ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে ক্রসকান্ট্রি রাইড

দিবারুল ইসলাম দ্বীপ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৩, ১৮ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৪:২৮, ১৮ অক্টোবর ২০২০
পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে ক্রসকান্ট্রি রাইড

‘দেশটি আমার, দেশটিকে সুন্দর করার দায়িত্ব আমার’-এমন কথা হরহামেশাই মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। কিন্তু কাজে হয়তো খুব কমই আছে, যারা করে থাকেন। 

দেশব্যাপী রয়েছে শত শত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই সংগঠনে আবার হাজারো-লাখো স্বেচ্ছাসেবক দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় যারপর নেই পরিশ্রম করছেন। কেউ কেউ আবার ব্যতিক্রমধর্মী কাজ করে সবার নজরে আসছেন। কেউ হয়তো গোপনে বড় ধরনের উপকার করে যাচ্ছেন। তবে, ভালো কাজগুলো মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। ভালো বিষয় সবার সামনে উপস্থাপন করতে দোষই বা কোথায়!

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ গড়ে তোলার সচেতনতা সৃষ্টিতে বিডি ক্লিন এবং ময়মনসিংহ সাইক্লিস্টের এক অভাবনীয় উদ্যোগ ছিল ‘ক্রসকান্ট্রি রাইড’। এ রাইডে অংশ নিয়েছিলেন, লং রাইডের সমন্বয়ক আশিষ মোদক, লং রাইডের সহ-সমন্বয়ক রেজাউল হক, বাইক ফ্রাইডের সমন্বয়ক আশরাফুল ইসলাম, অ্যাডমিন বিজয় সরকার এবং সদস্য অজিত।

আশিষ মোদকের মুখেই ব্যতিক্রমধর্মী রাইডটির গল্প শোনা যাক। সেদিন ছিল ১৬ জানুয়ারি, ২০২০। ভোর ৬ টায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট জিরোপয়েন্ট থেকে রাইড শুরু করে ১৮ জানুয়ারী বিকাল সাড়ে ৫টায় কুয়াকাটা জিরোপয়েন্টে এসে আমাদের ক্রসকান্ট্রি রাইডটি সফলভাবে শেষ করি! আমাদের সর্বোট সময় লেগেছে ৬১ ঘণ্টা ৩০মিনিট।

আমরা ৫ জন বের হয়েছিলাম, কিন্তু গাজীপুর এসে একজন আর আমাদের সাথে আসতে পারলো না। শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে ফিরে গেলো ময়মনসিংহে। তার জন্য আমরা সবাই মর্মাহত হয়েছি। পরে আমরা বাকি ৪ জন ঢাকায় থেকেছি রাতে।

আমরা ১৭ তারিখ দুপুর ১২টায় দ্বিতীয় দিনের রাইড শুরু করে মাওয়া ফেরিঘাট পাড় হই সাড়ে ৫টায়। আগে পরিকল্পনা ছিল বরিশাল থাকবো, কিন্তু ঘাটে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে দেখি যে আমাদের বরিশাল যেতে কমপক্ষে রাত ২টা বাজবে। পরে আমরা তাৎক্ষণিক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেই যে, আমরা বরিশাল থাকবো না। একবারে সারারাত সাইক্লিং করে কুয়াকাটা চলে যাবো।

আমরা দ্বিতীয় পরিকল্পনা অনুসারে ২৯ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে প্রায় বাকি ৩০০ কিলোমিটার সাইক্লিং করে কুয়াকাটা এসে আমাদের ‘ক্রসকান্ট্রি' রাইডটি সম্পন্ন করি।

‘ময়মনসিংহ সাইক্লিস্ট’-এর জন্য প্রথম অর্জন, যদিও খুব কষ্টসাধ্য ছিল, যেহেতু আমরা সবাই নতুন রাইডার। তারপরেও সবার উৎসাহ এবং ভালোবাসা আমাদেরকে এমনভাবে অনুপ্রাণিত করেছে যে, এই কষ্টটাকে কিছুই মনে হয়নি।

আমরা শুধু ক্রসকান্ট্রি রাইডই দেইনি, আমরা চেষ্টা করেছি সাধারণ মানুষকে ‘পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সচেতন করতে’। আমরা সবাই নিজ নিজ সাইকেলে বহন করেছি ‘বিডি ক্লিন-ময়মনসিংহ’-এর পরিচ্ছন্নতার বার্তা। এ থেকে যদি একজনও সচেতন হয়ে থাকেন, তাহলে সেটাই আমাদের সফলতা।

আমরা চাই আগামীর প্রজন্মকে একটি ‘পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’ উপহার দিতে। সবার সহযোগিতা থাকলে সেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বর্ষ পূর্তির আগেই সম্ভব। আমাদের কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে। পরিচ্ছন্নতার বার্তা ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে। আমরাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরিচ্ছন্নতার বার্তা ছড়িয়ে দেবো।

‘বিডি-ক্লিন’ সংগঠনটি পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে যে পরিচ্ছন্নতার আন্দোলন শুরু করেছিল, আমরাই সেটা শেষ করবো ইনশাআল্লাহ।

আমরা ক্রসকান্ট্রির জন্য ‘হালুয়াঘাট থেকে কুয়াকাটা’ নির্ধারণ করেছিলাম। কারণ, প্রথমত সমুদ্রের মধ্যে সরাসরি প্লাস্টিক-বর্জ্য গিয়ে পড়ে। তাই এই দিকটাতে সচেতনতা জরুরি। আর দ্বিতীয়ত, এটা অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বের, তাই আমরা যেহেতু সবাই ছাত্র, সেহেতু কম সময়ের মধ্যে যেন সম্পন্ন করতে পারি।

লেখক: শিক্ষার্থী, দ্বাদশ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ।  

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়