ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দীর্ঘ বন্ধে শিক্ষকদের দিনলিপি 

তানজিন রোবায়েত রোহান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৯, ২৭ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৬:৫৪, ২৭ অক্টোবর ২০২০
দীর্ঘ বন্ধে শিক্ষকদের দিনলিপি 

সাড়ে সাত মাস যাবত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। আগের মতো শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া বা পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের তেমন কোনো চাপ নেই শিক্ষকদের। করোনা না থাকলে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে এমন সময় শিক্ষকরা হয়তো ক্লাস নেওয়া বা পরীক্ষার কোনো কাজে ব্যস্ত থাকতেন। তবে এর মধ্যেও তাদের গবেষণা কিংবা সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম থেমে নেই। 

করোনার এই গৃহবন্দি সময়টা কীভাবে কাটাচ্ছেন শিক্ষকরা, এ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছে ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তানজিন রোবায়েত রোহান।   

সাইফুল ইসলাম, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক। তিনি বলেন, করোনার এই সংকটকালে দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে শুরু থেকেই আমি সব সেবামূলক কাজে তৎপর ছিলাম। প্রথমত, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে আমরা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ল্যাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করি ও সেগুলো পুরো কলেজের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট ও হলের কর্মকর্তাদের মধ্যে  বিতরণ করি। এমনিভাবে ফেসবুক ও কিছু অনলাইন পত্রিকায় করোনার উপর বেশ কয়েকটি বিজ্ঞানভিত্তিক ও জনসচেতনতামূলক প্রবন্ধ লিখেছি।

পেশাগত দায়িত্ব ও কলেজ প্রশাসনের নির্দেশে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস নেওয়া ও শিক্ষার্থীদের কানেক্টেড রাখতে অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ চালু রাখছি। অনলাইনে একাদশ শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা পরিচালনাসহ রুটিনমাফিক নিয়মিত অনলাইন ক্লাস নিচ্ছি।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে কলেজের নিজস্ব ডিজিটাল স্টুডিওতে উচ্চমাধ্যমিক রসায়ন ২য় পত্রের উপর মানসম্পন্ন ক্লাসের রেকর্ডিংয়ে অংশগ্রহণ করেছি। নতুন কিছু সফটওয়্যার ও অ্যাপসের কাজ শিখেছি, যা পেশাগত জীবনে দক্ষতার জন্য কাজে আসবে। অনলাইন শপ থেকে একটি ইনফ্ল্যাটরি রাবার বুট ক্রয় করেছি। অবসরে পুকুরে রাইড করা ছাড়াও বসে বিজ্ঞানভিত্তিক বই পড়া ও সঙ্গীত চর্চা করে সময় কাটাচ্ছি। 

কাফিল কায়সার, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের পদার্থ বিভাগের প্রভাষক। তিনি বলেন, করোনার শুরু থেকেই আমি দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি নিজে সচেতন ছিলাম ও অন্যদের সচেতনতা সৃষ্টিতে তাগিদ দিয়েছি। করোনাভাইরাসে কলেজ বন্ধের শুরু থেকেই অনলাইনে অনার্স ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নিয়েছি। 

দীর্ঘ এই বন্ধের সময়ে কাছের ও দূরের শুভাকাঙ্ক্ষীরা মিলে করোনা জয়ে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। পরিবারকে সময় দিয়েছি ও স্বজনদের খোঁজ নিয়েছি। অবসর সময়ে বই পড়েছি ও বিভিন্ন কোর্স করেছি, যেগুলো আগে অসম্পূর্ণ ছিল। 

মিজানুর রহমান সোহেল, কুমিল্লা জিলা স্কুলের বাংলা বিভাগের সহকারী শিক্ষক। তিনি বলেন, করোনার এই দীর্ঘ বন্ধে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের কিছুটা হলেও ক্ষতি হয়েছে। এমনেই মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা সময় পেলে পড়াশোনা থেকে দূরে সরতে কার্পণ্য করে না। আর অন্যদিকে এই দীর্ঘ বন্ধে কিছু শিক্ষার্থীর পড়াশোনা লাটে উঠেছে। এমতাবস্থায় আমি শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে অভিভাবকদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নিয়েছি। জুমের মাধ্যমে ক্লাস নিচ্ছি। ইউটিউব ও স্কুলের ফেসবুক পেজে ক্লাস আপলোড করছি।

জুমের মাধ্যমে স্কুল কর্তৃক আয়োজিত সাপ্তাহিক মিটিং করেছি। বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে রুটিনমাফিক সহযোগিতা করছি। অবসর সময় বই পড়ি ও পরিবারকে সময় দিচ্ছি। এছাড়াও সামাজিক সচেতনতামূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

মো. বাচ্ছু মিঞা, বাগানবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, করোনার এই দীর্ঘ বন্ধে সংসদ টেলিভিশনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস করালেও নিজ উদ্যোগে আমাদের বিদ্যালয় থেকে সহকারী শিক্ষকদের নিয়ে আমরাও অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছি। করোনার এই বন্ধের সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া কিংবা পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করার মতো কোনো চাপ না থাকলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশক্রমে অনলাইনে প্রাতিষ্ঠানিক সব কাজই করছি। 

উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে জুম অ্যাপসে মিটিং করে সে অনুযায়ী আবার নিজ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে মিটিং করছি। প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নিয়েছি। করোনার সচেতনতা নিয়ে সবাইকে সাহস যুগিয়েছি। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। নিজ এলাকাও অনেক ছাত্র-শিক্ষক মিলে সেবামূলক সংগঠন করেছি। মানুষকে ‘ভয় নয়, সচেতনতায় করোনা জয়’ করতে বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

কুমিল্লা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়