ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

একটি ফুলেল বিকেল

মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া   || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৯, ১৮ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৬:২২, ১৮ জানুয়ারি ২০২১
একটি ফুলেল বিকেল

আমরা দুজন মোহাম্মাদপুর বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ দেখি সাদা একটি গাড়ি আমাদের পাশে এসে থামলো। ভাবলাম রাস্তার হয়তো কেউ, কিন্তু গাড়িটি থামিয়ে একজন নিচে নামলো। দেখলাম তিনি আমাদের পূর্ব পরিচিত, আমাদের ডাকছেন। বললাম, ভাই কেমন আছেন? তিনি হাসি মুখে বললেন ভালো আছি।

চলো গাড়ির দিকে, এগিয়ে গেলাম। দেখি গাড়িতে যারা আছেন, সবাই আমাদের পূর্ব পরিচিত। জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় যাচ্ছেন আপনারা। তারা বললেন, চলো ঘুরে আসি ঢাকার পাশেই। ভাবলাম আজকে আমাদের যে কাজ ছিল, সেটা তো শেষ করেছি। প্রতিদিনের কাজের মধ্যে যা হয় আর কি, মিটিং সেমিনার সব শেষ। আজ শুক্রবার, সন্ধ্যা হবে ক্ষাণিকক্ষণ বাকি, চিন্তা করলাম সময় আছে যেহেতু ঘুরেই আসি।

চড়ে বসলাম। গাড়ি যাচ্ছে শো শো করে গ্রামের মধ্য দিয়ে। জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাচ্ছি? তারা শুধু হাসছেন। গাড়ি শুধু চলছে আর পেছনে গ্রামগুলো রয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে গ্রামগুলো আমাদের পেছনের দিকে দৌড়াচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে থামলো, একটি ডেভেলপার কোম্পানির প্রজেক্টের সামনে। গাড়ি থেকে নামতেই চোখে পড়ল বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘ঢাকা মডার্ন সিটি’। ভেতরে ঢুকতেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম চারপাশের সবুজে ঘেরা প্রকৃতি দেখে। শুধু ফুলগাছ আর ফুলগাছ। মনে হচ্ছে ফুলগুলো আমাদের অভিবাদন জানাচ্ছে। যেদিকে তাকাই না কেন, ফসল আর শাকসবজির মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে প্রকৃতিতে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম প্রায়।

মোহাম্মদপুর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরত্ব। বছিলা সেতুর উপর দিয়ে কলাতিয়ার প্রধান পাকা সড়ক। পাশেই রয়েছে মাওয়া সেতু থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত প্রস্তাবিত ১৭০ ফিট ওয়েস্টার্ন বাইপাস বা ফোর লেনের রাস্তা। ঢাকা থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরত্বে মনোরম পরিবেশে সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক জমিতে চোখ স্থির হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এ যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত নিরাপদ ও নিরিবিলি পরিবেশের বাসস্থান, যা মানুষের যুগ-যুগান্তরের চাওয়া।

সবুজ শ্যামলে ঘেরা দেশের স্বপ্নের রাজধানী ঢাকা। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যানজট ও শব্দদূষণমুক্ত পরিবেশে শান্তির নীড় খুঁজে পেতেই যেন মানুষের ছুটেচলা। কিছুক্ষণের জন্য কর্মব্যস্ততার ক্লান্তি কেটে গেলো। নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মনে হয়েছিল এটাই হতে পারে মানুষের স্বপ্নের আবাসস্থল। যা পরিকল্পিত ও পরিচ্ছন্নতায় পরিপূর্ণ এক সিটি।  

কিছুক্ষণ পরেই মডার্ন সিটির প্রকল্পের হস্তান্তরকৃত নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের প্লটে ঘুরতে গেলাম। সেখানে বসবাসরত একদল মেয়ের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলতে খেলতে ছোটবেলার স্মৃতিতে ফিরে গেলাম। সোদা মাটির গন্ধ আর ফুরফুরে বাতাসে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়ালাম। দেখলাম প্রকল্পের ভেতরেই রয়েছে তাদের নিজস্ব জমিতে লাগানো লাউ গাছ, শাক-সবজির ক্ষেত, গরুর খামার। এ যেন একের ভেতর সব। এছাড়াও প্রকল্পের সঙ্গেই আছে দর্শনার্থীর জন্য ‘শ্যামল বাংলা রিসোর্ট অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার’।

দূর আকাশে বিকেলের সূর্য ডুবু ডুবু করছে। গোধূলির আবিরে রাঙা লাল সূর্য সন্ধ্যা নামার পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছে। সূর্যের রক্তিম আলোর ছটায় প্রকৃতি যেন মডার্ন সিটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে দিগুণ। সন্ধ্যার মনোমুগ্ধকর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে রবীন্দ্রনাথের কবিতার কিছু লাইন মনে পড়ে গেলো-

‘‘সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি বাঁকা
আঁধারে মলিন হল--যেন খাপে-ঢাকা
বাঁকা তলোয়ার;
দিনের ভাঁটার শেষে রাত্রির জোয়ার
এল তার ভেসে-আসা তারাফুল নিয়ে কালো জলে;’’

ঘোরাঘুরি আর দুরন্তপনা শেষে এবার খাবারের পালা। এসময় আরো অবাক হলাম তাদের খাবারের মেনু দেখে। তাদের নিজস্ব জমির লাউ, খামারের পালনকৃত মুরগির মাংস, ডাল ও গরুর মাংস। ঠিক যেন আমাদের গ্রামের বাড়ির উঠানে চাষ করা খাবারের স্বাদ।

ভরপেট খাবারের পর কথা হলো সিটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। জানলাম প্রজেক্টের আদ্যপান্ত। ঢাকা মডার্ন সিটির পরিচালক ইদ্রিস মান্না বলেন, ‘সিটির আবাসন প্রকল্পের মধ্যে বিভিন্ন ভাগ রয়েছে। যেমন স্বজন আবাসন প্রকল্পে ৪-৫ জন আত্মীয় বা বন্ধু মিলে ৩\৫ কাঠার প্লট কেনার সুজোগ। আছে শিক্ষার্থীদের জন্য প্লট কেনার ব্যবস্থা। তারা পড়ালেখা অবস্থায় কয়েকজন মিলে অল্প মূল্যের প্লট ক্রয় করতে পারেন’।

শিক্ষার্থীদের জন্য এমন সুব্যবস্থার কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। মনে মনে স্বপ্ন বুনতে লাগলাম, মাকে বললাম কিছু একটা করা যায় কিনা। এভাবেই বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বপ্নের মতো কিছু সময় কাটাতে কাটাতে ফেরার প্রহর চলে এলো। ঘন-কালো সন্ধ্যা। গাড়িতে করে গন্তব্য ঢাকার মোহাম্মদপুরের দিকে। বিকেলের মুহূর্তের ঘোর কাটতে না কাটতেই ৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাসায় ফিরলাম।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়