ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

কৃষককে সাহায্য করবে মিরার ‘চাষিবোন’ 

রেজাউল ইসলাম রেজা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৭, ২২ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:২১, ২২ নভেম্বর ২০২০
কৃষককে সাহায্য করবে মিরার ‘চাষিবোন’ 

বলছি ঢাকার তরুণী কামরুন্নেছা মিরার কথা। তিনি কৃষিক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। তার সামাজিক ব্যবসায়িক সংস্থা ‘চাষিবোন’ কৃষি সম্প্রসারণের পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে কৃষক ও ক্রেতাদের মধ্যে সুষ্ঠু বাণিজ্য রক্ষায় বদ্ধপরিকর।

কৃষি জাতীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। আমাদের কৃষকরা ফসলের মৌসুমে সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য মূল্য পান না। তাছাড়া দেশের সিংহভাগ কৃষক মূলধন সংকটে। কৃষিতে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও নতুন জাত সংযুক্ত হওয়ায় দিন দিন মূলধন বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকদের মিল মালিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে থেকে বিভিন্ন শর্তে ঋণ নিতে হচ্ছে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও তাদের শর্তের মারপ্যাঁচে পড়ে বাধ্য হয়ে কম মূল্যে ফসল বিক্রি করতে হয়।

এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে ২০১৮ সালে মিরা একটি বাস্তুতন্ত্র বিকাশের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন, যাতে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না হন। তিনি একটি আদর্শ গ্রামের পরিকল্পনা করেন। যেখানে কৃষক ইউনিয়ন তৈরি করার মাধ্যমে স্মার্ট কৃষি, ফসল সংগ্রহ ও বিপণন সম্পর্কে শিখতে পারা যায়। প্রথমে নাটোর জেলায় কিছু জমি কিনে সেখানেই কৃষি ব্যবসার যাত্রা শুরু করেন তিনি।

কৃষকদের নিয়ে কাজ করার ফলে মিরা কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের অভিজ্ঞতার কথা শোনেন। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, মূলধন সংকট, যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব, মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকা, নেতৃত্বের অভাব, কৃষি সম্পৃক্ত বিষয়ে অজ্ঞতা, উচ্চ মূল্যে ঋণ, ফসলি জমির অভাব, বীমা সুবিধার অভাব, প্রত্যক্ষ বাজারের সঙ্গে দুর্বল সম্পর্ক, জলবায়ু অভিযোজনে চ্যালেঞ্জ ও নতুন পোকামাকড়ের সনাক্তকরণসহ নানা ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হন তারা। 

এসব সমস্যা থেকে কৃষকদের মুক্তি দিতে কামরুন্নেসা মিরা একটি কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে তাদের কৃষিকাজের উন্নয়ন, প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি, পোকামাকড় ও উর্বরতা সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য কৃষকদের বিনামূল্যে অনলাইন ও অফলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

তার ‘চাষিবোন’ উদ্যোগ- সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য নেয় ও শহরে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করে। বিনিয়োগ, বীমা ও আশ্বাস বিবেচনা সাপেক্ষে, মিরা প্রি-অর্ডার ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা তৈরি করেছেন। এখানে পণ্যের মোট মূল্যের ৬০ শতাংশ অর্থ আগাম পরিশোধ করে প্রি-বুকিং নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় কৃষকরা ফসল ফলানোর আগেই তাদের প্রয়োজনীয় মূলধন পাচ্ছেন। 

পাশাপাশি ফসল উৎপাদন পরবর্তী সময়ে বিক্রয়ের দুশ্চিন্তা থেকেও মুক্তি মিলছে। উচ্চমূল্যে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। তিনি লাভের অংশ বা ব্যবসায়ের ইক্যুইটি শেয়ার করে কৃষকদের সঙ্গে মাইক্রো বিনিয়োগকারীদেরও সংযুক্ত করেছেন। এই পদ্ধতিতে বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে যেকেউ, নাটোর ও চট্টগ্রামে কৃষিকাজে বিনিয়োগ করতে পারবে।

নাটোর জেলায় মিরার ১৪৮ জন কৃষক রয়েছেন, যারা তার উদ্যোগ থেকে সরাসরি সুবিধা ভোগ করছেন। তাছাড়া এই ১৪৮ জন কৃষকও এই এলাকার উন্নয়নে সহায়তা করছেন। তাদের একটি ‘নন ফরমাল লিটারেসি সেন্টার’ রয়েছে, যেখানে তারা প্রাথমিক শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। 

কৃষি কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও মিরা স্নাতক শেষ করার পরে ভ্রমণ ও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান অনুসন্ধান করা শুরু করেন। তার সামাজিক ব্যবসায়ের মডেল কয়েক শ নারীকে বাল্য বিবাহ, সহিংসতা থেকে বেরিয়ে আসতে ও তাদের সম্প্রদায়ের বিকাশের সক্রিয় অংশে পরিণত করতে সহায়তা করছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, কৃষি অনুষদ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।  

পবিপ্রবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়