ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা  

সাইফুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৯, ২৩ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৫:৫৩, ২৩ অক্টোবর ২০২০
অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা  

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাব্যবস্থা চরম সংকট বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। আর করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পরিষদ। ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে ইচ্ছুক নন উপাচার্যরা। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আগের মতো ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাবে।

অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ

ইলেকট্রনিক ডিভাইসের অপর্যাপ্ততা

এই বছর ১৩ লাখ ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী ছিল। এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি একটা জরিপে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ১৪ শতাংশের কোনো স্মার্টফোন নেই। সেখানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে তার সংখ্যাটা দ্বিগুণ হবে। যাদের স্মার্ট ফোন নেই, তারা কীভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে?

অপ্রতুল ইন্টারনেট সংযোগ

ইন্টারনেট সংযোগ গ্রামাঞ্চলে অপ্রতুল। গ্রামে থ্রি জি ঠিকমতো কাজ করে না। সেখানে গ্রামের শিক্ষার্থীরা কীভাবে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা শেষ করবে, সেটা একটা চ্যালেঞ্জ। এতে করে তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

নকল প্রবণতা
নকল প্রবণতা প্রতিরোধ একটি চ্যালেঞ্জিং হবে। দেখা গেলো ৩-৪ জনকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস দিয়ে বসিয়ে রাখলো ক্যামেরার অগোচরে। ইন্টারনেট ব্রাউজ করে উত্তর বের করে পরীক্ষা শেষ করলো। যত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হোক না কেন নকল প্রতিরোধ অসম্ভব হবে। এতে মেধার অবমূল্যায়ন হবে।

প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব

বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের আইসিটি নলেজ এখনও কম। তারা এপস ইন্সটল, প্রোগ্রামটি অপারেট করতে না জানা এবং অনলাইনে পরীক্ষার পূর্ব ধারণা না থাকলে বিড়ম্বনার শিকার হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

চ্যালেঞ্জ প্রতিরোধে করণীয়

প্রতিটি জেলায় কেন্দ্র স্থাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রমকে ইউজিসি অনুসরণ করতে পারে। উল্লেখ্য এই বছর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হবে। অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি জেলায় কেন্দ্র স্থাপন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।

জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে কমিটি

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে পরীক্ষা নিতে পারে।

পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে প্রশ্ন প্রিন্ট

সুনির্দিষ্ট সরকারি প্রেস থেকে পরীক্ষা শুরুর ২ ঘণ্টা আগে প্রশ্ন প্রিন্ট করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। এতে করে প্রশ্ন ফাঁসের সম্ভাবনা থাকবে না।

সরকারি কর্মকর্তাদের পাওয়ার

পাবলিক পরীক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেট যেমন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন, তেমনি নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মকর্তাকে পরিদর্শনের দায়িত্ব দেওয়া। কোনো পরীক্ষার্থী নকলের আশ্রয় নিলে বহিষ্কার করার নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে।

পরীক্ষা চলাকালীন মাস্ক খুলে রাখবে

যখন পরিক্ষক পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে স্বাক্ষর করবেন, তখন পরীক্ষার্থীর ছবি ও চেহারা ভালোভাবে দেখে খাতায় সাইন করবেন।

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

যদি কোনো পরীক্ষার্থী ডিজিটাল ডিভাইস অথবা অসদুপায় অবলম্বন করে, তাহলে উত্তরপত্র বাতিলসহ জেল জরিমানা বা যেকোনো শাস্তি প্রদান করতে পারে। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় লক্ষ করেছি। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে জেলা প্রশাসন।

এসব পরিস্থিতিতে স্বচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিশ্চিত করতে ইউজিসি অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে। 

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়