ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘না’র বদলে ‘হ্যাঁ’ 

মুন্সী মুহাম্মদ জুয়েল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ২৯ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৬:৪৫, ২৯ অক্টোবর ২০২০
‘না’র বদলে ‘হ্যাঁ’ 

একদিন এক বাবা তার ছেলেকে তাদের পারিবারিক লাইব্রেরিতে নিয়ে (আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে) বললেন, এখানে যতগুলো বই আছে সবগুলো তুমি পড়বে, শুধু এই ড্রয়ারের বইগুলো বাদে। কিছু দিন পর ছেলেটি বাবার কাছে গিয়ে বললো, বাবা তুমি আমাকে ড্রয়ারের সেই বই পড়তে নিষেধ করলে কেন? আমি লাইব্রেরির সবগুলো বই পড়েছি, সঙ্গে ড্রয়ারের বইগুলোও। আমার কাছে মনে হলো, পুরো লাইব্রেরির মধ্যে শুধু সেই ড্রয়ারের বইগুলোই আমার জীবনে কাজে আসবে। 

তখন বাবা একটি হাসি দিয়ে বললেন, আমি চেয়েছিলাম যাতে তুমি অবশ্যই সেই বইগুলো পড়ো। আমি যদি সরাসরি বলতাম যে, তুমি এই বইগুলো পড়ো, তাহলে তুমি আমার কথার ততটা গুরুত্ব দিতে না। বরং উপহাস করে উড়িয়ে দিতে। কিন্তু আমি যখন তোমাকে বইগুলো পড়তে নিষেধ করেছি, তখন এই বইগুলোর প্রতি তোমার কৌতুহলটা আরও বেড়ে গেছে। আমি মনে-প্রাণে এটাই চাচ্ছিলাম যে, তুমি বইগুলো পড়।

হিউম্যান সাইকোলজি বলে, মানুষকে যে কাজগুলো করতে নিষেধ করা হয়, সেই কাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও কৌতুহল আরও বেড়ে যায়। তারা নিষিদ্ধ কাজগুলোই বেশি করতে পছন্দ করে। বলা যেতে পারে, তারা ‘না’ বোধককে ‘হ্যা’ বোধক মনে করে।

আমরা প্রায় সময়ই বলে থাকি, মাদককে না বলুন, পর্নোগ্রাফিকে না বলুন- ইত্যাদি। আপেক্ষিক দিক থেকে আমরা ‘না’ বলতে ‘না’কেই বুঝিয়ে থাকি। কিন্তু সমাজে কিছু লোক আছে, যাদের কিছু করতে নিষেধ করলে তারা সেই কাজটি আরও বেশি করে। কারণ, সেই ‘না’ বলার মধ্যে তারা কৌতুহল খুঁজে পায়। সেই কাজের প্রতি তাদের আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। ফলে তারা সেই কাজের প্রতি ধাবিত হয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত বা অগোচরেই তারা বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে লিপ্ত হয়। বলা যায়, সামাজিক কিছু অপরাধ আমাদের বহুল প্রচলিত ‘না’বোধক শব্দের কারণেও হয়ে থাকে।

আমরা সেই ‘না’বোধক শব্দের বদৌলতে ‘হ্যা’ বোধক শব্দের প্রচলন করতে পারি। যেমন- ‘মাদককে না বলুন’ এর পরিবর্তে বলতে পারি ‘মাদক মৃত্যু ঘটায়’, ‘পর্নোগ্রাফিকে না বলুন’ এর বদলে বলতে পারি ‘পর্নোগ্রাফি মানবতার জন্য হুমকিস্বরূপ’ ইত্যাদি।  

হিউম্যান সাইকোলজির এই অংশটাকে বলা হয়, ‘লস এভারশন’ অর্থাৎ আমাদের ব্রেইন ‘লস বা ক্ষতি’কে কখনো গ্রহণ করতে চায় না। যদি বলা হয় যে, ‘মাদক মৃত্যু ঘটায়’ এখানে ব্রেইন যখন দেখছে তার লস হচ্ছে, তখন সে ওই কাজ করতে আর উৎসাহিত বা কৌতুহল হবে না। হিউম্যান ব্রেইন লস বা ক্ষতিকে সহজে মেনে নিতে পারে না। তাই ব্রেইন যেদিকে লস বা ক্ষতির আভাস দেখে, সেদিকে আর এগোতে চায় না। এটাই হচ্ছে হিউম্যান ব্রেইনের খেলা।

এতে হয়তো পুরোপুরিভাবে অপরাধকে নির্মূল করা যাবে না, তবে কিছুটা হলেও প্রশমন করা যাবে। আর মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের নেগেটিভিও কাজ করবে না। বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ‘না’বোধক শব্দের ব্যবহার না করাই উত্তম এবং মনোবিজ্ঞানীরাও তাই বলেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্ট অব ফিলোসফি, চট্টগ্রাম কলেজ। 

চট্টগ্রাম/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়