ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কক্সবাজারের পথে-প্রান্তরে তারা

রাকিবুল হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ৩১ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৮:৫৯, ৩১ অক্টোবর ২০২০
কক্সবাজারের পথে-প্রান্তরে তারা

১২ অক্টোবর ২০২০, রাত ৮টা। সমুদ্রের খোঁজে যাত্রা শুরু করি। পথিমধ্যে চাকা বিকল হয়ে যাওয়ায় বাহনটি পরিবর্তন করতে হয়েছে। সকাল ৯টায় পৌঁছে যাই কক্সবাজারে। ১৬ জোড়া ঘুমমাখা চোখ তখন ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত ও উল্লসিত।

চারদিকে মৃদু বাতাস বইছে, আবার প্রখর রোদ। ছায়া নেই কোথাও। মিনিট দশেক পর একটা অটো নিয়ে যাই পূর্বে ঠিক করে রাখা হোটেলে। রুম পেতে আরেকটু সময় লাগবে। তাই সকালের খাবারটা সেরে নিই। তারপর রুমে গিয়ে বিশ্রাম করি। এ বিশ্রামের মাঝেও চলে আড্ডা ও খেলা। বেশি দেরি না করে আমরা হোটেল থেকে বের হই জলের রাজ্যে গা ঘেঁষতে। পথে দুপুরের খাবার খেয়ে নিই। পানীয় পান করতে করতে দেখা পেয়ে গেলাম নীল সমুদ্রের। 

আমরা আজ শরীর ভেজাবো না ঠিক করে নিলাম। আমাদের এখনো দুজন এসে পৌঁছায়নি, তাই কিছুটা টেনশন কাজ করছিল। সন্ধ্যার মধ্যে এসে যাবে মুঠোফোনে জানিয়ে দিলো ওরা। জল গড়িয়ে পায়ে লাগতেই শুরু হয়ে যায় আমদের খুনসুটি ও আনন্দ উল্লাস। অগ্রজ অনিকের দিক নির্দেশনায় চান্দের বাত্তি গানের সাথে নেচে আমরা জানান দিই সুমুদ্রের বুকে পা রেখেছে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস) পরিবার। ভিজবো না ঠিক করা থাকলেও আমাকে ও সভাপতি রনি জ্যেষ্ঠকে কাক ভেজা করে দিলো চিত্রগ্রাহক টূটুল অগ্রজ।

দুপুর থেকে কখন যে বেলা বিদায় নিলো, বুঝতেই পারলাম না। সূর্য অস্ত দেখে, হোটেলের দিকে হাঁটতে শুরু করি। হোটেলে গিয়ে কাপড় পাল্টিয়ে নিই। এর মধ্যেই বাকি দু’জন হোটেলে এসে পড়লো। রাতে আড্ডা বেড়ে যাবে, যখন শুনলাম গবিসাস উপদেষ্টা মিলন কাউছার অগ্রজ ও উপদেষ্টা ওমর ফারুক জ্যেষ্ঠ আসছেন ও আমদের সঙ্গেই থাকবেন।

তখন ঘড়িতে ১১টা ৩০ হবে। রাতে খেয়ে নিলাম। চাঁদের আলোতে সমুদ্র দেখবো। হাতে একটা বক্স ছিল। বক্সে কী? অপেক্ষা করেন আগে সমুদ্রে পৌঁছাই। রাতে সমুদ্রের গর্জন, জলের শো শো শব্দ সবার মনকে কেড়ে নিলো। ৫টা সি-বেড পেতে বসে গল্প ও পানি- আকাশ দেখা চললো কিছু সময়। 

সময় ১২টা ছুঁই ছুঁই। বক্সে কী আছে এখন বলবো। আজ সভাপতির প্রিয় মানুষটির জন্মদিন। কেক আনা হয়েছে, ঠিক ১২টায় ফেসবুক লাইভে গিয়ে কেকে চাকু চালিয়ে তাকে শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়ে দিই আমরা। এরপর শুরু হয় গানের পর্ব। এলোমেলো কণ্ঠে গাওয়া হয় পুরনো দিনের বেশ কয়েকটি গান। সামনের দিকে কয়েক কদম হেঁটে সমুদ্রে পা ভিজিয়ে প্রথম দিনের ইতি টানি।

দ্বিতীয় দিনের সকালে আমরা রওনা দিই মহেশখালীর পথে। সমুদ্রের ধার ঘেঁষে নদী। এক পাশে উত্তাল ঢেউ অন্য পাশে নীরব জল। এ নদী দিয়ে ২০ মিনিটে মহেশখালীর দ্বীপে পৌঁছে যাই। দু’পাশে বড় বড় গাছ, মাঝে সরু রাস্তা মহেশখালীর সৌন্দর্য জানান দেয়। পায়ে হেঁটে চলে গেলাম পাহাড়ের বুক খোদাই করে বানানো পুরনো এক হিন্দু মন্দিরে। 

দুপুরে অটো নিয়ে অদ্ভুত এক জায়গায় পৌঁছে যাই আমরা। সারি সারি আঠা গাছ ঠিক যেন সিলেটের কোনো বাগানে ঢুকে পরছি। আরেকটু এগোলে সাগর, কিন্ত অনেক খানি গিয়েও পানি নেয়, কাঁদা মাটি ও শাল, ঝাউ গাছে ভরপুর। প্রথম দেখায় কেউ সুন্দরবন বলতে ভুল করবে না! এ পথে হেঁটে জলের দেখা পাওয়া যাবে না, এক মধ্যবয়সী জেলে বললো। উত্তর দিকে সাগরের পানি দেখা যাচ্ছে, হাঁটতে শুরু করি। কিন্ত অনেক খানি আগানোর পরও পথ কমে না। দেখা যাচ্ছে কিন্ত যাওয়া যাচ্ছে না।

আমরা যখন এসেছি তখন ভাটা চলছে। এ কারণেই এ রূপ দেখতে পেয়েছি। জোয়ারে পানিতে ভরে যায়, এতো ভেতরে আসা যায় না। মহেশখালীর ঘাটে ফিরে যাই। ফিরবো ট্রলারে, ১ ঘণ্টা লাগবে। সূর্য ও জলের খেলা দেখতে দেখতে কক্সবাজারে পৌঁছে যাই। নদীর এক কোণ দিয়ে সমুদ্র দেখা যায়, পানির রঙ গাঢ় নীল। এ পানিতে লাল সূর্য টুপ করে মিলিয়ে গেলো।

তৃতীয় দিনে সাগর কন্যার বুকে হারিয়ে যাই। জলে গা ভেজানোর আগে চললো ফটোসেশন পর্ব। সবার পরনে একই রকম টিশার্ট, চোখে বাহারি রঙের সানগ্লাস। এবার জলরাশির মিতালীতে ডুব দেওয়ার পালা। সাংগঠনিক সম্পাদকের শরীর খারাপ করেছে, গা গরম। তিনি জলে নামবে না। তাই তার কাছে ফোন, তাওয়াল, কাপড় রেখে আমরা দলে দলে সমুদ্রে নেমে পড়ি।

নোনা জল, ছোট বড় ঢেউ, নীল আকাশের মাঝে লাফালাফি, দৌড়াদোড়ি করি প্রায় ঘণ্টা খানেকের বেশি। ভেজা শরীর নিয়ে উত্তপ্ত বালি পাড়ি দিয়ে অগ্রজ অনিককে নিয়ে হোটেলে ফিরে আসি। এ সময় একটা ডাব খেয়ে অনেকটা প্রশান্তি পেলাম।

৪র্থ দিনের সকালটা ছিল চনমনে। সাগরের আরেক রূপ দেখা যায় ইনানী বিচে। আজকের পথচলা শৈবাল-প্রবালের ঠিকানায়। মিল্কিওয়ে হোটেল থেকে দেড় ঘণ্টার রাস্তা। বেলা ১টা, তখন ইনানী বিচে আমরা। ঝাল, তেতুল, দুধ দিয়ে বানানো হচ্ছে অসাধারণ আইসক্রিম। ভেজা বালি, শৈবাল- প্রবাল, সাগরের ঢেউ ও দূরে উঁচু উঁচু পাহাড় এবং সারি সারি গাছের মেলা। ইনানীতে আমরা প্রায় দেড় ঘণ্টা ছিলাম। পুরো সময়কে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করেছি। 

এখানে লাল টিশার্ট গায়ে কালো ক্যামেরা হাতে নানা বয়সী ছেলে আছে। ওরা আপনার ছবি তুলে দেবে। এ বিচে আপনি ছবি তুলতে পারেন। কিন্তু একটু সচেতন না হলে, ছবি তুলে বেশ কিছু টাকা চলে যেতে পারে। 

এখান থেকে বের হয়ে আবার উল্টা পথে চলতে শুরু করি। যাব হিমছড়ি, কিন্ত সেদিন শুক্রবার ও করোনার কারণে মুল ফটক বন্ধ ছিল। আরেকটা বিচে মিনিট বিশেক দাঁড়ালাম। এক পাশে বিশাল লাল মাটির পাহাড় অন্য পাশে আকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত সমুদ্র। এখানে প্যারাসুট দিয়ে সাগরে ভেসে থাকার সুযোগও আছে। ১ কিলো এগোলে একটি ঝরনা। উঁচু পাহারের বুক চিড়ে টুপ টুপ করে পরিষ্কার পানি পড়ছে।

বিদায় বেলা ক্রমশে ঘনিয়ে আসছে। আমরা হোটেলে ফিরে এলাম। দুপুরে আহার ছেড়ে নিই। প্রায় বিকেল। সন্ধ্যায় আমাদের ফেরার টিকেট কাটা হয়ে গেছে। আমরা হোটেলে ফিরে এলাম। দুপুরে খেয়ে নিই। প্রায় বিকেল। সবাই হোটেল থেকে বের হয়ে সুগন্ধা পয়েন্ট গেলাম। নিজেদের মতো কেনাকাটা শেষ করি। সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট তখন। আমাদের বাস ৮টায়। শেষ মুহূর্তে একটি সেলফি তুলে কক্সবাজারকে এবারের মতো টাটা বলে বাসে চেপে বসলাম।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়

গবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়