ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

২৮ বছরে কতটুকু এগিয়ে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় 

জিসান তাসফিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০২, ২২ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১২:১৭, ২২ অক্টোবর ২০২০
২৮ বছরে কতটুকু এগিয়ে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় 

গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল গতকাল ২১ অক্টোবর। সব বয়সী মানুষের জন্য উন্মুক্তভাবে শিক্ষা বিস্তারের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টান্ত অনন্য। 

প্রত্যেকটি মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা রয়েছে, যা সর্বোতভাবে স্বীকৃত। শিক্ষা তার মধ্যে একটি। যেকোনো মানুষই শৈশব থেকে মৃত্যুর ঠিক পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণ করে থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তার মধ্যে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 

আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চালু হয় সেই হাজার বছর আগে থেকে। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক দিয়ে দেশে তৃতীয় ও বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় এটি। উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণ শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে চলা বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। 

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সংক্ষেপে বাউবি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে পরিচিত। খুব পরিচিতি পেলেও বাউবিকে অধিকাংশ মানুষই বুঝতে পারে না। কেননা, বাউবির মূল উদ্দেশ্য তথ্য ও প্রযুক্তিসহ সব মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করা। বাউবি আইন ১৯৯২-এর ৯ ধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার স্থাপনা বাউবিতে হয়েছে। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা বলার কারণ- আধুনিকতা বলতে আমরা বুঝি উন্নত প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, বিভিন্ন ডিভাইস, ডিজিটাল ক্লাসরুম ইত্যাদির ব্যবস্থা। এ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে তথা বাউবিতে পড়াশোনা করা যায়। 

আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখি। এর মধ্যে বড় উদাহরণ হল করোনা মহামারিতে দেশের সব প্রতিষ্ঠান যে শিক্ষাপদ্ধতি চালু রেখেছে, সেটাও এক ধরনের দূরশিক্ষণ শিক্ষাপদ্ধতি। আবার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাউবির শিক্ষাবিস্তার করা যায়। 

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাউবি আলাদা, কারণ বাউবিতে যেকোনো বয়সের মানুষ অধ্যয়ন করতে পারে, নিকটস্থ স্টাডি সেন্টার রয়েছে ও আছে দূরশিক্ষণ শিক্ষাপদ্ধতি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোকে বাউবি নিজেদের স্টাডি সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

বর্তমানে গাজীপুরে বাউবির মূল ক্যাম্পাস, দেশের বিভিন্ন স্থানে ১২টি আঞ্চলিক ক্যাম্পাস ও ৮০টি উপ-আঞ্চলিক ক্যাম্পাস বা কেন্দ্র রয়েছে। মূল ক্যাম্পাসে বর্তমানে এমবিএ, এমফিল ও পিএইচডি চালু আছে। এছাড়া ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রের ক্যাম্পাসে বাউবির নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ৮টি অনার্স/মাস্টার্সের বিভাগ/কোর্সসহ মোট ১০টি কোর্স চালু রয়েছে।  এছাড়াও ১৫০০ এর অধিক স্টাডি সেন্টারে এসএসসি থেকে এমবিএ পর্যন্ত অনেকগুলো কোর্স চালু রয়েছে। বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী শিক্ষার্থী, নিয়মিত শিক্ষার্থী ও অনিয়মিতরা অধ্যয়ন করছে।  

বাউবির শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, অধিকাংশ শিক্ষার্থীই কর্মজীবী কিংবা চাকরিজীবী। কিন্তু সে অনুযায়ী বাউবিতে কারিগরি শিক্ষামূলক কোর্স চালু নেই। সাধারণ ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। বাউবিতে প্রায় ৬ লক্ষ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। এর বিশালসংখ্যকই কর্মজীবী শিক্ষার্থী, যারা বাউবিতে আছেন। আমাদের দেশের এই বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থীকে তত্ত্বীয় নয় বরং কারিগরি শিক্ষা প্রদান করা প্রয়োজন। একজন শিক্ষার্থী সাধারণত কাজ শেষে তত্ত্বীয় শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী কম হয়। কারণ, এটি তার কর্মে প্রয়োজন নেই। কিন্তু কর্মমুখী শিক্ষা হলে সেখানে শিক্ষার্থী নিজের ইচ্ছায় শিক্ষাগ্রহণ করবে। কারণ, এটি তার পেশাগত কাজে লাগবে, অন্যথায় শুধু সনদের জন্য আসবে ও অসাধু উপায় অবলম্বন করার চেষ্টাও করবে প্রয়োজনে। 

এছাড়া কাঠামোগত ও সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী বাউবি উন্নত হয়নি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় যে, তারা একাডেমির বাইরেও অন্যান্য শিক্ষাগ্রহণে যথেষ্ট সুযোগ পেয়ে থাকে। বাউবির শিক্ষার্থীদের জন্য এই সব সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। প্রতিটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে বাউবির নিজস্ব অর্থায়নে কিংবা সরকারি বাজেটে উচ্চ শিক্ষার ক্যাম্পাস করা যেতে পারে। যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের সেমিনারে অংশগ্রহণ করবে। 

এছাড়াও স্বল্পমেয়াদি প্রফেশনাল কোর্স চালু হতে পারে। প্রয়োজন আরও লাইব্রেরির ব্যবস্থা করা, ই-বুক আধুনিক ও সহজলভ্য করা প্রয়োজন। ই-বুকে শুধু বাউবি নয়, দেশের অন্য শিক্ষার্থীরাও এর সুবিধা নিতে পারবে। প্রতিটি উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রে লাইব্রেরি স্থাপন করা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন। তাহলে বাউবির গরিব শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে কাজের ফাঁকে অধ্যয়ন করতে পারবে। উপ-আঞ্চলিক পর্যায়ে স্বল্পমেয়াদি কারিগরি কোর্স চালু করা যেতে পারে, যাতে বাউবিসহ অন্য শিক্ষার্থীরা লাভবান হবে। 

দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন, যেটাকে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বলে, সেটা থাকে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়ন শেষে শিক্ষার্থীদের সাফল্য জানা যায়। দীর্ঘ ২৮ বছরে এটির অনুপস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের জন্য অকল্যাণকর। ফলে, বর্তমানে এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। বাউবির কেন্দ্রীয়, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক পর্যায়ে এটা করা যেতে পারে।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

বাউবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়