‘শাস্তি নিশ্চিত হলে কমবে ধর্ষণ’
মুন্সী মুহাম্মদ জুয়েল || রাইজিংবিডি.কম
বর্তমানে দেশে করোনার চেয়ে বড় মহামারি হচ্ছে ধর্ষণ নামক ঘৃণিত অপরাধ। একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৪ জন নারী ধর্ষিত হচ্ছেন। অফিসের বস, রাস্তার বখাটে, এলাকার ক্ষমতাবান ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নামক পবিত্র জায়গার শিক্ষক, এমনকি সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা অর্থাৎ থানাতে পুলিশ দ্বারা ধর্ষণের শিকার নারীরা হচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
নিজ বাসায়ও নিরাপদ নয় আজ নারীরা। চার বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধাও রেহাই পাচ্ছে না এই ধর্ষণ থেকে। এ যেন একাত্তরের ভয়াবহতাকে আবার জাগ্রত করার আপ্রাণ চেষ্টা।
ধর্ষণের কারণ দর্শাতে গেলে সামনে অনেকগুলো মতামত চলে আসে। যেমন- কেউ বলেন পর্যাপ্ত পর্দা এবং শালীন পোশাকের অভাব, কেউ বলেন আইন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব, কেউ বলেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এ জন্য, কেউ বলেন পুরুষের নিচু মন-মানসিকতার কারণে, কেউ বলেন নোংরা চলচ্চিত্রের প্রভাব, কেউ বলেন সুশিক্ষার অভাব, কেউ বলেন নারী-পুরুষ সমতার অভাব ইত্যাদি ইত্যাদি।
যারা বলেন, পর্দার অভাব বা অশালীন পোশাকের প্রভাব, তাদের বলছি, তাহলে চার বছরের শিশু এবং ৬০ বছরের বৃদ্ধা কেন ধর্ষিত হচ্ছে! যারা বলেন, পর্যাপ্ত আইন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব, তাদের বলছি, তাহলে আমেরিকার মতো দেশে কেন প্রতি ১৫ মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হচ্ছে! সেখানে তো আইনের কোন ত্রুটি নেই।
যারা বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বলে ধর্ষণ হচ্ছে, তাদের বলছি, দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, শিক্ষামন্ত্রী একজন নারী, প্রধান স্পিকার একজন নারী এবং কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যাই ঢের। নারী-পুরুষ সমতা যদি না থাকতো, তবে আজও এই দেশের নারীরা রান্না ঘর থেকে বের হয়ে জাতীয় সংসদে ভাষণ দিতে পারতেন না।
ধর্ষণকে যদি চিরতরে নিঃশেষ করতে হয়, তবে উল্লিখিত প্রত্যেকটা কারণের সমাধান করতে হবে। যদি শুধু একটি বা দু’টি কারণ সমাধা করা হয়, তবে ধর্ষণ নির্মূল করা অসম্ভব। যুক্তিবিদ্যার ভাষায়, একে ‘বহুকারণবাদ’ বলা হয় অর্থাৎ একটি কাজের পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকে। যদি শুধু পর্দা করা হয় কিন্তু আইন না থাকে, তবে ধর্ষণ হবে। যদি আইন থাকে কিন্তু পোশাকে সৌন্দর্য প্রকাশ না হয়, তবুও ধর্ষণ হবে।
নোংরা চলচ্চিত্র বা পর্নগ্রাফি যৌন উত্তেজনা উদ্দীপকে সাহায্য করে। একজন পর্ন আসক্ত ব্যক্তি ‘বোন আর পর্নস্টারের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পায় না। এছাড়াও পর্নগ্রাফি এবং বিজ্ঞাপনগুলোতে নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে তুলে ধরছে, ফলে নারীর প্রতি পুরুষের নিচু মন-মানসিকতার সৃষ্টি হচ্ছে। সুশিক্ষা অর্থাৎ বাস্তবমুখী শিক্ষার অভাবেও ধর্ষণ হয়। নৈতিকতা আমরা শুধু বইয়ের পাতায় পড়ি আর পরীক্ষার খাতায় লিখি, কিন্তু তা পালন করতে অপরগ।
সুতরাং বলা যায়, ধর্ষণকে রুখতে হলে প্রয়োজন সব সমস্যার যথাযথ এবং যুক্তিযুক্ত সমাধান। বাস্তবমুখী শিক্ষার প্রসার। সমাজে নৈতিকতা কায়েম করা। আধুনিকতার নামে অপসংস্কৃতির প্রয়োগ না করা। সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়া প্রত্যেক মা-বাবার উপর অবশ্যই কর্তব্য করে দেওয়া।
নোংরা চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন এবং পর্নগ্রাফি বয়কট করা। পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধন তৈরি করা। নারীর প্রতি সম্মান করা প্রত্যেক পুরুষের দায়িত্ব এবং কর্তব্য হওয়া উচিৎ। কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করা। কারণ শাস্তিকে শয়তানও ভয় পায়।
লেখক: শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্ট অব ফিলোসফি, চট্টগ্রাম কলেজ।
চট্টগ্রাম/মাহি
আরো পড়ুন