ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মাধ্যমিকে অ্যাসাইনমেন্ট কি বাণিজ্যের নতুন রূপ?

আজাহার ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪০, ১১ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৫:৪১, ১১ নভেম্বর ২০২০
মাধ্যমিকে অ্যাসাইনমেন্ট কি বাণিজ্যের নতুন রূপ?

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা গ্রহণ বন্ধ। জেএসসি সমমান পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে। তবে গত ৩১ অক্টোবর ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচির আলোকে অ্যাসাইনমেন্ট নিতে প্রজ্ঞাপন জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। প্রজ্ঞাপনে সপ্তাহে ৩টি করে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে।

অ্যাসাইনমেন্ট শব্দের আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় নিয়োজিত কাজ। এক্ষেত্রে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের কাজ নির্ধারণ করে দিয়েছে মাউশি। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এই শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। কেউ কেউ বুঝতেই পারছে না আসলে লিখবেটা কী? অ্যাসাইনমেন্টের সঙ্গে তাদের কখনোই পরিচিতি ছিল না। অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কতটুকু মেধার মূল্যায়ন হবে তাও প্রশ্নবিদ্ধ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও অ্যাসাইমেন্টের কথা ভাবছে ন্যাপ। মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরাই যেখানে অ্যাসাইনমেন্ট বুঝে উঠতে পারছে না, প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা বুঝবে কীভাবে?

মাউশির জারি করা প্রজ্ঞাপনের পর অনেক শিক্ষাবিদই এর বিপক্ষে মন্তব্য করেছেন। শিক্ষা গবেষক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমানের ভাষ্যমতে, ‘শিক্ষার্থীদের আমরা শেখাব। শেখার চাইতে মূল্যায়নের গুরুত্ব বেশি না। এটা নামকাওয়াস্তে একটা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে তাদের মূল্যায়ন হবে। শেখাতে পারলাম না কিন্তু তাকে পরবর্তী ক্লাসে উঠিয়ে দিলাম, এতে বিশাল লার্নিং গ্যাপ তৈরি হবে।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি দিনে দিনে বাড়ছেই। শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন হয়ে গেছে। মাউশি বলছে, সংসদ টিভির ক্লাসসহ অনলাইন ক্লাসের কথা। কিন্তু সব শিক্ষার্থী কি যুক্ত ছিল ওসব ক্লাসে? গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের মন্থর গতি। শহুরে শিক্ষার্থীরাই কেবল এ সুবিধার আওতায় এসেছে। হঠাৎ করে এমন অ্যাসাইনমেন্টে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থা অনেকটা মাকাল ফলের মতো। অ্যাসাইনমেন্ট বাড়িতে সে নিজে করছে, নাকি তার অভিভাবক, প্রাইভেট টিচার বা বড় ভাই করে দিচ্ছে, সেটা বোঝার কোনো উপায় আছে? 

এদিকে সরকারি নির্দেশনায় অ্যাসাইনমেন্ট বিনা ফিতে নিতে বলা হলেও অ্যাসাইনমেন্টকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে জমজমাট ব্যবসা। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের বেশ কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ২৫০ টাকা এবং ৯ম ও ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা হারে নেওয়া হয়েছে অ্যাসাইনমেন্ট বাবদ। শুধু বরিশালেই নয়, লক্ষ্মীপুর, ময়মনসিংহসহ দেশের অনেক জায়গায় এমন খবর শোনা গেছে।

মেয়ের স্কুলের অ্যাসাইনমেন্টের টাকা সংগ্রহ করতে নিজের পরিধেয় তিনটি শাড়ি ৩০০ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন এক অসহায় মা। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়। ফি ছাড়াও একটি অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করতে খরচ হয় প্রায় ৫ টাকা। এই ৫ টাকা কম শোনালেও মোট ১৮টি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে শিক্ষার্থী প্রতি গুণতে হচ্ছে প্রায় ১০০ টাকা। বই-গাইড দেখে, প্রাইভেট টিউটর, অবিভাবকদের থেকে শিখে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে অ্যাসাইনমেন্ট লিখছে। আবার টাকার বিনিময়ে অনেক শিক্ষকও অ্যাসাইনমেন্ট করে দিচ্ছেন। এই হাইব্রিড মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আসলে লাভ কোথায়?

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। 

কুষ্টিয়া/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়