ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

স্মৃতিতে আমার স্কুল

তাসনুভা মেহ্জাবীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৫, ২৮ অক্টোবর ২০২০  
স্মৃতিতে আমার স্কুল

আমার স্কুলের নাম ‘ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক সেকেন্ডারি স্কুল’। খুলনার জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্টের কেন্দ্রবিন্দু আমাদের স্কুলটি। খেলার মাঠ আর সামনে থাকা সংশপ্তক সেনানিবাসটিকে পূর্ণতা দিয়েছে৷ মাঝে মাঝে মনে হয় সবচেয়ে ছোট এই সেনানিবাসেই সবচেয়ে সুন্দর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। স্কুলটি খুব সাধারণের মাঝেই কেমন বিশেষত্ব নিয়ে রেখেছে, আমাদের এত ভালোবাসা কীভাবে সামলায় সাপের মতো ভবনটা!

শিক্ষার্থীর জীবন, বিশেষ করে স্কুল শিক্ষার্থীদের জীবনের গণ্ডি সাধারণত খুবই স্বাভাবিক থাকে। বাসা থেকে স্কুল, স্কুল থেকে বাসা, দুয়েকটা টিউশন অথবা কোচিং, সবকিছুতেই যেন পড়াশুনা আর এসবের ফাঁকে কিছু বিশ্রাম ও বিনোদন; এর বেশি কিছু শিক্ষার্থীর জীবনে তেমন প্রভাব ফেলে না। 

আমার জীবনও এমন গদবাঁধাই চলতে থাকুক, তাই যেন আশা করছিলাম। এই গদবাঁধা জীবনে আমরা গড়ে তুলি সুন্দর মুহূর্তের, সুন্দর কিছু সঙ্গীর সঙ্গ পাই ও যখন স্কুলটাকে ছেড়ে আসি, তখন চোখ ভিজে আসে ছকবাঁধা জীবনটার জন্যই!

আমি এসব কেন বলছি! আমি তো এখনো স্কুলেই পড়ি। আমার জীবন এখনো স্কুলটাজুড়ে রয়েছে, আমার সুন্দর সঙ্গীদের নিয়ে সুন্দর মুহূর্ত সৃষ্টি করার এখনো অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমি ও আমার মতো অনেক শিক্ষার্থী এখন স্কুলজীবনে নেই, সবাই বাসায় বন্দি রয়েছি খাঁচার পাখির মতো। আর ছটফট করছি প্রতিদিন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে৷ অনেককে স্কুলটাকে, সঙ্গীগুলোকে শেষবার না দেখেই বিদায় জানাতে হচ্ছে স্কুল জীবনকে, অনেকের তো জীবনকেই! আমার মনেও হঠাৎ শঙ্কা আসে, স্কুলজীবনের ইতি টানার সুযোগ পাবো তো!

আমার দিনের বেশ বড় একটা অংশজুড়েই ছিল স্কুলটা। সকালে স্কুলে যেতাম দেরি করে, কোনোমতে হাঁচড়ে-পাঁচড়ে অ্যাসেম্বলিতে দাঁড়াবো। অ্যাসেম্বলিতে এদিক-সেদিকে কথা বলতে গিয়ে প্রতিদিনই স্যারদের ঝাঁড়ি একদম ফ্রি, হুজুর স্যার থাকতে তিনি আসতেন, আর ম্যামেরা তো চোখ দিয়েই সব বুঝিয়ে দিতে পারেন। 

অ্যাসেম্বলি শেষে ক্লাসে গিয়ে কিছু সময় পেয়ে সব বসে হাবিজাবি কথা বার্তায় মশগুল। অনেক সময় হোমওয়ার্ক করতে হতো পাল্লা দিয়ে! বাসার সময় যে কী করে কাটিয়ে দিতাম তখন... ক্লাসের আঁতেলগুলো সামনের সিটে বসা নিয়ে যখন মারামারি করতো, সেই সময় আমি আর আমার হোমিরা পেছনে বসে হাবিজাবি কারণ নিয়ে কথা বলতাম, আর অকারণে হাসতাম। 

আহা এসব মনে করতেই নস্টালজিয়ার শেষ পর্যায়ে চলে যাই যেন! আমার হোমি নেশরা দ্য প্রেগনেন্ট, মারিয়া দ্য মাবলু, ফাতেমা দ্য ফামেল, সেঁজুতি দ্য চালকুমড়াসহ পুরো ক্লাসটা... এদের সঙ্গে আরও কত সুন্দর মুহূর্ত ভাগাভাগি করার কথা ছিল! বেরসিক করোনা সবই কেড়ে নিলো।

স্কুলটা শুধু ক্লাসরুমে সীমাবদ্ধ ছিল না কখনোই। ক্লাসের ফাঁকে বের হলে দেখা হতো সিনিয়রদের সঙ্গে, জুনিয়রদের সঙ্গে। আলম চাচার সঙ্গে দেখা হওয়ার আর উনার বকা দেওয়া সত্যি খুব মিস করছি। আর আমাদের স্পোর্টসের কথা মনে পড়লে চোখ সত্যিই এবার ভিজে যাবে। আগামী বছর স্পোর্টস হবে তো! 

আমার ড্রাম লিডার হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে, তা ইতোমধ্যেই আঁচ করতে পেরেছি। কিন্তু স্পোর্টসের সময়টায় সবার জন্যই যেন স্কুলজীবনের সেরা স্মৃতির বাক্স খুলে বসে। ভাবতে খুব কষ্ট লাগে, এ বছরের স্মৃতিটাই শেষ স্মৃতি হবে হয়তো! আমাদের সবচেয়ে প্রিয় ব্যাচটাকে হয়তো শেষ বিদায় জানানোর আগেই তারা চলে যাচ্ছে, আমরা টেরও পাচ্ছি না।

স্কুল নিয়ে কথা বলতে গেলে তা শেষ হবে কি না সন্দেহ। আমাদের স্কুলটা আসলে খুব খারাপ, শিক্ষকরা প্রচুর বকাবকি করতো খালি, একগাঁদা হোমওয়ার্ক দেবে, অ্যাবসেন্ট হলে জরিমানা ধরিয়ে দেবে, মাসে মাসে খালি পরীক্ষা নেবে, আর কত কী বলে শেষ করবো! কিন্তু স্কুলের এসব নির্যাতনের জন্যই যেন মন আঁকুপাকু করছে।

আমি আর বাসায় থাকতে চাই না, যেতে চাই আমার প্রিয় স্কুলে, বকা শুনতে চাই টিচারদের, রোদের মধ্যে অ্যাসেম্বলি আর প্যারেড করতে চাই, হোমিগুলাকে নিয়ে দুষ্টুমি করতে চাই। আমি ফিরতে চাই দুনিয়ার ওই স্বর্গে, সঙ্গীসাথী নিয়ে আরও কিছু মুহূর্তের যেন সৃষ্টি হয় সেই সুযোগ আর একটিবার হলেও পেতে চাই। 

লেখক: শিক্ষার্থী, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক সেকেন্ডারি স্কুল, জাহানাবাদ। 

খুলনা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়