ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

লন্ডনে আমার যে মুহূর্তটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে- (পর্ব-৬)

রিয়াদ আরেফিন রিমন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ১৪ জানুয়ারি ২০২১  
লন্ডনে আমার যে মুহূর্তটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে- (পর্ব-৬)

লন্ডনে ক্লাসে শিক্ষকরা যখন লেকচার দেয়, সেই মুহূর্তেই প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী ল্যাপটপে লেকচারটি লিখে ফেলেন। প্রত্যেকের টাইপিং স্পিড খুবই ভালো হওয়ায় তারা হুবহু কপি করে ফেলেন। লেকচারের সময় কি-বোর্ডের ঠকঠক শব্দ শোনা যেত সবসময়। কিন্ত শুধু আমি কিছু লিখতে পারতাম না। 

লেকচারের সময় আমি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কারণ, প্রথম দিকে আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারতাম না যে, আমি কী লিখবো। এই বিষয়টা ক্লাসের অন্য শিক্ষার্থীরা খেয়াল করেন এবং তারা ধারণা করে নেন যে, আমি খারাপ ছাত্র, ক্লাসে যা শেখানো হয়, আমি হয়তো তা কিছুই বুঝি না। এখন অনেকের ধারণা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমি এই ব্যাপারগুলো আগে জানতাম না, কিন্তু এখন আমরা ক্যাফেতে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় সবাই এইগুলো নিয়ে হাসাহাসি করেন। তাই এখন আমি ব্যাপারটা জানতে পেরেছি।

আমি যখন ভর্তি হই, তখন আমাদের ক্লাসের তিন সপ্তাহ ইতোমধ্যে চলে গেছে। এর মধ্যেই চলে আসলো দলীয় উপস্থাপনার সময়। আমি খুব বেশি নারভাস ছিলাম, ভাবছিলাম কোনো দলে হয়তো আমাকে নেওয়া হবে না। অবশেষে আমাকে একটি দলে নেওয়া হয়, যেই দলে পাঁচজনই ছিল ভিন্ন দেশের। কিন্তু আমার দলের শিক্ষার্থীরা মনমানসিকতার দিক থেকে অন্যরকম ছিল। তাই তাদের সঙ্গে আমার কোনো প্রকার সমস্যা হয়নি।

আমাদের দলীয় সদস্যদের বাকিদের মতো বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করার সময় ছিল না। কারণ, পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই ছিল বিবাহিত। ভাগ্যক্রমে যেই বিষয়টি নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে দেওয়া হয়, সেই বিষয়টি নিয়ে আমার মোটামুটি ধারণা ছিল। তাই আমি প্রত্যেকের জন্য দুই পৃষ্ঠার সিটে একটি নোট করে আনি, তারা দেখে খুব বেশি খুশি হয়ে যায়। অনেক মেধাবী হওয়ার কারণে তারা খুব দ্রুত নোটটি মুখস্ত করে ফেলে ও আমি যেভাবে বিষয়টি বোঝাই, তারা সেটা খুব দ্রুতই বুঝে ফেলে।

এইবার আসলো প্রতিযোগিতার দিন। সবাই খুব সুন্দরভাবে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টরের মাধ্যমে দলীয় উপস্থাপনা করে ফেললো। সর্বশেষ দলটি ছিল আমাদের। আমরাও একটি আইনী বিষয়ের উপর উপস্থাপনা করলাম ও একটি ব্রিফ দিলাম। এরপর আমাদের অনেক জটিল কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো। আমরা সবাই প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ ভাষাতেই দিলাম। 

এইবার প্রতিযোগিতার ফল প্রকাশের পালা, বুঝতে পারছিলাম না যে কী হবে সেই মুহূর্তে। কিন্তু আনন্দের বিষয় হচ্ছে সাধারণ বক্তব্যের কারণে আমরা প্রথম স্থান অর্জন করতে পেরেছিলাম। সেই মুহূর্তে খুব অবাক হয়ে যায় সবাই এবং আমার উপর খুব ইম্প্রেসও হয়ে যায়। সেই সময়টি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি অবিস্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে।

লেখক: ব্যারিস্টার এট ল, নর্থাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, লন্ডন।

ঢাকা/সাফায়েত/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়