ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যেভাবে পুরান ঢাকা মাতে সাকরাইন উৎসবে

মারিয়া অনি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৬, ১৬ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৩:০৮, ১৬ জানুয়ারি ২০২১
যেভাবে পুরান ঢাকা মাতে সাকরাইন উৎসবে

পালা পার্বণের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এই দেশে বারো মাসে তোরো পার্বণের রীতি প্রচলিত আছে। তেমনি একটি পার্বণ পৌষ সংক্রান্তি। মূলত পৌষ সংক্রান্তি ঘুড়ি উৎসব নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে শীত মৌসুমে বাৎসরিক উদযাপন ঘুড়ি উড়িয়ে পালন করা হয়। 

সংস্কৃত শব্দ সংক্রান্তি ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইনে রূপ নিয়েছে। পৌষ মাসের সন্ধিক্ষণে ভারতবর্ষব্যাপী এই উৎসব পালিত হওয়ার রীতি ছিল। তবে তা পুরান ঢাকার সার্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবে রূপ নিয়েছে। বর্তমানে সারাদিন ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় রঙ-বেরঙয়ের ফানুস আর আতশবাজিতে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী আকাশ। এক কথায় সাকরাইন হলো এক প্রকার ঘুড়ি উৎসব। বাংলা ক্যালেন্ডারের নবম মাস পৌষের শেষ দিন এটি। যা গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার মোতাবেক জানুয়ারি মাসের ১৪/১৫ তারিখে পড়ে। বাংলায় দিনটি পৌষ সংক্রান্তি আর ভারতীয় উপমহাদেশে মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত। 

বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী পৌষ মাসের শেষ দিন পুরান ঢাকার বাসিন্দারা এই উপলক্ষে পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করে। উৎসবটি তাদের কাছে সাকরাইন উৎসব নামে পরিচিত।

ভোরবেলা কুয়াশার আবছায়াতেই ছাদে ছাদে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। ছোট বড় সবারই অংশগ্রহণে মুখরিত থাকে প্রতিটি ছাদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে উৎসবের জৌলুস। আর শীতের বিকেলে ঘুড়ির কাটা-কাটি খেলায় উত্তাপ ছড়াই সাকরাইন উৎসব। এক দশক আগেও ছাদে ছাদে থাকতো মাইকের আধিপত্য। আজ মাইকের স্থান দখল করেছে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। উৎসবের আমেজ থাকবে পুরান ঢাকার সর্বত্র। আকাশে উড়বে ঘুড়ি আর বাতাসে দোলা জাগাবে গান। মাঝে মাঝে ঘুড়ি কেটে গেলে পরাজিত ঘুড়ির উদ্দেশে ধ্বনিত হবে ভাকাট্টা লোট শব্দ যুগল।

প্রতি বছরের মতো এ বছরও বাংলাদেশে পৌষ মাসের শেষে ঘুড়ি আর জমকালো আতশবাজির মাধ্যমে পালন করা হয় পৌষ সংক্রান্তি বা সাকরাইন উৎসব। সাকরাইন শুধু ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব নয়। পুরান ঢাকায় ঘরে ঘরে চলবে মুড়ির মোয়া, ভেজা বাখরখানি আর পিঠা বানানোর ধুম। যারা সাকরাইনে ভেজা বাখরখানি খেতে আগ্রহী, তারা চলে যাবেন গেন্ডারিয়ায়। 

এ দিন পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ, মুরগীটোলা, কাগজিটোলা, গেন্ডারিয়া, বাংলাবাজার, ধূপখোলা মাঠ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সদরঘাট, কোট-কাচারি এলাকার মানুষ দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ায়, খাবারের আয়োজন করে, সন্ধ্যায় আগুন নিয়ে খেলে আর ফায়ারওয়ার্ক্স তো থাকেই। সন্ধ্যা থেকে ফায়ারওয়ার্ক্সের লাল নীল আলোয় আলোকিত হয়ে যায় পুরান ঢাকা।

যেন এক নতুন রূপে সেজে ওঠে ঐতিহ্যে ভরপুর পুরান ঢাকা। ঐতিহ্য রক্ষায় ও সংরক্ষণে সাকরাইন একটি মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা উপেক্ষা করে সবাই মেতে উঠে সাকরাইনে, যা আমাদের জন্য আশার কথা। বাংলাদেশের প্রাচীন উৎসবগুলোর মধ্যে পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসব অন্যতম। যদিও এখন এটি দেশব্যাপী পালিত হয় না। কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি সংস্কৃতি এটি। আমাদের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে সাকরাইন বেশ সহায়ক হতে পারে। এটি ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক। 

লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়