ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

চীনে শিক্ষাসফর শেষে সান ও রিতু…

আবু সালেহ শামীম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৫:২৯, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০
চীনে শিক্ষাসফর শেষে সান ও রিতু…

বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও চীনের পরস্পরের শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প বিনিময় ও চেনার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম ‘চীন-বাংলাদেশ যুব ক্যাম্প’। এই যুব ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারীরা দুই দেশের ভিন্ন মানুষ, ভিন্ন ভাষা, শিল্প-সংস্কৃতি ও খাদ্যাভাসের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়। 

দুই দেশের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক আত্মসম্পর্ক এগিয়ে নিতে ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি প্রকল্পে স্বাক্ষর করে। প্রকল্প অনুযায়ী ২০১৭ সাল থেকে চীন দূতাবাসের পৃষ্ঠপোষকতায় ইউনান বিশ্ববিদ্যালয় ও কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের হেডকোয়ার্টার প্রতিবছর চীনে এই যুব ক্যাম্পের আয়োজন করে। 

চীনের বসন্ত নগরী খ্যাত কুনমিং শহরে গত বছর ২৬ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এই ইয়ুথ ক্যাম্পের তৃতীয় আসর। এই আসরে সহকারী আয়োজক হিসেবে ছিল কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কনফুসিয়াস ক্লাসরুম ও শান্তা-মারিয়াম কনফুসিয়াস ক্লাসরুম।

ক্যাম্পে অংশ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ পেশাজীবী ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা। চীন-বাংলাদেশ যুব ক্যাম্পের তৃতীয় আসরে অংশগ্রহণ করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দুইজন শিক্ষার্থী-আদনান শাকুর (সান) ও জান্নাতুল তাজরি (রিতু)। তারা আন্তর্জাতিক এই শিক্ষাভ্রমণের অভিজ্ঞতা রাইজিংবিডি ডটকমের কাছে তুলে ধরেছেন। 

আদনান শাকুর (সান)

বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বলেছিলেন, ‘ভ্রমণ প্রথমে তোমাকে নির্বাক করে দেবে, তারপর তোমাকে গল্প বলতে বাধ্য করবে।’ গত ২৬ আগস্ট ‘চীনা-বাংলাদেশ ইয়ুথ ক্যাম্প-২০১৯’-এ যোগ দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চাইনিজ ক্লাসরুমের একজন মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে যখন কুনমিং পৌঁছাই, তখন সত্যিই নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম বসন্ত নগরী কুনমিংয়ের ঐশ্বরিক সৌন্দর্যে। 

অন্যদিকে পুরো ইয়ুথ ক্যাম্পের গল্প তো বলে শেষ করা কঠিন। জীবনের সেরা দুই সপ্তাহ কাটিয়েছি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বন্ধুদের সঙ্গে এই ইয়ুথ ক্যাম্পে। প্রতিদিন ভোরবেলা একসঙ্গে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে বুফেতে বিভিন্ন রকম খাবারের স্বাদ নেওয়া, ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করা, সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়া এমনকি রাতের আড্ডা, প্রতিটা মুহূর্তেই ছিল একজন আরেকজনের প্রতিভাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার এক মধুর লড়াই। একজন আরেকজনের কাছে থেকে নতুন কিছু শেখার সঙ্গে সঙ্গেই যেন নতুন বন্ধুত্বের বন্ধনে আটকা পড়তাম রোজ।

চাইনিজ ভাষা, কুংফু, টি-কালচার, টাইডাই ইত্যাদি শেখার সঙ্গে সঙ্গে চায়না ভ্রমণটাও ছিল স্মৃতির ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখার মতো। আজও চোখ বন্ধ করলে সামনে ভেসে ওঠে স্টোন ফরেস্টের বিস্ময়তা, এরহাই ক্রুজ ভ্রমণের স্নিগ্ধতা আর প্রাচীণ শহর ডালির প্রাচীনতার স্বাদ।

ইয়ুথ ক্যাম্প মানেই তরুণদের প্রতিভার উচ্ছ্বাস আর নতুন বন্ধনে নিজেকে আবদ্ধ করা। ইউনানের ভলান্টিয়ার টিমের লি-হান্টিং, সুয়ে ফানদের সঙ্গে বন্ধুত্বের খুনসুটি কিংবা শিক্ষক লিলি লাউশীর প্রাণবন্ত ক্লাস, চী লাউশীর মজার শাসন, লেই লাউসির সঙ্গে চপস্টিক দিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার স্মৃতিগুলো অশ্রু হয়ে ঝরে পড়েছিল ক্যাম্প শেষে বিদায়বেলায়।

করোনার ভয়াল থাবায় এবারের ইয়ুথ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত না হলেও পরবতর্তী সময়ে চীনে যেকোনো ইয়ুথ ক্যাম্পের সুযোগ থেকেই যাচ্ছে তরুণদের জন্য। এ ধরনের ক্যাম্পে প্রতিনিধিত্ব করতে দরকার চায়না ভাষা শিক্ষা ও অ্যাকাডেমিক-সাংস্কৃতিক দিকে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। হয়তো কোনো দিন এই স্বপ্নটা তোমারও হাতে এসে ধরা দেবে। আবার ইউনান ক্যাম্পাস মুখরিত হবে একঝাঁক বাঙালি তরুণ -তরুণীর উচ্ছ্বাসে।

জান্নাতুল তাজরি (রিতু)

২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর চীনে অনুষ্ঠিত হয় চীন-বাংলাদেশ যুব ক্যাম্প। গত আসরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট, শান্ত-মারিয়াম কনফুসিয়াস ক্লাসরুমসহ মোট ৪টি দলের ১৪৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইনিজ ক্লাসরুমের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমি অংশগ্রহণ করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিমে। দুই সপ্তাহের এই ক্যাম্পে শুরু থেকে শেষ সবটুকু সময় স্বপ্নের মতো কেটে গেছে মনে হয়। পুরো ক্যাম্প থেকে হাজারো স্মৃতি আর নতুন সব অভিজ্ঞতা জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবে। 

বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন বয়সের সদস্যদের সান্নিধ্যে তাদের হাজারো প্রতিভায় মুগ্ধ হয়েছি। মুগ্ধ হয়েছি স্টোন ফরেস্ট, প্রাচীন শহর টালীর প্রকৃতিক সৌন্দর্যে। কুনমিংয়ের ন্যাশনাল অ্যাডভার্টাইজ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক পরিদর্শনে আমরা চীনের প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছুটা জানতে পেরেছি। ৭টার মধ্যে সকালের খাবার আর চীনা নিয়ম অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে রাতের খাবারের যে অভ্যাসটা ক্যাম্পে গড়ে উঠেছিল, তা দেশে ফেরার পরও বদলানো যায়নি অনেক দিন পর্যন্ত। 

ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী হান্টিং, সুয়েফাং, মেইমেইসহ আরো যারা ছিল সবার ভালোবাসায় শিক্ত হয়েছি আমরা সবাই। লিলি লাওসির মতো একজন বন্ধুর মতো শিক্ষক পেয়েছি। মনে পড়ে রিহার্সালের সময় পায়ে মোচড় লাগায় শি-লাওসি এত যত্ন করলেন যে, একবারও মনে হয়নি একটা ভীন দেশের সদ্য পরিচিত একজন কেউ তিনি। ক্যাম্পের সবার চেয়ে আমার একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা। কারণ কিছুটা সময় তাদের মেডিক্যালে থাকতে হয়েছিল আমাকে পায়ের জন্য। তাদের সুবিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল, তাতে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা অবাক করেছে। মুগ্ধ কিন্তু তারাও কম হয়নি আমাদের পেয়ে। 

আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের হাসি-গল্প তাদের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। বাঙালি সংস্কৃতির টিপ, রেশমি চুড়ি মুগ্ধ করেছিল তাদের, আমরাও তাদের ভালোবাসার উপহারস্বরূপ দিয়ে এসেছি সেই টিপ, চুড়ি। বিনিময়ে পেয়েছি তাদের হাতে লেখা কার্ড আর তাদের দেওয়া অমূল্য উপহার। করোনার কালো অধ্যায় পেরিয়ে গেলে আবার হয়তো কোনো এক নতুন তরুণ দল সুযোগ পাবে এই অমূল্য অভিজ্ঞতা অর্জনের। তাদের জন্য অনেক শুভকামনা।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়