ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অনলাইন ক্লাস নিয়ে এখনো বিপাকে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা 

সজিবুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ১ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১২:৩৪, ১ ডিসেম্বর ২০২০
অনলাইন ক্লাস নিয়ে এখনো বিপাকে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা 

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত মার্চ মাসে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নিতে অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ দেয়। 

দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) গত ১৭ অক্টোবর থেকে সব বিভাগে অনলাইন ক্লাস শুরু করে। ডিভাইস ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিশ্চিত করে অনলাইন ক্লাস শুরু করার কথা থাকলেও সুবিধাবঞ্চিতদের কোনো প্রকার ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান না করেই শুরু করা হয়েছে অনলাইন ক্লাস। এইদিকে ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধা চেয়ে আবেদন করা ৬৭০ জন শিক্ষার্থী পড়েছে মহাবিপাকে। এছাড়াও অনলাইন ক্লাস নিয়ে আছে নানা অভিযোগ। 

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সব শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করেই অনলাইন ক্লাস চালু করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭০ জন শিক্ষার্থীর তালিকা আছে, যারা ডিভাইস ও ইন্টারনেট খরচের জন্য আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছে। তাদের জন্য সরকার ও ইউজিসির পক্ষ থেকে সহযোগিতা প্রদানের বিষয়টা যদি সময়সাপেক্ষ হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতার জন্য পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু অনলাইন ক্লাস চালু হওয়ার একমাস পার হলেও মেলেনি কোনো সুযোগ-সুবিধা। এইদিকে অনলাইন ক্লাসের উপস্থিতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মূল পরীক্ষার নম্বরের একাংশ। এই সমস্যার সমাধান করতে যবিপ্রবি প্রশাসন তাদের নিজস্ব সফটওয়্যার এমনভাবে ডেভেলপ করেছে, যাতে করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাসের উপস্থিতির সংখ্যা সেখান থেকে জানা যায়। 

এছাড়াও কেউ যদি কোনো ক্লাসে উপস্থিত থাকতে না পারে ও পরবর্তী সময়ে রেকর্ড ক্লাসের ভিডিও দেখে, তাহলে সেখান থেকে উপস্থিতি পেয়ে যাবে। এছাড়াও প্রতিটি ক্লাস নেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষক ওই ক্লাসের রেকর্ডিং ভিডিওসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করে দেবে। কিন্তু অনেক বিভাগের শিক্ষকেরাই অনলাইন ক্লাসের রেকর্ডিং পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে আপলোড দিতে নারাজ। সেইসঙ্গে তারা মানছেন না ক্লাস শিডিউল, অনেক বিভাগের শিক্ষকেরা আবার সন্ধ্যার পরেও ক্লাস নিচ্ছেন।

শিডিউল অনুযায়ী ক্লাস না নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। করোনার ভেতরে এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যারা পরিবারের হাল ধরার জন্য টিউশনসহ পার্টটাইম জব খুঁজে নিয়েছেন। এছাড়াও প্রতিদিনের ইন্টারনেট খরচের ভারতো আছেই। শিক্ষার্থীদের দাবি, দ্রুত ডিভাইসসহ ইন্টারনেট খরচের বিষয়টা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সমাধান করা ও শিডিউল অনুযায়ী ক্লাস নিয়ে রেকডিং ভিডিওগুলো সার্ভারে আপলোড করে দেওয়া। এতে করে বৈদ্যুতিক বা ইন্টারনেটসহ অন্য কোনো সমস্যার জন্য কেউ যদি অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, তবে পরবর্তী সময়ে কোনো ঝামেলা ছাড়াই সে ক্লাসটি করতে পারবেন।

এই বিষয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইউজিসি বা সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের যে ঋণ প্রদান করার কথা, সেটা দেওয়া হলে আমরা অনতিবিলম্বে শিক্ষার্থীদের কাছে তা পৌঁছে দেবো অথবা ইউজিসি যদি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট থেকে শিক্ষার্থীদের ঋণ প্রদান করতে বলে, সেক্ষেত্রেও আমরা রাজি আছি। ইতোমধ্যেই আমরা করোনা মহামারির কারণে যবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি ৪০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়াও প্রত্যেক শিক্ষককে তাদের প্রতিটা অনলাইন ক্লাসের রেকর্ডিং ভিডিও নিজস্ব এলএমএস (LMS) সিস্টেমে আপলোড দেওয়াসহ কোনো শিক্ষকই বিকেল ৫টার পরে ক্লাস নিতে পারবেন না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি অতি দ্রুত সময়ে অসহায় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার। যদি এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে সক্ষম না হই, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার ব্যবস্থা করবো। তবে শিক্ষার্থীদের কাছে আমার একটাই প্রত্যাশা থাকবে, তারা যেন নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করে।’

যবিপ্রবি/সজীব/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়