ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৬, ১৯ অক্টোবর ২০২০  
জবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১৫তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস এবং ১৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল ২০ অক্টোবর। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২০ অক্টোবরকে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

করোনা মহামারিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশনা, বেলুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভ উদ্বোধন, ভার্চুয়াল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে বহু প্রতিক্ষীত একমাত্র ছাত্রী হলের উদ্বোধন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৫৮ সালে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৮৭২ সালে নাম বদলে বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। ১৮৮৪ সালে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজ ও ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজের রূপ পায়। 

পরবর্তী সময়ে ১৯৪৯ সালে আবার কলেজেটিতে স্নাতক পাঠ্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে এটিকে সরকারিকরণ করা হয়। কিন্তু পরের বছরেই আবার এটি বেসরকারি মর্যাদা লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা পূর্ববর্তী-পরবর্তী সময়ে সব আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এ প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাসের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর নানা সীমাবদ্ধতা ও সংকট সত্ত্বেও একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মপ্রকাশ জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা, অনুভূতি ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

ইব্রাহিম শেখ, মার্কেটিং বিভাগ

ভালোবাসার আরেক নাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। একজন মানুষের জন্ম তারিখ বা জন্মদিবস যেমন তাকে অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু আলাদা করে তোলে, তেমনি একজন ছাত্রকে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিবস ততটাই আলাদা করে। এটি আমার দ্বিতীয় বাড়ি। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, আড্ডা সবকিছুর কেন্দ্রস্থল। 

শিক্ষা, গবেষণা, শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম ও নিজ গুণাবলীতে দেশে-বিদেশে সর্বত্রই অনন্য হয়ে উঠুক আমাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম বর্ষে প্রত্যাশা থাকবে শৃঙ্খল, ছাত্রবান্ধব ও বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা সমৃদ্ধ আগামীর ক্যাম্পাস।

মুন্নি আক্তার প্রিয়া, লোকপ্রশাসন বিভাগ

একটি বিশ্বমানের শিক্ষাঙ্গনে পড়বো, এটা আমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল। এখন আমি সেই স্বপ্নের একজন গর্বিত সদস্য। ভাবতেই একরাশ ভালো লাগা মনটাকে আনন্দ দেয়। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আমার ভাবনা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শতভাগ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হোক। রাজনৈতিক কিংবা দলীয় মতাদর্শ যেন কোনোভাবেই আমাদের সংকুচিত করে না দেয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চিন্তার অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। এখানে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে মনোজগতের উৎকর্ষ সাধিত হয়। সেই সঙ্গে বন্ধ হোক নিয়োগ বাণিজ্য। প্রসাশনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে জাতীয় স্বার্থে সংকীর্ণতা পরিহার করলে, বিশ্ববিদ্যালয় অনেক আগাবে। আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের শিক্ষাঙ্গন হিসেবে আবিষ্কার করতে চাই। 

নিপা রানী সাহা, আইন বিভাগ

দেশসেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের ঠিকানা নিশ্চিত করা আমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল। বর্তমানে আমি সেই স্বপ্নের একজন গর্বিত সদস্য। জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলো পার করছি এই ক্যাম্পাসে। ১৫তে পা রাখছে ভালোবাসার প্রিয় ক্যাম্পাস জবি। শুভ জন্মদিন আমার আমার প্রাণের ক্যাম্পাস। 

একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভাবনা, একদিন শিক্ষার গুণগত মানের দিক থেকে সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচনা করা হবে সেই আশায় বুক বেঁধে আছি। বিশ্ববিদ্যালয় হল মুক্তচিন্তার অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শতভাগ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। 

রকিবুল ইসলাম, পরিসংখ্যান বিভাগ

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পূর্ণ করে ১৬ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা প্রিয় এই প্রতিষ্ঠানটি। 

জবি দিবসে প্রত্যাশা থাকবে দ্রুত আবাসিক সমস্যা নিরসনের। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে নানা ধরনের অরাজকতা ও ছাত্র সমস্যা সমাধানে চাই জকসু নির্বাচন। এছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে সব ধরনের প্রযুক্তিগত ত্রুটি দূর করে চাই বেশি বেশি গবেষণা ও সমুন্নত শিক্ষাব্যবস্থা। জবির নতুন বছরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হোক আত্মিক সম্পর্ক। প্রিয় ক্যাম্পাসের নাম আরও ছড়িয়ে পড়ুক পৃথিবীজুড়ে। শুভকামনা জবি। 

অনন্য প্রতীক রাউত, আইন বিভাগ

অগ্রজদের কাছ থেকে নানা আনন্দঘন যেসব দিনগুলোর কথা শুনেছি, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’। অগ্রজদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেমোরি হিসাবে শেয়ার করা পোস্ট দেখে আফসোস করা ছাড়া আমাদের আর করার মতো কিছু নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সারাদিন অনুষ্ঠান, নাচ-গান করে পার করা যেত। জুড়ে দিতাম বন্ধুত্বের ভালোবাসায় ঘেরা রঙিন সব ছবি। 

মাত্র একযুগেই প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে। তবে, রয়েছে অবকাঠামোগত ও আবাসিক সংকট, যা প্রতিনিয়ত পাঁচ ধাপ আগালে দু’ধাপ পিছিয়ে দিচ্ছে জবিকে। নবনির্মিত ছাত্রী হল সে সংকট অনেকাংশে দূর করবে খুব স্বাভাবিক ভাবেই। তবে রয়ে যাবে ছেলেদের আবাসন সমস্যা। প্রত্যাশা থাকবে, সব বাঁধা কাটিয়ে নতুন ক্যাম্পাসে নতুনভাবে প্রাণের জবি এগিয়ে যাবে অনেক দূরে। পরিণত হবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুযোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে। শুভকামনা নিরন্তর জবিয়ানের তরে।

সাদিয়া সাবাহ্, নৃবিজ্ঞান বিভাগ

হাঁটি হাঁটি পা করে ক্যাম্পাসে প্রায় ৪টা বছর কাটিয়ে দিলাম। চিরচেনা সেই ছোট ক্যাম্পাটিও ১৫ বছর অতিবাহিত করলো। এই ১৫ বছরে অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত থেকেও নিজ মহিমায় উজ্জ্বল প্রিয় ক্যাম্পাস। 

২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। প্রতিবছর নানা কর্মকাণ্ড ও আলোকসজ্জার মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন হতো। এবার করোনার কারণে হয়তো ততটা উৎসবমুখরভাবে উদযাপন করা হবে না। তবুও সাদামাটাভাবে দিবসটি উদযাপন হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসেই (২০ অক্টোবর) উদ্বোধন করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হল। এটিই এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের পাওনা। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হবে এবং সব সমস্যা কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি আরও সামনে অগ্রসর হবে, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে এই প্রত্যাশা।

সাদিয়া রহমান মুমু, ফিন্যান্স বিভাগ

নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৫তম বছরে পদার্পণ করেছে। প্রতি বছরের মতো উদযাপন দিবস আড়ম্বরপূর্ণ হচ্ছে না। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব মেনে স্বল্প পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওইদিন জবির একমাত্র ছাত্রী হল, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল উদ্বোধন হবে। 

তামান্না ইসলাম বৃষ্টি, মনোবিজ্ঞান বিভাগ

প্রাণের বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ বছরে পদার্পণ। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের আরেকটি অধ্যায়ের সূচনায় অতীতের সব অপ্রাপ্তি, অপূর্ণতা আর বাঁধা কাটিয়ে সাফল্যের সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাক ভালোবাসার ‘জবি’। 

করোনার কারণে বিগত বছরগুলোর তুলনায় কিছুটা ভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হলেও আমাদের সবার জন্য আনন্দের বিষয় হচ্ছে ছাত্রী হলের উদ্বোধন। প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে হল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন। আশা করি আমাদের সব স্বপ্ন একদিন বাস্তবায়ন হবে। বর্তমানে আমরা সবাই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিন পার করছি। তবে প্রত্যাশা একটাই, মহামারি কাটিয়ে খুব শিগগিরই ফিরবো আমাদের চিরচেনা ক্যাম্পাসে।

ঢাবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়