ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ছোটগল্প ‘রানুর সর্বনাশ’ 

গোকুল চন্দ্র রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৭, ১ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১২:৪১, ১ অক্টোবর ২০২০
ছোটগল্প ‘রানুর সর্বনাশ’ 

শরতের সাজ আজ হয়েছে বিষাক্ত। শরতের সাদা মেঘ মুখ লুকিয়ে কাঁদে। শরতের কাশফুলকে বাতাস এসেও দোলাতে পারে না। শিউলি ফুল গন্ধহীন হয়েছে আজ। এমন এক সদ্য ফোটা গন্ধ ফুলের নাম রানু।  

রানু নামটি তার বাবা রেখেছিল খুব আদর করে। তার বাবা কী করে জানতো তার মেয়ের নামটির সঙ্গে আরও কিছু যুক্ত হবে। এমনটা জানলে তার পিতা তার মেয়েকে কখনোই চোখের আড়াল হতে দিতেন না। 

রানুর বয়স পনেরো বছর। সে নবম শ্রেণিতে পড়ে। সে পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিল। ছাত্রী হিসেবে সে অনেক ভালো, যেমন ভালো মানুষ হিসেবে। রানু একদিন বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছিল, রাস্তায় সে দেখতে পায় একজন মানুষ পড়ে আছে। অথচ ওই রাস্তা দিয়ে বহু মানুষ চলাচল করলেও কেউ ওই মানুষটির কথা ভাবেনি। রানু সেটি দেখতে পেয়ে খুবই কষ্ট পায় এবং ভাবে মানুষ এতটা নির্দয় হয় কীভাবে! একটা মানুষ পড়ে আছে কেউ মানুষটির কী হয়েছে জানতে চাইলো না। 

রানু গিয়ে মানুষটির পাশে বসে ডাকতে লাগলো। কী হয়েছে আপনার, উঠুন...। কেরে মা তুই আমায় কেন ডাকছিস? আমি রানু। আপনি এভাবে সুয়ে আছেন কেন? কোথায় যাবোরে মা, পেটের ক্ষুধায় আর হাঁটতে পারছিনেরে মা। কী বলেন, উঠুন, এই সামনে আমাদের বাড়ি, চলুন খাওয়া-দাওয়া করবেন। তুই সত্যি আমারে খাওয়াবিরে মা! হা সত্যি চলুন...। 

রানু মানুষটিকে তাদের বাড়ি নিয়ে যায়, অদ্ভুত বিষয় হলো এই যে মানুষটির গা থেকে প্রচুর গন্ধ বেরুচ্ছিলো। রানু সেটি বুঝতেই পারেনি, কিন্তু আমাদের সমাজের কিছু অদ্ভুত মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে হাঁটতেই চাচ্ছিলো না।

রানু তাদের শ্রেণির সব চেয়ে ভালো শিক্ষার্থী নিঃসন্দেহে বলা যায়। তাকে নিয়ে বাবা-মার যেমন অনেক স্বপ্ন, তেমনি শিক্ষকদেরও অনেক স্বপ্ন। তারা ভাবেন, রানু বড় হয়ে একদিন মানুষের মতো মানুষ হবে। যে অনেক মানুষের আশ্রয় হবে। সত্যিইতো রানু এই বয়সেই মানুষের কষ্ট একটুও সইতে পারে না।

রানু যেমন তার মনুষ্যত্বে ভীষণ সুন্দর, তেমনি সে রূপবতী। তার গলার স্বরও ভীষণ সুন্দর। সে খুব ভালো আবৃত্তি করতে পারে। একবার তাদের বিদ্যালয়ের একটা অনুষ্ঠানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘না পাঠানো চিঠি’ কবিতাটি আবৃত্তি করে সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল।

রানুকে একটা বখাটে ছেলে প্রায় বিরক্ত করে, রানু বেপারটা সেভাবে নেয়নি। কিন্তু একদিন সেই ছেলেটি রানুকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়। রানু কিছুতেই রাজি হয় না। রানুর রাজি না হওয়াতে সে রানুকে খুব বেশি বিরক্ত করতে শুরু করে। ঘটনাটি তার বাড়িতে জানাতে চাইলে, সে তাকে হুমকি দেয়, তাকে তুলে নিয়ে যাবে। ঠিক তাই হলো রানুর লাশ পাওয়া গেলো তিন দিন পর। পিশাচের মতো রানুর পুরো দেহ তারা উপভোগ করেছে।

সন্তান নিখোঁজ হওয়া বাবা সন্তান পেলো ঠিকই, কিন্তু...। রানুর লাশের পাশে পাওয়া একটি চিরকুট। এরা আমার সর্বনাশ করেছে বাবা, আমি আর তোমার কাছে গিয়ে দাঁড়াতে পারবো না। আমাকে ক্ষমা কর, তোমরা সবাই ভালো থেকো। আর এই বর্বর সমাজকে বলে দিও, এই সমাজ যেন নিজেই নিজেকে শেষ করে দেয়। বাবা এই সমাজে নারীরা কি আসলেই নিরাপদ? চিরকুটটা পড়ে বৃদ্ধ পিতা রানুর লাশের পাশে ঢলে পড়লেন। 

লেখক: শিক্ষার্থী, নীলফামারী সরকারি কলেজ।

নীলফামারী/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়