ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইংল্যান্ডে যেভাবে সফল হয়েছি আমি

ফারাবী শায়র || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৭, ২ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৮:২০, ২ ডিসেম্বর ২০২০
ইংল্যান্ডে যেভাবে সফল হয়েছি আমি

আমি ফারাবী শায়র। এটি আমার সফলতার গল্প। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বিদেশে গিয়ে উদ্যোক্তা ও গবেষক হয়ে ওঠার গল্প। 

২০০৯ সালে আমি ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে পাস করে বের হই। ইংল্যান্ডে পারি জমাই। ইংল্যান্ডে পৌঁছে কিছুদিন বিশ্বাস করতে পারিনি আমি এখানে এসেছি। ব্যক্তিগত জীবনের মতো আমার শিক্ষাজীবনেও ছিল অনেক উত্থান-পতন। 

আমি অ্যাঞ্জলিয়া রাসকিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সে বিএসসি সম্পন্ন করি। পড়াশোনার সেই বছরগুলোতে আমি খণ্ডকালীন কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিংও করে গেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ২য় বর্ষে পড়ার সময় আমি একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ পাই। অজান্তেই আমার একটি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল যারা আমাকে পুরোটা সময় ধরে আলো দেখিয়ে গেছে।
২০১৫ সালে আমি যখন স্নাতকোত্তরের জন্য আবেদন করি তখন ইংল্যান্ড অভিবাসী নিয়ে প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই সুযোগ পাওয়াটা খুব বেশি সহজ ছিলো না।

এই জায়গায় আমি ধন্যবাদ দিতে চাই আমার ফ্রিল্যান্সিং ও বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা। সেসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমি ইংল্যান্ডের কিংস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা নিয়ে একটি গবেষণা ভিত্তিক প্রোগ্রামে এমএসসির সুযোগ পাই।

আমার গবেষণার অংশ হিসাবে, আমি হলিউডের প্রোডাক্ট প্লেসমেন্ট এজেন্সিগুলির ৮ জন সিইওর সাথে গুণগত গবেষণা পরিচালনা করেছিলাম, যা আমাকে সামগ্রিকভাবে একটি ভাল গ্রেড পেতে সহায়তা করেছিল।

এর পরপরই আসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পর্যায়। অবস্থানের পরিবর্তন করা। কিংস্টনে ৮ মাস যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০১৬ সালে আমি একটি স্নাতক উদ্যোক্তা ভিসা পাই। আমি আরেকটি সুযোগও খুঁজছিলাম। তাই বিভিন্ন জায়গায় গবেষণা তত্ত্বাবধায়নের জন্য আবেদন করা শুরু করি।

২০১৬ সালের শেষদিকে আমি বিশ্বের অন্যতম্ন বিখাত ইম্পেরিয়াল কলেজ অফ লন্ডনে ‘রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স লিড’ হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাই। একটি পুষ্ট আবেদন ও আত্মবিশ্বাসী সাক্ষাৎকারের ফলে আমি সুযোগটা পেয়েছিলাম। এরপর থেকে আমি প্রতিবছর দ্বিতীয় বর্ষে পড়া মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পেশাদার পরিবেশে বাস্তব জীবনের উপর গবেষণার ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিতাম।

পরের বছর, ২০১৭ সালে আমি আমার স্টার্টআপের জন্য বিনিয়োগ বাড়াই। আমার স্টার্টআপটি দ্রুত ফোর্ড মোটর সংস্থার লোকসহ ১২ সদস্যের দলে পরিণত হয়। সর্বশক্তিমানকে আমি ধন্যবাদ জানাই, ২০১৮ সালে ফোর্বস, ইনক ম্যাগাজিন, দ্য নেক্সট ওয়েব ও আরও দশটি সংবাদমাধ্যমে আমার সংস্থা ও আমাকে নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। যা লাখো মানুষ দেখেন। আমাকে বক্তা হিসেবে অনেক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয় ও পুরো ইউরোপ জুড়ে ট্রেড শোতে আমাদের কাজ প্রদর্শন করা হয়।

২০১৫ থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমার নেটওয়ার্কিং, গবেষণা পরিচালনা, টিম তদারকি করা, সম্মেলনে অংশ নেওয়া, কোল্ড কলিং ক্লায়েন্ট ও দক্ষতার সাথে বড় প্রকল্পগুলি পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা আমাকে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করেছে।

গত মাসে আমাকে এএলপি নামে একটি নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান তাদের গবেষণা কাজের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার জন্য আহ্বান জানায়। আমি সেখানে তাদের কিছু গবেষণা প্রজেক্টে ইংল্যান্ডের যোগযোগ মন্ত্রণালয়ের সাথে একত্রে কাজ করব।  

ইংল্যান্ডের মতো দেশে নিজের যোগ্যতার বাইরে অন্যকিছু তেমন প্রভাব ফেলে না। উদাহরণস্বরূপ, আমি যখন আমার স্টার্টআপটি তৈরি করছিলাম তখন আমার ডিজাইনিং দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। 

আমার অভিবাসন ইতিহাস নয়। গ্রহের যে কোনও জায়গায় স্থায়ী হওয়া সহজ নয়, বিশেষত অভিবাসী হিসাবে। তবে যদি আপনার কাছে প্রতিযোগিতার জন্য সঠিক কাজের নীতি এবং দক্ষতা থাকে তবে আপনাকে থামানোর মতো কিছুই নেই।

লেখক- হেড অফ রিসার্চ, ইনটেলএক্সওয়াইএস

ঢাকা/নোবেল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়