ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

করোনা: মন্দের মাঝে শুভ সূচনা 

হাবিবুন নাহার মিমি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৮:১৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
করোনা: মন্দের মাঝে শুভ সূচনা 

বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনার থাবা ঘাড়ের পেছনে মৃত্যুর নিঃশ্বাস ফেলছে। মারা যাচ্ছে হাজারও সংক্রমিত রোগী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় প্রায় সবাই চার দেয়ালে আবদ্ধ। কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন, মাস্ক এ শব্দগুলো এখন মানুষের নিত্য সঙ্গী। তবে এতসব ক্ষতির ভিড়েও করোনা আমাদের ইতিবাচক অনেক কিছুই শিখিয়েছে।

স্মার্টফোনে আমাদের স্মার্ট বানানো

করোনাপূর্ব সময়ে স্মার্টফোনের ব্যবহার ছিল সীমিত। স্মার্টফোনের ব্যবহার বলতে বেশির ভাগ মানুষই বুঝতো কথা বলা, গেম খেলা আর ফেসবুক-ইমু। কিন্তু এই করোনা আমাদের শেখালো এই স্মার্টফোন দিয়ে এসব ছাড়াও আরও অনেক কিছু করা যায়। আমরা এখন স্মার্টফোনেই সারছি বিদ্যুৎ/গ্যাসের বিল জমা দেওয়া, কেনাকাটা, লেখাপড়া, বিনোদন আরও কত কি! প্রায় সব কাজই ঘরে বসে মুহূর্তের মধ্যেই স্মার্টফোনের স্মার্ট পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে পারছি। 

স্বাস্থ্য সচেতন

করোনা ভীতিতে মানুষ এখন স্বাস্থ্যের প্রতি খুবই যত্নবান হয়ে উঠেছে। অগোছালো আর আত্মভোলা মানুষও এখন দু’ঘন্টা পর পর হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করছে, বাইরে বেরোলেই মাস্ক, গ্লাভস নিত্যসঙ্গী। পকেটে থাকছে একটা মিনি হ্যান্ডওয়াশ। অথচ করোনাপূর্ব সময়ে এসব ভাবনা ছিল হাসির খোরাক।

প্রযুক্তির সঙ্গে সখ্যতা

যেসব কাজ অনলাইন-অফলাইন দু’ভাবেই করা যায়, আগে তা অফলাইনে করতেই বেশি পছন্দ করত লোকে। কিন্তু এখন বাধ্য হয়ে হলেও প্রযুক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। যেমন ধরুন, বাস ট্রেনের টিকিট কাটার কথা। অনলাইনে টিকিট কাটা গেলেও আগে লোকজন সশরীরে টিকিট কাটাকেই বেশি পছন্দ করত। ঈদের ছুটিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পাওয়া টিকিটকে সবেধন নীলমনির মতো আগলে বাড়ি ফেরার মাঝে কাজ করতো অন্যরকম ভালো লাগা। অথচ এখন ঘর থেকে বেরোতেই দ্বিধা, জড়তা। লাইনে দাঁড়ানোর তো প্রশ্নই আসে না।

তাছাড়াও আছে টাকা-পয়সা লেনদেনের ব্যাপারটা। হাতে হাতে লেনদেনের চেয়ে এখন অনলাইন লেনদেনই মানুষের অধিক প্রিয়।

বাড়ছে পারিবারিক সৌহার্দ্য

পড়াশোনা, ব্যবসা আর চাকরির ব্যস্ততায় পরিবারকে সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না তেমন। করোনার এই ঘরবন্দি সময়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুবর্ণ সুযোগ এসেছে হাতে। মা-বাবার শরীরের খোঁজ নেওয়া, ছোট ভাই-বোনদের পড়াশোনার তদারকি ইত্যাদি কাজগুলোর মাধ্যমে বেড়েছে পারিবারিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি।

খানিক ছুটি

একঘেয়ে ৮টা-৫টা অফিস বা ক্লাস, ল্যাব, অ্যাসাইনমেন্টের ইদুর-দৌড়ের যাতাকলে মানুষ যখন পিষ্ট হচ্ছে, ঠিক তখনই অনির্ধারিত ছুটি হয়ে এলো করোনাকালীন লকডাউন। ব্যস্ত রুটিনে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ পেলো দম ফেলবার একটু ফুরসত। 

নিজেকে সময় দেওয়া

ব্যস্ততা অবিরাম। অফিসের কাজ হোক বা পড়াশোনা, নিজেকে দেওয়ার জন্য সময় নেই কারোরই। অবসর সময় কাটে অফিসের কলিগ বা ভার্সিটির বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায়। করোনা এখন আমাদের হাতে এনে দিয়েছে অফুরন্ত সময়। নেই কাজের ব্যস্ততা বা পড়াশোনার চাপ। সময়টা একান্তই নিজের।

আত্মোন্নয়ন 

লকডাউনে জনজীবন যেন স্থবির হয়ে গেছে। সবকিছু হয়ে গেছে নিশ্চল, কিন্তু বুদ্ধিমানরা বসে থাকেন না। বোরিং এই সময়টাকে কাজে লাগাতে উঠেপড়ে লেগেছেন তারা। কেউ শ'য়ে শ'য়ে বই পড়ে রেকর্ড গড়ছেন, কেউবা অনলাইনে ফ্রি কোর্স খুঁজে নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদির স্কিল ডেভেলপমেন্ট টপিকে দিচ্ছেন নজর।

শখের কাছে ফেরা

খুব যত্নের বাগানটায় আগাছা জন্মেছে। নজর দেওয়ার সময় হয়ে ওঠে, কিন্তু পরিষ্কার করার মতো সময় হয়ে ওঠে না। অলস দুপুরে বসে বসে ফোন স্ক্রলিং করার সময় চোখে পড়লো শখের বাগানটার জীর্ণ দশা। তখনই লেগে পড়া বাগানের কাজে। 

ক্লান্তি, অবসাদ কোথায় মিলিয়ে গেলো। ক’দিন যেতেই বাগানের সবুজ সতেজ গাছগুলো দেখে জুড়িয়ে গেলো প্রাণ। নিঃসঙ্গ সময় পার করতে পুরনো আঁকার শখটা ফিরে এসেছে আবার। সাদা ক্যানভাসে ভরে উঠছে তুলির রঙিন আঁচড়ে। কখনো ইউটিউব দেখে ঘর সাজানোর নানা জিনিস বানানো। পুরনো শখটাকে আরেকবার ঝালাইয়ের সুযোগ করে দিলো করোনা।

ঘুমিয়ে থাকা শিশুর পিতা উঠেছে আজ জেগে

চিরচেনা বন্ধুদের ভেতর যে এত এত বিচিত্র প্রতিভা লুকিয়ে আছে, তা জানা ছিল না রাফির। কেউ কবিতা লিখছে, কেউ অনলাইন বিজনেস, কেউ হয়ে গেছে ছোটখাটো উদ্যোক্তা। বন্ধুদের থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে পুরনো লেখার অভ্যাসটা ঝালাই করতে চাইল রাফি। সপ্তাহ খানেক পর এক দৈনিক পত্রিকায় নিজের ছবির পাশে নিজের লেখা কলাম দেখে খুশিতে বাকহারা হয়ে গেলো সে। সেই থেকে শুরু। এখন দু’দিন পরপরই বিভিন্ন পত্রিকায় তার লেখা আসছে। করোনার লকডাউনের এসময়টা খুঁজে বের করেছে এমন হাজারো রাফিকে। সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটছে অভাবনীয়ভাবে। 

গতিই জীবন, স্থিতিতে মৃত্যু

করোনা মহামারি হঠাৎ যেন পুরো বিশ্বকে নিশ্চল করে দিলো। হাজারের পর লাখও ছাড়ালো আক্রান্ত-মৃত্যুর পরিসংখ্যান। একটুক্ষণ স্থবির হয়ে থাকল বিশ্ব। তারপরই চলতে শুরু করল নিজ গতিতে। চলছে ক্রিকেট, ফুটবল, নির্বাচন, শেয়ারবাজার। থেমে নেই দোকানপাট, চেনা সেই ব্যস্ততা। থামার কোনো জো নেই, চলতেই হবে। অবিরাম গতিময়তা আমাদের শিখিয়েছে অভিযোজন ক্ষমতা। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তাই মানুষ ছুটে চলছে আবার। ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, ওঠে দাঁড়াচ্ছে। কেউ চায় না পিছিয়ে থাকতে। 

করোনার শুধু নেতিবাচক দিকটাই আমরা দেখি, কিন্তু প্রত্যেকটা জিনিসের মতোই এরও রয়েছে ইতিবাচক কিছু বিষয়। যেদিকগুলো অনুসরণ করলে আমরাও খুঁজে পাবো নতুন উদ্যম।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়