ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

তরুণ মনে শীতল হাওয়া

মেহেরুজ্জামান সেফু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ৩ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৩:৩২, ৩ ডিসেম্বর ২০২০
তরুণ মনে শীতল হাওয়া

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি দেশ। এই দেশ একদিকে যেমন সুজলা-সুফলা তেমনিভাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও ভরপুর। এ দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। হেমন্তের ভোরে শিশির সিক্ত দূর্বা ঘাস ও পথঘাট। সূর্যের আলোতে শিশির দানামুক্তার মতো জ্বল জ্বল করে জানান দিচ্ছে, এসেছে শীত।

ঋতুচক্রের আবর্তনে হেমন্তের নবান্ন সমাপন হয়েছে অনেক আগেই। হিমেল হাওয়ায় খবর নিয়ে ইতোমধ্যে এসেছে শীতকালের আবহ। প্রকৃতি এখন তার সমস্ত আবরণ খুলে দীনহীন বেশ ধারণ করেছে। শীতের হাওয়া খুলে দিচ্ছে প্রকৃতির আভরণ। শুষ্কতার রূপ নিয়ে এলেও বাংলার বুকে শীতের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য। বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছে বিভিন্নভাবে ধরা দেয় এ শীতকাল। তেমনি তারুণ্যের ভাবনায়ও রযেছে শীতকে নিয়ে নানা ভাবনা।

সরকারি তিতুমীর কলেজের (২০১৯-২০ শিক্ষা বর্ষের) রসায়ন বিভাগের ছাত্রী তাহরিমা মাহজাবিন বলেন, আমার কাছে শীতকাল মানেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা মিষ্টি কিছু অনুভূতি। ‘শীতকাল’ শব্দটা শুনলেই মনে পড়ে ছোটবেলায় কাটানো শীতের সকালগুলোর কথা। সাধারণত প্রতি বছরই শীতের ছুটিতে নানাবাড়িতে যাওয়া হতো তখন। প্রতিদিন ভোরে বাড়ির উঠানে অনেকগুলো খড় একসঙ্গে করে আগুন জ্বালিয়ে তার সামনে বসে বসে গল্প করতেন বাড়ির সবাই, সেইসঙ্গে খাওয়া হতো গরম গরম পিঠা। 

এছাড়াও তখন তো গ্যাস ছিল না, এখনকার মতো এত উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। মনে পড়ে মহিলারা পাতিলে করে পানি দিয়ে রোদে রেখে দিতেন। রোদের তাপে সেই পানি গরম হতো, তারপর ছোটদের গোসল করাতেন। স্নাতক পর্যায়ে এসেও এই ব্যাপারগুলো খুব মিস করি।

শীত মানেই বাঙালির পিঠা উৎসব। নানা রকম পিঠা, পুলি, খেজুর রসের পায়েস, আর নতুন গুড়ের ভাপা পিঠা। আহা! ভাবতেই কেমন জিভে জল এসে যাওয়ার মতো একটা ব্যাপার তাই না? শীতের প্রায় সবকিছুই ইন্টারেস্টিং। তবে প্রচণ্ড শীতের দিনে সবার আগে গোসল করে বিশাল এক ক্রেডিট নেওয়ার ব্যাপারটাই আমার কাছে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং মনে হয়।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (২০১৭-১৮ শিক্ষা বর্ষের) রসায়ন বিভাগের ছাত্র আসাদ বলেন, শীতকালের প্রতিটা সকাল আমার কাছে স্পেশাল। মায়ের হাতে বানানো ভাপা পিঠা চিতই পিঠার তো কোনো তুলনাই হয় না। শীতের সকালে শিশির ভেজা ঘাসের মধ্যে যখন হালকা রোদের আভা এসে পড়ে, তখন মনে হয় যেন মাটির ভেতর থেকে স্বর্ণের ঝলকানি দিচ্ছে। শীতকালটা যেন ষড়ঋতুর মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঋতু। শীতকাল আমার কাছে বরাবরই ভালো লাগে, এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।

ছোটবেলায় শীতকাল অনেক মজা করে কাটাতাম, অনেক বন্ধুরা মিলে শুকনো পাতা, খড়কুটো দিয়া আগুন জ্বালিয়ে হাত-পা গরম ছেঁকা দিয়ে নিমাত। আর এখন ভার্সিটিতে ওঠার পরে শীতকাল কাটে লেপের নিচে শুইয়ে। শীতকালের ভালো লাগার বিষয় হলো সকালের মিষ্টি রোদ। শীতকালের স্পেশাল হলো শীতের বাহারি রকমের পিঠা, পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। শীতকালে যদি বেস কয়েক দিন সূর্য না ওঠে এই ব্যাপারটা।

ইডেন মহিলা কলেজের (সমাজবিজ্ঞান বিভাগের) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া হাফসা বলেন, ঋতুচক্রের আবর্তনে হেমন্তের নবান্ন সমাপন করে হিমেল হাওয়ায় খবর নিয়ে আসে শীতকাল। প্রকৃতি তখন তার সমস্ত আবরণ খুলে দীনহীন বেশ ধারণ করে। শীতকালের এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশেষভাবে সকালবেলাই লক্ষণীয়। 

শীতকালের সকাল থাকে কুয়াশায় ঢাকা। সূর্যোদয় হয় অনেক দেরিতে ও সূর্যাস্তও হয় তেমনি আগে। সকালে মনে হয় পৃথিবীটা যেন কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে অপেক্ষা করছে সূর্যের মুখ দেখার জন্য। ঘাস, তৃণ, লতা-পাতা আর ঘরের চালে জমে কুয়াশার ঘন আস্তরণ।

ছোটবেলায় শীতকালটা সত্যি অনেকবেশি উপভোগ্য ছিল, যা ইউনিভার্সিটি জীবনে এসে প্রচুর মিস করি। ছোটবেলায় খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে মসজিদে যেতে হতো। সকালে ভাপা পিঠা খেতে খেতে শীতের পোশাক পরে, কুয়াশার মধ্যে হালকা কাঁপতে কাঁপতে মক্তবে যেতাম। সকালে খেজুরের রস খাওয়া, খেজুরের রস দিয়ে বানানো বিভিন্ন ধরনের পিঠার স্বাদ আর সকালের মিষ্টি রোদ যেন শীতকালটাকে শ্রেষ্ঠত্ব এনে দেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (২০১৫-১৬ সেশন) পারমাণবিক প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র হাসিবুল হিমেল বলেন, ঋতু হিসেবে শীতের বৈশিষ্ট্য অনেক প্রকট। মানে শীতের আগমন চোখ এড়ায় না। এটা ভালো লাগে। যেহেতু গ্রামে বড় হয়েছি, তাই শীতের সময়টা গ্রাম বাংলার আবহ ঘিরেই ছিল। তবে ক্ষেতের খড়কুটোর আগুনের সঙ্গে রোদ পোহানো, খেজুরের রস এগুলো রোমন্থন করার মতো। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতের বিশেষত্ব হলো ব্যাডমিন্টন খেলা, সঙ্গে সেমিস্টার ব্রেকে কোনো ট্যুরে যাওয়া বা ক্যাম্পাসের ভাপা পিঠা। কিন্তু এখন তো ক্যাম্পাস বন্ধ। শীতকালে মিষ্টি রোদ ভালো লাগে। আর আদ্রতা কম তাই মনমেজাজ ফুরফুরে থাকে। খারাপ লাগার মধ্যে দিনের সময় ছোট তাই দ্রুত ফুরিয়ে যায়। শীতের অতিথি পাখির আগমন বেশি ভালো লাগে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ। 

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়