ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

গরিবের ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম

আরিফুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ১৩ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১১:৫১, ১৩ অক্টোবর ২০২০
গরিবের ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম

হেলেনা আক্তার। চার বছর যাবত ভুগছেন রক্তনালীর প্রদাহজনিত রোগে। পচন ধরেছে শরীরের নানা অংশে। ইতোমধ্যে কয়েকটি আঙুল খসে পড়েছে। তবে অর্থের অভাবে হচ্ছে না সঠিক চিকিৎসা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে হেলেনার দুর্ভোগের বিষয়টি নজরে আসে মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ফেরদৌস ইসলামের। 

তিনি পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারেন হেলেনা রক্তনালীর প্রদাহজনিত রোগে (ভাসকুলাইটিস) আক্তান্ত। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন ঢাকা মেডিকেলে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শনাক্ত হয় systemic lupus erythematosus (sle) নামক রোগ। সঠিক চিকিৎসার জন্য ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম যোগাযোগ করেন তার সেখানকার পরিচিত চিকিৎসকদের সঙ্গে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন। দীর্ঘ দিন চিকিৎসার ফলে হেলেনা আক্তারের অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল। হাসপাতাল ছেড়ে ফিরেছেন স্বজনদের কাছে। 

হেলেনা ফিরেছেন কিন্তু ডাক্তার ফেরদৌস ইসলামের মানবিক সহায়তাকর্মের গতি পরিবর্তন হয়নি। হেলেনার মতো আরও অনেকেই রয়েছেন, যারা ডাক্তার ফেরদৌসের সহযোগিতায় সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। এদের মধ্যে কাউকে দিয়েছেন বিনামূল্যে চিকিৎসা, কাউকে হেলেনার মতো উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া, কাউকে বিনামূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা ওষুধ-পথ্যের ব্যবস্থা করে দেওয়া কিংবা শত ব্যস্ততার মধ্যেও মাথায় ভরসার হাত বুলিয়ে বলা ‘ভয় কি বন্ধু, আমি তো আছি’। দুর্বিষহ এ সময়ে একজন চিকিৎসকই যে হতে পারেন ‘দেবতা প্যানাসিয়া’ (যিনি সর্বরোগের সমাধান করেন) সেটি তিনি করে দেখিয়েছেন।

কলরিজের কবিতার সেই নাবিকের কথা মনে পড়ে, যিনি মাঝ সমুদ্রে থেকেও একফোঁটা জল পাননি। বর্তমানে চিকিৎসকদের প্রাচুর্য থাকলেও সহায়হীন দরিদ্র রোগীদের হাতের নাগালে পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। সেই মুহূর্তে উদয়াস্ত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম। মহামারিকালীন সময়ে জীবনের ঝুঁকি সত্ত্বেও রোগীদেরই প্রাধান্য দিচ্ছেন তিনি। বিত্তহীন দরিদ্র রোগীর কাছ থেকে পয়সা নেওয়া তার মগজে নেই। রোগীদের জন্য সর্বদাই আপাদমস্তক এই চিকিৎসক।

মহামারিকালীন এ সময়ে তিনি গঠন করেছেন ‘ইয়াং ডক্টরস ফোরাম অব মঠবাড়িয়া’ নামক একটি সেবামূলক সংগঠন। যার মাধ্যমে স্থানীয় তরুণ চিকিৎসকদের একত্রিত করে বিত্ত ও সহায়হীন মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অন্ধকারে আবৃত এ সময়ে আলো ছড়িয়েছে তার টেলিমেডিসিন সেবা। রোগী ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে কল করে তার কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন। এজন্য রোগীকে আলাদা কোনো ফি গুনতে হয় না। স্বপ্রণোদিত হয়েই তিনি এসব করছেন। করোনাকালীন সময়ে রোগীরা তাদের বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে ‘স্টে হোম, স্টে সেফ’ নীতির প্রয়োগ করতেই এ উদ্যোগ বলে জানান। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, এ সময়ে আমি বেশ কয়েকবার ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম ভাইয়ের কাছ থেকে ফোনে চিকিৎসা নিয়েছি। এতে হাসপাতালের রোগীর ভিড় আর সিরিয়ালের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছি।

অনেকেই তার এমন মানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে ‘মানবিক ডাক্তার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। 

ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম বলেন, দুটি তাড়না থেকে আমি মানুষের সেবা করি। প্রথমত, যেহেতু আমার মানুষকে সহায়তা করার সুযোগ রয়েছে, সুতরাং আমার অল্প সহযোগিতায়ও রোগীর বড় উপকার হতে পারে। সেটিই আমার অর্জন বলে মনে করি।

দ্বিতীয়ত, রোগীর জায়গায় নিজেকে স্থাপন করি এবং ভাবি এ মুহূর্তে একজন চিকিৎসকের কাছে আমি কতটা সহযোগিতা চাইতাম। সেভাবেই তাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।

ঘোর অন্ধকারে আলোর মশাল হাতে আবির্ভূত হয়েছেন ডাক্তার ফেরদৌস ইসলাম। সহযোগিতা, চিকিৎসা আর সেবা দিয়ে প্রান্তিক এ অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের ভরসার স্থল হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে একজন করে হলেও এমন ডাক্তার থাকুক, যারা শুধু চিকিৎসকই নয় বরং রোগীর ভরসার স্থলে পরিণত হবে। 

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়