ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে চলা একজন অনিক

শ্রেয়া ঘোষ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:২৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০
সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে চলা একজন অনিক

অনিক সরকার। নামটা কয়েকটি অক্ষরে আবদ্ধ থাকা খুব ছোট্ট হলেও এই নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে অসংখ্য কেরামতির গল্প। ২০১৪ সালে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া থেকে শুরু করে গুগলের ইউরোপীয় হেডকোয়ার্টারে যোগ দেওয়ার যাত্রাপথ ছিল সাফল্যমণ্ডিত। 

তার বাবা জীবেন্দ্রনাথ সরকার ও মা অর্চ্চনা সরকারের একমাত্র সন্তান অনিক। অনিকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। শিল্পের রাজ্যে কোডিংয়ের রাজার যে জন্ম হবে এটা কে জানতো! সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পঞ্চম শ্রেণি অবধি সেখানেই পড়াশোনা করে অনিক। শৈশবটা বাকি দশটা শহুরে বাচ্চার মতোই সাদামাটা কেটেছে তার। 

চট্টগ্রামের বিখ্যাত একটি বিদ্যালয় ‘কলেজিয়েট স্কুল’-সেখানেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে অনিক ভর্তি হয়, এই স্কুলের অসংখ্য স্মৃতি অনিকের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। মায়ের সঙ্গে স্কুলে যাওয়া, স্কুলের লাল বিল্ডিং কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো অসংখ্য সুখকর মুহূর্ত অনিকের জীবনে যেন গেঁথে আছে। শিক্ষকের ভালোবাসা, শাসন, শুভকামনা সবকিছুই অনিকের জীবনে পরম পাওয়া। অনিক ভীষণ পড়ুয়া ছেলে, টিফিনের সময় ও তাকে পড়তে দেখা যেত। শিক্ষকদের কাছে ছিল তার অজস্র প্রশ্ন। পড়াশোনার পাশাপাশি অনিক টুকটাক গান ও গাইতো।

হাইস্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে অনিক ভর্তি হয় চট্টগ্রাম কলেজে। সরকারি কলেজ হওয়ায় অনিক ক্লাস করতো কম। স্যারদের কোচিং আর কলেজ সংলগ্ন প্যারেড মাঠকে কেন্দ্র করে অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে তার। যেকোনো বিষয় বই থেকে খুঁজে খুঁজে নিখুঁত করে পড়ার অভ্যেস অনিকের তৈরি হয় এই সময়টিতে। 

এই সম্ভবনাময় মেধাবী তরুণকে তার কয়েক বছর আগের স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওভাবে আমার বড় কোনো স্বপ্ন নাই, তবে আমি যেন আমার আশেপাশের মানুষের জন্য কল্যাণকর হয়ে উঠতে পারি, যাদের ভালোবাসা ও সাহায্যের ঋণে আমি ঋণী হয়ে আছি।’

কলেজের করিডর পেরিয়ে অনিক পরিবারসহ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চলে আসে ঢাকায়। উদ্ভাস আর ওমেকায় কোচিং করেছিল সে, পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামের সেই তুখোড় অনিক ২০১৪ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্নের বিদ্যাপীঠ বুয়েটে প্রথম স্থান অধিকার করে। শুধু তাই-ই নয়, এর পাশাপাশি ঢাবিতেও ২১তম হয় সে। বায়োলজিতে দক্ষ না হওয়া সত্ত্বেও ফিজিক্স, কেমেস্ট্রিতে ভালো করে মেডিকেলেও চান্স পেয়েছিল অনিক।’

বুয়েটে পড়া ছিল অনিকের জীবনে টার্নিং পয়েন্ট। খুব ইন্ট্রোভার্ট ছেলেটা হঠাৎ করেই ভীষণ এক্সট্রোভার্ট হয়ে যায়। সবার সঙ্গে মিশতে শেখা, বড় প্ল্যাটফর্মে নিজেকে উপস্থাপন করার কায়দা অনিক শিখেছে বুয়েটে পড়ার সময়। সক্রিয়তার সঙ্গে অনিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিংও করেছে অনিক। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন।

অনিক ‘প্রিয়’ নামের একটি কোম্পানিতে ১০ মাস সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিংয়ে কোচ হিসেবেও ছিলেন দীর্ঘ দিন। এছাড়া বুয়েটের ড. এম সোহেল রহমান স্যারের রিসার্চ সহকারী ছিলেন ৩ মাস।

৬টি ইন্টারভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর অনিক ডাক পায় গুগল থেকে। বর্তমানে গুগলের ইউরোপীয়ান হেডকোয়ার্টার আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে কাজ করছেন অনিক। এই দেশের জন্য কিছু করতে চান তিনি। দেশের তরুণদেরও অনিক প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছেন সঠিক দিকনির্দেশনা।
লেখক: শিক্ষার্থী, শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়