই ঘুচানোর এ দূরত্ব। তাই বাধ্য হয়েই লিখতে হলো। এ দুঃসময়ে অসংখ্য ভালোবাসা নিও প্রিয় ক্যাম্পাস।

জানো, ছোটবেলায় মা বলতেন, যা তোমার থাকবে তা নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করবে। ঠিক তেমনি অনেক আক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও আমি তোমাকেই ভালোবেসেছি। প্রেমটা হয়েই যায়। একসঙ্গে থাকতে থাকতে, ভালোবাসতে-বাসতে হয়েই যায়। তাইতো আমি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ ফেলে মাত্র স্বল্প একরের তোমাকেই ভালোবেসেছি।

প্রিয়,
ভালোবাসার সাথে অভিমানও হয়, রাগও হয়।আমাদের সম্পর্কটাই তো এমন। মাঝে মাঝে হয়ই। মাঝে মাঝে অনেক ‘খিস্তিই’ ঝাড়ি তোমাকে। তাই বলে এটা ভাবার কারণ নেই ভালোবাসি না। রাগ অভিমান তো তার উপরই করা যায়, যার উপর অধিকার থাকে।

সত্যি বলতে তোমাকে বড্ড মনে পড়ে। সেই যে দেখা হলো ১৬ মার্চ। গুণে গুণে তিনটি মাস পার হলো। পথ চলার সাড়ে তিন বছরে এত দীর্ঘ বিচ্ছেদ কখনোই হয়নি। তুমিতো জানোই, আমি ভালো নেই। তোমাকে ছাড়া কি ভালো থাকা যায়? পৃথিবীর এই অসুখ আমাদের বিচ্ছেদকে করেছে দীর্ঘায়িত। খুব যন্ত্রণা হয়। একা একা লাগে। সময়টা খারাপ। সবারই বোধহয় এমন হয়। একা একা লাগে। যাইহোট, এবার তোমার কথা শুনি।

প্রিয় ক্যাম্পাস,
জানি না, এবার কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো থরেথরে বৃষ্টিরপানিতে ঝরে পড়েছিল কি-না? গাছগুলো কেমন আছে? শান্ত চত্বর কি খুব শান্ত এখন! আমাদের কোলাহল ভাবায় না। কাঁঠালতলার কাঁঠাল গাছে কি কাঁঠাল ধরেছে? দেখ কত কত প্রশ্ন।আসলে দীর্ঘ তিন মাস, কতকিছু রয়ে যায় তারপরও।

জানো,
রুম ৮১৪,৮১৫,৮১৫ সবগুলোকেই খুব মনে পড়ে। কতকিছুই তো ছিল-আড্ডা, খুনসুটি, ঝগড়া, ক্লাস। কতকিছু। এখন কিছুই নেই। সকাল ৮টা ১৫মিনিটে আরিফ স্যারের ক্লাস সিডিউলটা রাতের বেলা দেখলে চরম বিরক্ত লাগতো। কিন্তু সকালবেলা ক্যাম্পাসে চলে আসলে মনে হতো একটা দিন দীর্ঘ হলো, একটা সকাল দেখা হলো। আজকাল পরীক্ষা, ক্লাস, শেষসময়ে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়াগুলোকে মিস করি। খারাপ সময়ে বোধহয় এমনই হয়, নিজের অপ্রিয়-অপছন্দগুলোও কি দারুণ লাগে!

প্রিয়,
তোমার প্রতি অনেক অভিযোগ থাকলেও আমাদের সম্পর্কটাই এমন। অনিচ্ছাকৃত বিবাহে যেমন ভালোবাসাটা হয়ে যায়, আমাদেরও তাই।তোমাকে ছাড়া নিজের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা হয়। অপ্রাপ্তির সাথে প্রাপ্তিটাও কি কম? কী দাওনি তুমি! অসাধারণ কিছু বন্ধু, অসাধারণ কিছু শিক্ষক। দ্বিতীয় পরিবার। মাধ্যমিকে প্রচুর স্কুল ফাঁকি দিতাম। ক্যাম্পাসেও এসেও প্রথম দিকে বাধ্য হয়েই ‘অ্যাটেন্ডেন্স মার্কস’ এর জন্যই ক্লাসে আসতাম। ধীরে ধীরে এই ক্লাসে আসাটা হয়ে পড়ে প্রিয়মুখগুলোকে দেখার জন্য।

আজ এপর্যন্ত থাক। লিখতে থাকলে লেখা আরও লম্বা হবে। এই মহামারি শেষ হলে আমাদের দেখা হবে। ভালো থেকো।

পৃথিবীর সমস্ত অসুখ ছেড়ে গেলে, আমাদের দেখা হবে। সেদিন কোলাহলে পূর্ণ হবে তুমি। আমরাও টিএসসির চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে আলোচনা করবো, কীভাবে এই বদলে যাওয়া পৃথিবীটাকে নতুনভাবে সাজানো যায়।দেখা হবে।

ইতি,
তোমার ভালোবাসা সাদিয়া সাবাহ্,
শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়