ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শহীদ আসাদ স্মরণে

রিদুয়ান ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৬, ২০ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৩:২৯, ২০ জানুয়ারি ২০২১
শহীদ আসাদ স্মরণে

আজ ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদ দিবস। ঊনসত্তরের এই দিনে নরসিংদীর এক তরুণ লাফিয়ে উঠেছিল মিছিলের নেশায়। মা মতিজান খাদিজা অন্য সব মায়েদের মতোই বাঁধা দিয়েছিলেন নিজের ছেলেকে। মায়ের বাঁধাকে অগ্রাহ্য করে তিনি বেরিয়ে যান অনিরুদ্ধ অভিলাষ কাঁধে নিয়ে। তার কয়েক ঘণ্টা পরই মায়ের কোলে ফিয়ে আসেন লাশ হয়ে। 

হ্যাঁ, বলছিলাম গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম স্থপতি শহীদ আসাদের কথা। ১৯৬৯ সালের এই দিনে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ূব খান সরকারের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচির নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশি গুলিতে শহীদ হন আসাদুজ্জামান। 

আসাদ শহীদ হওয়ার পর তিন দিনের শোক পালন শেষে একই বছরের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ৬ দফা ও ছাত্রদের ১১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে সর্বস্তরের জনগণের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার নেমেছিল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রাজপথে। 

সংগঠিত হয় ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান। পতন ঘটে আইয়ূব খানের৷ তারপর আরেক স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় বসে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। সত্তর সালের সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা পায়। কিন্তু ক্ষমতাসীন ইয়াহিয়া খান পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। ক্ষমতা ছাড়তে শুরু করে দেয় নানা ধরনের টালবাহানা। তারই ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছিল একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধ। 

পূর্ব ঘোষিত কর্মপ্রণালী প্রণয়ন করার জন্য ১৯৬৯ সালে ২০ জানুয়ারি দুপুরের দিকে তার সহযোগী ও ছাত্রদের নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পার্শ্বে চাঁন খার পুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান। কিন্তু পুলিশ তাদের চাঁন খা ব্রিজের উপর বাঁধা দেয় এবং চলে যাওয়ার জন্য বলে৷ 

কিন্তু বিক্ষোভকারী ছাত্রজনতা সেখানে একঘণ্টা অবস্থান করে এবং স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে৷ ঠিক তখনই এক পুলিশ আসাদকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে এবং আসাদ আহত হন। পরে তাকে মেডিক্যাল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন৷ 

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্রজনতা বন্যার স্রোতের মতো ছুটে আসতে থাকে মেডিক্যাল কলেজের দিকে। শহীদ হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পর বেলা আড়াইটার দিকে আরম্ভ হয় আসাদের শোক সভা।

শহীদ আসাদের স্মৃতি বিজড়িত রাখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় স্থাপত্য রয়েছে। ঢাকায় আসাদ গেট, হাতিরদিয়া বাজারে শহীদ মিনার, নিজ উপজেলায় তার নামে একটি সরকারি কলেজ ইত্যাদি। 

জানা যায়, রাজপথে আসাদের রক্তাক্ত শার্ট নিয়ে জনতার তাৎক্ষণিক মিছিল দেখে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবি শামসুর রাহমান অনুভূতির প্রাবল্যে তার অমর কবিতা ‘আসাদের শার্ট’ লিখেন। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্যতম কবি হেলাল হাফিজ তার কালজয়ী ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি লিখেন৷ 

২০১৮ সালে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য শহীদ আসাদকে মরণোত্তর সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।

শহীদ আসাদের প্রতি বাঙালি জাতি চির ঋণী। এই শহীদের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। তিনি প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে থাকবেন সবসময়। শহীদ আসাদকে নিয়ে যতটা আলোচনা হওয়া দরকার, তা না হলেও অন্তত তাঁর শাহাদাতবার্ষিকীতে আমরা প্রতিবছর তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবো, এটাই প্রত্যাশা।
 
লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। 

জবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়