ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

লন্ডনে হাস্যরসে ভিক্ষাবৃত্তি (পর্ব-৭)

রিয়াদ আরেফিন রিমন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ২০ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৮:০৯, ২০ জানুয়ারি ২০২১
লন্ডনে হাস্যরসে ভিক্ষাবৃত্তি (পর্ব-৭)

লন্ডনে আসার পর এখানকার মানুষের আচার-আচারণ ও ভদ্রতা দেখে আমি খুবই মুগ্ধ হয়েছি। এই দেশে জেব্রা ক্রসিং ও সঠিক সিগনাল ব্যতিত রাস্তা পারাপার হওয়া যায় না। কিন্তু আমি একজন টিপিক্যাল দেশের সন্তান হওয়ায় এর কিছুই অনুসরণ করি না।

বাংলাদেশে যেভাবে রাস্তার দুইদিক তাঁকিয়ে মাজখান দিয়ে দৌড় দিতাম, এখানেও আমি সেই একই কাজ করি। এখানকার যানবাহন চালকরা খুব বেশি সচেতন। তারা দূর থেকে কাউকে পার হতে দেখলেই গাড়ির গতি কমিয়ে দেয়। 

আমি প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় খুব সুন্দরভাবে ট্রাফিক আইন অমান্য করে রাস্তা পারাপার হই ও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। তখন বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আমাকে রাস্তার পাশে দেখে গতি কমিয়ে দাঁড়িয়ে যায় ও চালকরা হাত দিয়ে ইশারা করে বলতে থাকেন ‘পার হও, পার হও’। তারা পথচারীকে অগ্রাধিকার বেশি দিয়ে থাকেন, যা দেখে আমি খুবই মুগ্ধ হই।

এখানকার শিক্ষকরা ক্লাসে সাধারণত ১ মিনিট ও বিলম্ব করেন না। কিন্তু কখনো কোনো কারণে যদি আসতে না পারেন, তাহলে পরের দিন ক্লাসে এসে ক্ষমা চান। এই ব্যাপারটা আমি প্রথম প্রথম দেখে অবাক হই কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম যে, এটা হচ্ছে সেখানকার ভদ্রতা।

আমি সবসময়ই অলস প্রকৃতির একজন মানুষ। যখন সুপারশপগুলোতে যাই, সেখানে আমার খুঁজে খুঁজে জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে ভালো লাগতো না। ব্রিটিশদের শপে গেলে, তাদের কাছে কোনো পণ্য চাইলে তারা সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে সেইটা বের করে দেন কিন্তু এশিয়ানদের সুপারশপে গেলে তারা হাত দিয়ে ইশারা করে এমন স্থানে দেখান, যেটা সেই স্থানে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। 

সেখানকার ভিক্ষুকরা খুব সাজসজ্জা নিয়ে বের হন। মানুষকে বিনোদন দেওয়ার মাধ্যমে তারা ভিক্ষা করে থাকেন। এই ব্যাপারগুলো খুবই মজা লাগে। কেউ কেউ সুপারহিরো ক্যারেক্টার সেজে থাকেন, আবার কেউ কমেডি ক্যারেক্টার, কেউবা গান গেয়ে নেচে ভিক্ষা করেন। তাদের সঙ্গে সময় কাটালে বিনোদনের শেষ থাকে না। কিন্তু প্রত্যেকের মনের মধ্যে কিছু কষ্ট, দুঃখ, বেদনা ইত্যাদি আছে, যা তাদের সঙ্গে সময় না দিলে বোঝা যায় না। প্রত্যেকের হাঁসির মাঝেই কান্না আছে, যা তারা বুঝতে দেয় না।

সেখানকার বাঙালিরা যখন কোনো ব্রিটিশদের সঙ্গে কথা বলেন, যাই বলুক না কেন তাদের ‘স্যার স্যার’ বলতে বলতে মুখ ব্যথা করে ফেলেন। আবার যখন দূরে চলে আসেন, তখন আবার ভাব নিয়ে বলেন যে ‘না কিছুই না, এমনি কথা বলছিলাম আর কি’। এই ব্যাপারগুলো খুবই আনন্দদায়ক। 

লেখক: ব্যারিস্টার এট ল, নর্থাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, লন্ডন।

ঢাকা/সাফায়েত/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়